‘কে মেরেছে, কে বকেছে, কে দিয়েছে গাল, তাই তো খোকা রাগ করেছে...’ আচ্ছা রাগ হলে তুমি কী করো? কিংবা অনেক মন খারাপ হলে? আবেগ-অনুভূতি তোমার ঠিক কতটা নিয়ন্ত্রণে, সেটাই জানতে চাইছিলাম। উত্তরটা যদি জানা না থাকে তাহলে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও আর নম্বর মিলিয়ে জেনে নাও। আর যদি জানাও থাকে, তবে আরেকবার মিলিয়ে নিতে দোষ কী? দেখা যাক, তুমি কতটা আবেগপ্রবণ!
১. একটা অ্যাসাইনমেন্ট বা বাড়ির কাজ জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল গতকাল। তুমি না একদমই ভুলে গেছ। এদিকে তোমার শিক্ষক ক্লাসে সবার সামনে তোমাকে ভালো-মন্দ দুকথা শুনিয়ে দিলেন। এমন অবস্থায় তুমি কী করো?
ক. ভাবতেই আমার কান্না পাচ্ছে...আচ্ছা, মানুষেরই তো ভুল হয়। সবার সামনে এভাবে বলার কী মানে? মন খারাপ হবে না?
খ. মন খারাপ হবে নিশ্চিত, কিন্তু সেটা তো আর অন্যদের সামনে প্রকাশ করা যায় না। শিক্ষককে সরি বলব।
গ. প্রথমে একটু মন খারাপ করব। পরে ক্লাস শেষে বন্ধুর সঙ্গে সেটা নিয়ে আলোচনা করব। শিক্ষক যে সবার সামনে বলে মোটেও ভালো কাজ করেননি, সেটা নিয়েও মতামত দেব।
২. খুব সুন্দর একটা বই পড়ে শেষ করলে। কিংবা ধরো কোনো চলচ্চিত্র। গল্পটা হৃদয় স্পর্শ করল তোমার। কিন্তু গল্পে তোমার প্রিয় চরিত্রের মৃত্যুর বর্ণনাটা পড়তে গিয়ে তোমার অনুভূতি যা হয়...
ক. এ রকম অনেকবার হয়েছে। কিন্তু আমার তেমন কোনো অনুভূতি হয় না। কারণ আমি জানি, ওটা শুধু একটা গল্প।
খ. খুব কি দরকার ছিল আমার প্রিয় চরিত্রকে মেরে ফেলার? পৃথিবীটা অনেক নিষ্ঠুর সেটা বুঝতে আর বাকি নেই আমার।
গ. কষ্ট পাব। কিন্তু সেটা নিয়ে মন খারাপ করে বসে থাকব না।
৩. কারও সঙ্গে কথা বলছ। ধরো, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। অনেকক্ষণ হয়ে গেছে সে আর জবাব দিচ্ছে না তোমাকে। অথচ ঠিকই অনলাইনে রয়েছে সে। এমন অবস্থায় তুমি যা করো—
ক. যদি খুব গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় নিয়ে আলাপ হয়, তাহলে আরেকবার লিখে পাঠাব ব্যস্ত কি না, কিংবা পরে কথা বলবে কি না। নতুবা এটা নিয়ে ভাবব না।
খ. উত্তর দিলে দেবে। না দিলে নেই। আমার তো ভাই ঠ্যাকা নেই কথা বলার!
গ. আমাকে উত্তর দিচ্ছে না? তা দেবে কেন? আমি তো কোনো গুরুত্বপূর্ণ মানুষ না। হ্যাঁ, তাকে ঠিক এই কথাগুলো লিখে পাঠাব। আর নইলে অপেক্ষা করব কখন উত্তর দেয়, তখন ঠিকই এই উত্তরগুলো দেব।
৪. আচ্ছা, কখনো কারণ ছাড়া কান্না পায় তোমার?
