তুমি কতটা কৌতূহলী

অনেকেই হীরক রাজার সঙ্গে একমত—‘জানার কোনো শেষ নাই, জানার চেষ্টা বৃথা তাই।’ হীরক রাজার এ রকম নিরাশাবাদী কথা যে ভুল, তা–ই প্রমাণ করতে দেখা যায় কিছু মানুষকে, যাদের কৌতূহলের সীমা নেই। তাদের মাথায় শুধু প্রশ্নের পর প্রশ্ন ঘুরতে থাকে। তুমিও কি সে রকম একজন কৌতূহলী মানুষ? নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও আর স্কোর মিলিয়ে জেনে নাও, তুমি কতটা কৌতূহলী।
অলংকরণ: নাইমুর রহমান

১. তোমার সামনে দুজন মানুষ কথা বলছে। এর মধ্যে একজনের কথা কানে এল তোমার, ‘জানিস কী হয়েছে…?’ এরপর তুমি যা করবে—

ক. কানে হেডফোন দেব। অন্য মানুষের বকবক শুনে মাথা ধরানোর মানে নেই। এর চেয়ে গান শুনে সময় কাটানোটাই সেরা হবে।
খ. এমন একটা ভাব করব যেন তাদের কথায় মনোযোগ নেই। আসলে কান খাড়া করে তাদের কথাই শুনব। কী হয়েছে, আমিও জানতে চাই!
গ. অন্যের কথা শোনার আমার কোনো আগ্রহ নেই। তাই মন দেব না, তবে যদি কানে চলে আসে, তখন কিছু করার নেই।

২. বাসায় সব আত্মীয়স্বজন এক হয়েছ। এমন সময় তোমার অন্যান্য কাজিনসহ তোমাকে পাশের রুমে উঠে চলে যেতে বললেন কোনো এক মুরব্বি। ‘ছোটদের থাকার দরকার নেই’—এই মন্তব্য করলেন। তুমি কী করবে?

ক. ও মা! ছোট বলে কি আমাদের গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে থাকার দরকার নেই? থাকতে চাইব। সে কথা বলব। তারপরও যদি পাঠিয়ে দেয়, তখন মনের দুঃখ নিয়ে অন্য রুমে চলে যাব।
খ. সত্যি? পাঠিয়ে দিলেই বেঁচে যাব একদম। এসব আড্ডা, গল্প, মানুষের বকর বকর শোনার বিন্দুমাত্র ইচ্ছাও আমার নেই।
গ. সে কী! বড়দের গল্প শুনতে আমার বেশ ভালো লাগে। বিশেষত, যেটা শুনতে বারণ করে, তা শুনতে আরও ইচ্ছা করে। তাই রুমের বাইরে চলে গেলেও আড়ি পেতে ঠিকই সব শুনব।

৩. বাসে উঠেছ। পাশে বসা ভদ্রলোক ফোন দেখে একটু পরপর মুচকি হাসছেন। তুমি যা করবে—

ক. কী দেখে হাসছেন—আমি একটু সময় বুঝে উঁকি মেরে সেটা দেখার চেষ্টা করব।
খ. ভুল করে চোখ পড়ে গেলে দেখে ফেলব। আর নইলে দেখব না।
গ. আমার পাশে কে বসে থাকে না দাঁড়িয়ে থাকে, আমি না সেটাই লক্ষ করি না। আর সেই মানুষ হাসছে না কেঁদে বুক ভাসাচ্ছে, সেটা জানাও তাই সম্ভব নয়।

৪. চোখে কালো চশমা। মাথায় কালো হ্যাট। তার সঙ্গে খদ্দরের পাঞ্জাবি পরে ব্রিফকেস হাতে অদ্ভুত বেশভূষার এক লোক তোমার পাশ দিয়ে চলে গেল। তোমার প্রতিক্রিয়া কী হবে?

ক. এ রকম সন্দেহজনক কোনো লোককে দেখলে তাকে নিয়ে বন্ধুর কাছে গল্প করব। এর বেশি কিছু করব না।
খ. চোখে পড়ার মতো হলে একনজর দেখব। তারপর নিজের মতো হাঁটা ধরব।
গ. এটা আবার জানতে চাওয়ার কী হলো? বেশি সন্দেহজনক মনে হলে পেছন পেছন হাঁটা ধরব। একবার কী হয়েছে শুনুন, আমি একজনকে অনুসরণ করছিলাম...

