তুমি কতটা সহনশীল

মডেল: মৌনিতা, প্রকৃতি, মারুফ ও জয়িতাছবি: খালেদ সরকার
কোনো কিছু নিজের মনমতো না হলে কমবেশি সবারই বিরক্ত লাগে। কিন্তু নিজের মতামতের সঙ্গে না মিললেই কি তা খারাপ? অন্যের আচরণ, মতামতকে সহনশীলভাবে বিবেচনা করতে পারাও জরুরি। নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও। নম্বর মিলিয়ে জেনে নাও তুমি কতটা সহনশীল।

১. সিঁড়ি দিয়ে উঠছ, এমন সময় একজন বয়স্ক মানুষ তোমার সামনে পড়লেন। তিনি এত আস্তে আস্তে উঠছেন যে বাধ্য হয়ে তাঁর পেছন পেছন তোমাকে হাঁটতে হচ্ছে। তুমি যে কাজটি করবে—

ক. আগে তিনি উঠবেন। আমি তাঁর পেছনেই উঠব। একটু নাহয় হলোই দেরি?
খ. দেখব কোনোভাবে আগে ওঠা যায় কি না। না হলে আর কী করা?
গ. আমি তো প্যারেড করছি না যে একজনের পেছন পেছন চলব। ঠিকই নিজের মতো উঠে যাব।

২. অনেক ঘুরেফিরে কেনাকাটা করেছ। বিল দিতে এসে দেখলে কাউন্টারের সামনে লম্বা লাইন। এর মধ্যে একজন বিল মিলিয়ে দেখছেন। এ ক্ষেত্রে তুমি কী করবে?

ক. যে এ রকম কাজ করবে তাকে দুকথা শুনিয়ে দেব। বলবে, ‘পড়ার কিছু নেই বুঝি? বিল খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ার কী আছে? আমার থেকে দুটো গল্পের বই ধার নেবেন নাকি মশাই?’
খ. এ রকম তো হতেই পারে। বিল তো মিলিয়ে দেখাই উচিত। লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করব।
গ. অন্য কাউন্টারে বিল দেওয়া যায় কি না দেখব। নতুবা লাইনেই থাকব।

৩. রেস্টুরেন্টে অনেকে মিলে খাওয়াদাওয়া করছ। এমন সময় তোমার ফোন এল। একটু আলাদা কথা বলতে তুমি ফোন নিয়ে উঠে দাঁড়ালে। উঠতে গিয়ে ধাক্কা খেলে ওয়েটারের সঙ্গে। তার হাতে থাকা খাবার তোমার জামায় লেগে একাকার! এমন অবস্থায় তুমি—

ক. সে তো আর ইচ্ছে করে বিষয়টা করেনি। কাজেই তাকে কিছু বলব না।
খ. কী? দেখেশুনে চলবে না? আমার কাপড়ে খাবার ফেলবে আর আমি ছেড়ে দেব? প্রয়োজনে ম্যানেজারকে বলে জরিমানা করাব।
গ. তেমন কিছু করব না। শুধু তাকে বলব ভবিষ্যতে যেন আরও সাবধানে কাজ করে।

৪. মুভি দেখার সময় তোমার সামনে বসা কেউ অনবরত কথা বলছে। তার আবার ফোনও আসছে একটু পরপর। তুমি কী করবে?

ক. সোজাসাপ্টা তাঁকে বলব, আপনার সুচিন্তিত মতামত কিংবা ফোনের রিংটোন শুনতে আসিনি। মুভি দেখতে এসেছি।
খ. একেকজন মানুষ একেক স্বভাবের হয়। হয়তো তাঁর মুভি দেখার সময় কথা বলার অভ্যাস। নিজের মতো মুভি দেখায় মন দেব।
গ. সিট বদলে বসার চেষ্টা করব। নতুবা তাঁকে ভদ্রভাবে বলব, মুভি দেখতে সমস্যা হচ্ছে।

৫. কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের খুব সুন্দর ছবি দিয়ে ক্যাপশন লিখল, ‘আমি দেখতে এত বাজে!’ এ রকম পোস্ট দেখলে তুমি কী করো?

ক. বিরক্ত লাগে। তবু যেন দেখিনি এমন ভাব করে এড়িয়ে যাই।
খ. এমন ক্যাপশন দিলেই বা ক্ষতি কী? এতে দোষের কিছু দেখি না।
গ. আমার চোখে পড়লে একদম লিখে দিই, ‘ঢং করো?’

৬. সবাই মিলে গ্রুপ অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিয়েছ। এর মধ্যে একজন কিছুই করেনি। তবু শিক্ষকের সামনে এমন ভাব নিচ্ছে, যেন সে-ই সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে। এ রকম মুহূর্তে তোমার অবস্থা হয়—

ক. কষ্ট করে কাজ করব আমরা। আর সে কোনো কাজ না করেই ভাব নেবে? আবার সেটা আমি সহ্যও করব? অসম্ভব! শিক্ষককে তার আসল রূপ বলে দেব।
খ. শিক্ষকের সামনে তাকে কিছু বলব না। তবে আড়ালে দু-এক কথা খোঁচা শোনাব।
গ. এ রকম তো এক-দুজনকে পাওয়া যায়ই। কিছু বলব না।

৭. কেউ তার নিজস্ব মতামত নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখল। তুমি তার সঙ্গে একদমই একমত নও। তখন তুমি যা করো—