ক. শোনেন, আমার না অহেতুক কান্না করার মতো এত সময় নেই। অনেক কাজ আছে করার, কান্নাকাটি করে সময় নষ্ট করার কোনো মানে হয় না।
খ. কখনো? এটা তো প্রতিদিনের কথা! আমার কারণ ছাড়া সব সময়ই কান্না পায়।
গ. একেবারেই পায় না, তা না। তবে খুব কম আর কী।
৫. তোমার প্রিয় মানুষের সঙ্গে ঝগড়া হলো তোমার। ভুলটা তোমারই, সেটা জানো তুমিও। এ ক্ষেত্রে তুমি কী করো?
ক. আমি মোটেও সরি বলতে পারব না আগে থেকে। অপেক্ষা করব কখন সে কথা বলতে আসে, কিন্তু নিজ থেকে ভুলেও কথা বলতে যাব না। ভুল–ঠিক বুঝি না বাপু।
খ. প্রথমে তার সঙ্গে কথা বলার জন্য অপেক্ষা করব। যদি দেখি সে কথা বলছে না, তাহলে নিজ থেকেই কথা বলব। সরি না বলে অন্য কোনোভাবে মিটমাট করে নেব।
গ. আমার ভুল হলে আমি সরি বলব, সেটাই তো স্বাভাবিক। ভুল বুঝতে পারার সঙ্গে সঙ্গে সরি বলব।
৬. খুব রাগ হলে যে কাজটা করো তুমি—
ক. লিখে ফেলি। কেন রাগ হচ্ছে, কী নিয়ে রাগ হচ্ছে কিংবা অন্য কোনো কাজে মনোযোগ দিই যেন রাগের কথাটা মাথা থেকে দূর হয়ে যায়।
খ. খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দিই। রাগ করে না খেয়ে থাকার বেশ কয়েক দিনের রেকর্ড আছে আমার।
গ. বন্ধুর সঙ্গে শেয়ার করি। তাতে যদি রাগটা কমে!
৭. ধরো, কারও সঙ্গে কোনো বিষয় নিয়ে তোমার ঝগড়া হচ্ছে। তর্কের একপর্যায়ে তোমার মাথা গরম হয়ে গেল। তুমি জানো তুমি ঠিক, কিন্তু তবুও তাকে তোমার যুক্তি বুঝিয়ে বলতে পারছ না। এমন অবস্থায়—
ক. আমি না তর্কের একপর্যায়ে সব সময় কেঁদে দিই। মাথা কাজ করে না একটা সময় পর।
খ. নিজের মাথা ঠান্ডা করি, তারপর সময় নিয়ে নিজের যুক্তি বোঝাই। যতক্ষণ সময়ই লাগুক না কেন, নিজের যুক্তি বোঝাবই।
গ. প্রথমে কিছুক্ষণ বোঝানোর চেষ্টা করি। তারপর হাল ছেড়ে দিই। সবার দ্বারা সবকিছু বোঝা সম্ভব না এই ভেবে।
৮. ধরো, তুমি কাঁদছ। এমন সময় কেউ তোমাকে সান্ত্বনা দিতে এল। এ রকম পরিস্থিতিতে তোমার প্রতিক্রিয়া যা হয়—
ক. শুনেই বিরক্ত লাগছে। আমাকে কেউ সান্ত্বনা দিতে এলে আমার খুবই বিরক্ত লাগে।
খ. সান্ত্বনা দিতে এলে ভালোই লাগবে। অল্প কিছুক্ষণ শুনে কান্না থামিয়ে নেব।
গ. কেউ সান্ত্বনা দিতে এলে আমার আরও কান্না পেয়ে যাবে।
৯. তোমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু বৃত্তি পেয়েছে। পড়াশোনা করতে বাইরে যাওয়ার বৃত্তি। খবরটা শুনে তুমি কী করবে?