৫. কেউ তোমাকে গল্প বলছে। তুমি সে ক্ষেত্রে কী রকম শ্রোতা?

ক. গল্পের মাঝখানে একটু পরপর প্রশ্ন করার স্বভাব আমার আছে। অনেকেই ব্যাপারটা বিরক্তিকর মনে করে। কিন্তু গল্পটা ভালোভাবে জানতে হলে প্রশ্ন তো করতেই হবে, নাকি?
খ. যেহেতু নিজ থেকে বলছে, তাই মন দিয়ে শুনব। ব্যস! আর কী?
গ. যদি গল্প এড়ানো না যায়, তবে শোনার ভান করব। বিজ্ঞের মতো মাথা নাড়ব। আসলে কিছুই শুনব না।

৬. ইন্টারনেট ব্যবহার করে তুমি যে কাজটি সবচেয়ে বেশি সময় ধরে করো—

ক. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করি। নইলে নতুন নতুন গান-মুভি ডাউনলোড করি।
খ. আমি তো সারাক্ষণ খবরের ওয়েবসাইটগুলোতে চোখ রাখি। কখন কোথায় কী হচ্ছে। অনলাইন সার্ফিং করতে করতে নানান বিষয় নিয়ে গবেষণা করতে থাকি।
গ. আমি ইন্টারনেট তেমন একটা ব্যবহার করি না। আমার ঘুমিয়ে সময় কাটাতে ভালো লাগে।

৭. ধরো, তুমি নতুন কিছু শিখলে। শেখার পর যে কাজটি তুমি করোই করো—

ক. কোনো কিছু শিখলেই সেটা বন্ধুদের শেখানোর চেষ্টা করি। কিছু শেখার পর সেটা অন্যদের না জানানো পর্যন্ত আমার ঘুম হয় না রাতে।
খ. কী শিখব? অংকের সূত্র? শিখে কী করব? কিছু শিখলেও আমি কিছুদিন পরই সেটা ভুলে যাব।
গ. বাহ! শিখতে পারলেই আমার আনন্দ হয়। নতুন কিছু শেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে যাব। আর তত দিনে চেষ্টা করব শেখা বিষয়টাকে কাজে লাগাতে।

৮. ক্লাসে টিফিন নিয়ে গেছ। তোমার পাশের জন একটা সুন্দর বক্সে টিফিন নিয়ে এসেছে। খুবই চমৎকার সুবাস আসছে বক্স থেকে। কিন্তু টিফিন বক্স তোমার সহপাঠী আর খুলছে না। তুমি যা করবে—

ক. নিজের মতো টিফিন খাব। অন্যের টিফিন দেখে আমার কাজ কী?
খ. আমি টিফিন খেতে খেতেই ওর সঙ্গে গল্প করব, যেন দেখতে পারি ওর টিফিন বক্সে কী আছে!
গ. নিজের খাবারে মনোযোগ দেব। তবে ও টিফিন বক্স খুললে আড়চোখে একবার দেখব, কী এনেছে।

৯. গুগলে থিওরি অব রিলেটিভিটি নিয়ে সার্চ করছ। সেটা নিয়ে পড়তে পড়তেই ‍তুমি দেখলে চোখ ছানাবড়া করার মতো আরেকটি শিরোনাম। এ ক্ষেত্রে তুমি কী করবে?