ক. বিনয়ের সঙ্গে নিজের মতামতটা জানাই। তার মতামতকে অসম্মান না দেখিয়ে যুক্তি দিতে চেষ্টা করি।
খ. আবোলতাবোল কথা দেখলে মাথার ঠিক থাকে না। দু-একটা মন্দ কথা বলে ফেলতে পারি।
গ. কী দরকার নিজের মতামত জানানো? এড়িয়ে যাই।

৮. তোমার আশপাশের বাসা থেকে প্রচণ্ড জোরে গান বাজানো হচ্ছে। একটা গানও তোমার পছন্দের না। তখন তোমার কাজ হয়—

ক. নিজের কাজে মন দেওয়ার চেষ্টা করি।
খ. চেষ্টা করি নিজের মতো থাকতে। না পারলে বাধ্য হয়ে জানাই অসুবিধা হচ্ছে।
গ. জোরে জোরে গান বাজাবে কেন? পুরো পাড়াটা তার নিজের সম্পত্তি নাকি? কথা না শুনিয়ে উপায় নেই।

৯. তোমার বাসায় মেহমান এসেছে। তার সঙ্গে এসেছে একটা পাঁচ-ছয় বছর বয়সী বাচ্চা। সে সারাক্ষণ তোমার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বা জিনিসপত্র ধরছে। তোমার মনোভাব—

ক. আরে বাচ্চারা একটু অমনই হয়। সবাই কমবেশি এমন আচরণ করে বাচ্চাকালে। বিষয়টা স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নেব।
খ. সাধে তো আর বলে না বাচ্চা ভয়ংকর কাচ্চা ভয়ংকর! ঝাড়ি দেওয়া ছাড়া উপায় কী?
গ. চেষ্টা করব তাকে বোঝাতে। না শুনলে তার অভিভাবককে বলব।

১০. তোমার সঙ্গে কেউ কথা বলছে। সে যেমন উচ্চ স্বরে কথা বলছে, তেমনি তার মুখ থেকে থুতু ছিটে আসছে। এ ক্ষেত্রে তুমি কী করবে?

ক. তাকে বলব, ‘ওহে! আমি শুনতে পাচ্ছি। দয়া করে নিচু গলায় কথা বলুন। আর থুতু ফেলতে হলে ডাস্টবিনে গিয়ে ফেলুন।’
খ. খুব সমস্যা মনে হবে। কিন্তু তাকে কিছুই বলব না। পাছে সে কষ্ট পায়।
গ. বলার চেষ্টা করব। যদি না বলতে পারি তবে নিজেই একটু দূরত্বে অবস্থান করব।

নম্বর

১. ক. ১০ খ. ৫ গ. ০
২. ক. ০ খ. ১০ গ. ৫
৩. ক. ১০ খ. ০ গ. ৫
৪. ক. ০ খ. ১০ গ. ৫
৫. ক. ৫ খ. ১০ গ. ০
৬. ক. ০ খ. ৫ গ. ১০
৭. ক. ৫ খ. ০ গ. ১০
৮. ক. ১০ খ. ৫ গ. ০
৯. ক. ১০ খ. ০ গ. ৫
১০. ক. ০ খ. ১০ গ. ৫

যেখানে দাঁড়িয়ে তুমি

০—৪০: কথায় বলে, পছন্দের মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার সবাই করতে পারে। কিন্তু অপছন্দের মানুষের সঙ্গে ভদ্র ব্যবহার করা একটা দক্ষতা। নিজের কিছু পছন্দ না হলেই যে তা মন্দ, এ ধারণা কিন্তু সঠিক নয়। তুমি একেবারেই সহনশীল নও। সবকিছু তোমার মনমতোই হওয়া চাই। আর নিজের পছন্দ না হলেই কোমর বেঁধে লেগে পড়ো তর্ক করতে। এ জন্য মাঝেমধ্যে তোমার সমস্যাতেও পড়তে হয়। কাজেই চেষ্টা করো আরেকটু সহনশীল হতে।

৪৫—৭৫: তুমি অসহিষ্ণু নও, তবে তুমি অনেক বেশি সহনশীলও নও। কখনো কখনো বিষয়গুলো মেনে নাও। আবার কখনো কখনো নিজের মতামত জানাতেও ভুলো না। অর্থাৎ পরিস্থিতি বুঝে তুমি সহনশীলতা দেখাও। অনেক সময় পরিস্থিতি তোমার হাতের বাইরে চলে যায়। তবে কার না এমন হয়? তোমাকে তাই আরেকটু নিয়ন্ত্রিত থাকার চেষ্টা করতে হবে।

৮০—১০০: বিশ্বাস করো, সহনশীলতায় যদি কোনো পুরস্কার দেওয়া হতো, তুমি তাতে প্রথম পুরস্কারটি পেতে। কোনো কোনো সময় সহনশীল হওয়ার বিকল্প নেই। অন্যের প্রতি সম্মান দেখানোর মনোভাব সহনশীলতা থেকেও তৈরি হয়। সেদিক থেকে চিন্তা করলে বিষয়টি বেশ ভালো। কিন্তু তাই বলে সবকিছু মেনে নিলে, সবাই তোমার কাছ থেকে সুযোগ নিয়ে নিতে পারে। আর কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিজস্ব মতামত জানানোটাও জরুরি। কাজেই তোমাকে বুঝেশুনে সহনশীল হতে হবে। যেন অন্য কেউ এর উল্টো সুযোগ না নেয়।