ক. এ রকম একটা খুশির খবর! শুনেই চোখে পানি চলে আসবে। নিজে ছুটে গিয়ে দেখা করব।
খ. শুনে খুশি হব। কিন্তু আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে যাব না।
গ. প্রথমে ফোন বা টেক্সট করব। তারপর দেখা করতে চাইব। তাকে এটাও জানিয়ে দেব, তার প্রাপ্তিতে আমি অনেক খুশি।
১০. তোমার কাছে কেউ তার দুঃখের কোনো গল্প বা ঘটনা বলতে এল। বলতে বলতেই সে কাঁদতে শুরু করল। এ ক্ষেত্রে তুমি যা করো—
ক. তার দুঃখে দুঃখিত হব। কিন্তু তাকে সান্ত্বনা দেব যেন ভেঙে না পড়ে।
খ. তার কথা শুনব। তাকে বোঝাব। কিন্তু এটাও বলব, অন্য কারও কাছে দুঃখ শেয়ার করে কোনো লাভ নেই, যা করার নিজেকেই করতে হবে।
গ. তার কান্না দেখে নিজেরই কান্না চলে আসবে। আমার আবার অন্যকে কাঁদতে দেখলে নিজের কান্না পায়!
নম্বর
১. ক. ১০ খ. ০ গ. ৫
২. ক. ০ খ. ১০ গ. ৫
৩. ক. ৫ খ. ০ গ. ১০
৪. ক. ০ খ. ১০ গ. ৫
৫. ক. ১০ খ. ৫ গ. ০
৬. ক. ০ খ. ১০ গ. ৫
৭. ক. ১০ খ. ০ গ. ৫
৮. ক. ০ খ. ৫ গ. ১০
৯. ক. ১০ খ. ০ গ. ৫
১০. ক. ৫ খ. ০ গ. ১০
তুমি যেখানে দাঁড়িয়ে
০–৪০: কেউ কখনো তোমাকে কাঠখোট্টা বলেছে? তুমি বেশ ভালোই আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখো। আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে মাঝে মাঝে ভুলেও যাও যে অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া উচিত। তুমি খুবই বাস্তববাদী। তবে নিজেকে বেশি শক্ত রাখো, ফলে মাঝে মাঝে দুঃখবোধ অনুভব করো। তবে সেটা কারও কাছে প্রকাশ করো না। আরেকটু আবেগপ্রবণ হলে ক্ষতি নেই কিন্তু।
৪৫–৭০: তুমি খুব বুঝেশুনে চলো। তুমি আবেগপ্রবণ আবার বাস্তববাদীও। তুমি জানো কখন আবেগপ্রবণ হতে হয়, আবার কখন অন্যকে সাহায্য করতে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। তবে মাঝে মাঝে একটু খেই হারিয়ে ফেলো, খানিক পরেই সেটা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসো। রাগের মাথায় অল্পবিস্তর ভুল করো, কিন্তু ভুল শুধরে নেওয়ারও প্রবৃত্তি আছে।
৭৫–১০০: তোমাকে কিছু বলতেও ভয় হচ্ছে। এই না আবার কষ্ট পেয়ে বসো! তুমিই প্রকৃত আবেগপ্রবণ মানুষ। আবেগপ্রবণ হওয়া মোটেও খারাপ কিছু না। তোমার অন্যদের প্রতি সহমর্মিতা কাজ করে। সহজ কথায় বললে তুমি বেশ নরম প্রকৃতির মানুষ। কিন্তু কী বলো তো, সব সময় নিজের আবেগ প্রকাশ করতে নেই। তাতে তোমাকে অন্যরা দুর্বল ভাবতে পারে। তাই পরিস্থিতি অনুযায়ী বুঝতে শেখো কোন বিষয়গুলো কষ্ট পাওয়ার মতো, কোনগুলো নয়, আর কোন অবস্থায় কতুটুকু আবেগ প্রকাশ করা উচিত। কারণ অনেক সময় নিজের ধরে নেওয়া ব্যাপারগুলো থেকেই তুমি কষ্ট পাও। হয়তো আসলে কষ্ট পাওয়ার মতো কিছুই নেই সেখানে। কাজেই নিজের প্রতি ভালোবাসা থেকেই তোমার আবেগ আরেকটু নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। কী করবে তো?