ক. অন্য শিরোনামটিতে সঙ্গে সঙ্গেই ক্লিক করব। আগে কী নিয়ে গবেষণা করছিলাম, সেটা বেমালুম ভুলে যাব।
খ. প্রথমে যেটা পড়ছিলাম, সেটা শেষ করব। তারপর অন্যটা ধরব। যত সময়ই লাগুক। আমি এমনটা প্রায়ই করে থাকি।
গ. প্রথম কথা, আমি এসব কিছু সার্চই করব না। আর যদি করেও থাকি, একটু পরই বিরক্ত হয়ে রেখে দেব।

১০. বাসায় ফিরছ। এমন সময় একটা জটলা দেখলে রাস্তায়। জটলা থেকে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে। তোমার প্রতিক্রিয়া হবে—

ক. জটলাটার কাছে যাব। ঘটনা কী, বোঝার চেষ্টা করব। যদি ঘটনা না জানি, রাতে আমার ঘুম হবে না।
খ. এ রকম জটলা দেখলেই আমার বিরক্ত লাগে। এসব ভিড়ভাট্টা আমার একদম পোষায় না। নিজের পথে হাঁটব।
গ. তাড়া না থাকলে জেনে যাব, কী ঘটেছে। তবে বুঝে নেব, জটলাটায় কোনো গন্ডগোল হচ্ছে কি না। হলে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখব।

নম্বর

১. ক. ০ খ. ১০ গ. ৫
২. ক. ৫ খ. ০ গ. ১০
৩. ক. ১০ খ. ৫ গ. ০
৪. ক. ৫ খ. ০ গ. ১০
৫. ক. ১০ খ. ৫ গ. ০
৬. ক. ৫ খ. ১০ গ. ০
৭. ক. ৫ খ. ০ গ. ১০
৮. ক. ০ খ. ১০ গ. ৫
৯. ক. ৫ খ. ১০ গ. ০
১০. ক. ১০ খ. ০ গ. ৫

তুমি যেখানে দাঁড়িয়ে

০–৪০: নির্লিপ্ত মানুষ নাকি আজকাল অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে খুঁজলেও পাওয়া যায় না। তোমার নির্লিপ্ততা দেখতে অবশ্য অনুবীক্ষণ যন্ত্র লাগবে না। সেটা এক শ মাইল দূর থেকেও পরিষ্কার দেখা যায়। সহজ করে বলি। তোমার জাগতিক কোনো বিষয়ে তো আগ্রহ নেই-ই, যদি মঙ্গল থেকেও একটা এলিয়েন এসে বলে, ‘হ্যালো, আমি এলিয়েন! তোমার সঙ্গে পরিচিত হতে চাই।’ তুমি তার দিকেও ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলবে, ‘অন্য দিকে যান।’ জানার অনেক বিষয় আছে। পৃথিবী অনেক রহস্যময়। ছোট–বড় এসব বিষয় জানতে একটু কৌতূহলী কিন্তু তুমি হতেই পারো। এত নির্লিপ্ততা ভালো নয়।

৪৫–৭০: তোমার জানার আগ্রহ আছে। নতুন নতুন বিষয় তোমাকে কৌতূহলী করে তোলে। তুমি অনেক শিখতে চাও। কখনো কখনো তুমি অযাচিত কৌতূহলও দেখাও। কিন্তু কৌতূহলী হলেও তুমি এর পেছনে কম সময় ব্যয় করো। সব প্রশ্নের উত্তর কম সময়েই পেয়ে যাবে কিংবা খুব দ্রুত সব শিখে ফেলবে, এটা ভাবা কিন্তু ভুল। আবার অনেক সময় তুমি কোনো কিছু পরিপূর্ণ না জেনে অসহিষ্ণু হয়ে গবেষণা অসমাপ্তই রাখো। কাজেই, আরও সময় দাও। তুমি যথেষ্টই কৌতূহলী।

৭৫-১০০: তোমার কৌতূহল আক্ষরিক অর্থে আকাশ ছুঁয়েছে। কোনো কিছু তোমার মাথায় ঢুকলে আর সেটা জানতে না পারলে তোমার মধ্যে অস্থিরতা কাজ করতে শুরু করে। আবার ধরো, নতুন কিছু শিখলে, তুমি সেটা অন্যকে শেখাতে ব্যস্ত হয়ে যাও। এগুলো ভালো দিক। কিন্তু মাঝেমধ্যে তুমি এত বেশি কৌতূহলী হয়ে পড়ো যে সীমাটা বোঝো না। অন্যের ব্যক্তিগত বিষয়েও আগ্রহ দেখিয়ে ফেলো। তোমাকে বুঝতে হবে, কখন কৌতূহল নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।