টুনটুনির বই

বাংলা ভাষায় যাঁদের হাতে শিশুসাহিত্যের সূচনা ঘটেছিল, উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী তাঁদের অন্যতম। তাঁকে শিশুসাহিত্যের পথিকৃত্ বললেও খুব বেশি বলা হয় না। তিনি একাধারে ছিলেন সংগীতশিল্পী, চিত্রশিল্পী, লেখক, সম্পাদক। সেই সময়ের ছোটদের বিখ্যাত পত্রিকা সন্দেশ সম্পাদনা করতেন তিনি। সন্দেশ পত্রিকা ছাড়াও তিনি ছোটদের জন্য লিখেছেন বেশ কিছু গল্প। সেসব গল্পের অনেকগুলোই তিনি তুলে এনেছেন যুগ যুগ ধরে গ্রাম-বাংলায় প্রচলিত লোককাহিনি থেকে। সাধারণ মানুষের জীবন থেকে উঠে আসা এসব লোককাহিনি আমাদের সংস্কৃতির অমূল্য সম্পদ। এসব গল্পকেই উপেন্দ্রকিশোর ছোটদের উপযোগী করে সহজ-সরল ভাষায় পরিবেশন করেছেন তাঁর টুনটুনির গল্প বইটিতে।

টুনটুনির গল্প প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯১০ সালে। মাঝখানে কেটে যায় ১০০ বছরের বেশি সময়। কিন্তু সত্যি বলতে কি, এই বইয়ের গল্পগুলোর আবেদন এখনো ফুরিয়ে যায়নি। কারণ, একালের লেখকদের মতো আধুনিক ও নির্মেদ ভাষায় তিনি বর্ণনা করেছেন গল্পগুলো। বইটিতে মোট ২৭টি গল্প স্থান পেয়েছে। এসব গল্পের কয়েকটি হচ্ছে ‘টুনটুনি ও নাপিতের কথা’, ‘টুনটুনি ও বিড়ালের কথা’, ‘টুনটুনি ও রাজার কথা’, ‘শিয়াল পণ্ডিত’, ‘পান্তাবুড়ির কথা’, ‘বোকা জোলা আর শিয়ালের কথা’ উল্লেখযোগ্য। প্রতিটি গল্পই তোমাদের ভালো লাগবে—এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

‘টুনটুনি আর রাজার গল্প’-এর কথাই ধরা যাক। টুনটুনি একদিন একটি সোনার টাকা কুড়িয়ে পায়। টাকাটা সে বাসায় যত্ন করে রেখে দেয়। তার পর থেকে ‘রাজার ঘরে যে ধন আছে/ টুনির ঘরেও সে ধন আছে’—এ কথা শুনে রাজামশাই টুনটুনির কাছ থেকে টাকাটা কেড়ে নিয়ে আসেন। মনের দুঃখে টুনটুনি গাইতে থাকে, ‘রাজা বড় ধনে কাতর/ টুনির ধন নিলে বাড়ির ভিতর।’ এবার রাজামশাই টুনির টাকাটা ফেরত দিলেন। কিন্তু টুনি আবার নতুন গান ধরল, ‘রাজা ভারি ভয় পেল/ টুনির টাকা ফিরিয়ে দিল।’ রাজামশাই এ কথা শুনে রেখে গেলেন ভীষণ। তিনি লোক পাঠিয়ে টুনিকে ধরে খেতে চাইলেন। কিন্তু ঘটনাক্রমে তিনি টুনির বদলে খেলেন ব্যাঙভাজা। শুধু কি তা-ই, টুনিকে শায়েস্তা করতে গিয়ে টুনির কিছুই করতে পারলেন না; বরং তিনি নিজেরই নাক কাটলেন, হারালেন অনেক কিছু। সেই ঘটনা মজা করে পরিবেশন করেছেন উপেন্দ্রকিশোর।

বইটি বাংলাদেশ থেকে নতুন করে প্রকাশ করেছে বেশ কয়েকটি প্রকাশনী। এর মধ্যে ২০০১ সালে বইটি প্রকাশ করেছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, যার প্রচ্ছদ এঁকেছেন ধ্রুব এষ। কিন্তু বইয়ের ভেতরের অলংকরণে মূল বইয়ের উপেন্দ্রকিশোরের আঁকা আসল ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। বইটি এক্ষুনি সংগ্রহ করে পড়ে দেখতে পারো।