তুমি কতটা হ্যারি পটারভক্ত

অলংকরণ: নাইমুর রহমান
পৃথিবীতে দুই ধরনের মানুষ আছে। ধরো আমি বললাম, তোমার নামে একটা চিঠি এসেছে। চিঠিটা যেনতেন জায়গা থেকে আসেনি, এসেছে সুদূর হগওয়ার্টজ থেকে। একদল শুনে বলবে, ‘ধুর, এ আবার সত্যি হয় নাকি? হ্যারি পটার, সে তো কেবল একটা গল্প!’ আরেক দল বলবে, ‘সে তো আসার কথাই ছিল। আজ হোক, কাল হোক। আমি বাক্সপেটরা নিয়ে তৈরি, ট্রেন ধরব বলে...!’ লেখক জন গ্রিন দ্বিতীয় দলের মানুষ। যারা বলে হ্যারি পটার নিছক একটা গল্প, তাদের উদ্দেশে গ্রিন সাহেব বলেছেন, ‘হ্যারি পটার সত্যি নয়? হয়তো হ্যারি পটার সত্যি, তুমিই সত্যি নও!’ তুমি আসলে হ্যারি পটারের কত বড় ভক্ত, সেটা তো স্কেল বা ফিতা দিয়ে মাপা সম্ভব নয়। নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিলে হয়তো কিছুটা ধারণা পাওয়া যাবে। ঝটপট করে উত্তর দিয়ে ফেলো আর স্কোর মিলিয়ে জেনে নাও, তুমি কতটা পটারভক্ত!

১. বন্ধুদের মধ্যে তুমুল আলোচনা চলছে। বিষয় আর কিছু নয়, কার প্যাট্রোনাস কী হতে পারে। হ্যারি যেমন প্যাট্রোনাস চার্ম বললেই একটা পুরুষ হরিণ এসে বাঁচিয়ে দেয় তাকে ডিমেন্টরদের হাত থেকে, সে রকম। আলোচনা শুনে তোমার প্রতিক্রিয়া যা হবে—

ক. হ্যারির সঙ্গে আমার ভীষণ মিল। আমার ধারণা, আমারও হরিণ হবে প্যাট্রোনাস!
খ. প্যাট্রোনাস? সেটা আবার কী? খায় না মাথায় দেয়?
গ. আমি হ্যারি পটার ভালোবাসি। কিন্তু এটাও জানি, প্যাট্রোনাস থাকা শুধু গল্পেই সম্ভব। কাজেই আলোচনা শুনব, নিজে অংশ নেব না।

২. মনে করো, এক ছুটিতে তোমাকে সুযোগ দেওয়া হলো হগওয়ার্টজ, হগজমিড ভিলেজ অথবা ডায়াগন অ্যালির যেকোনো একটিতে ঘুরতে যাওয়ার। তুমি যেখানে যাবে—

ক. এর মানে কি গ্রেট ব্রিটেন বা লন্ডন ঘুরতে যাওয়ার সুযোগ পাওয়া? ঘুরতে আমার বেশ লাগে। কাজেই নারনিয়ার দুনিয়া বা হ্যারি পটারের দুনিয়া বিষয় নয়। এক জায়গায় ঘুরতে গেলেই হলো আমার।
খ. আরেহ্‌! আমি তো হগওয়ার্টজেই থাকি। সেখানে নতুন করে ঘুরতে যাওয়ার কী আছে? আর বাকি দুটো জায়গাতেও গিয়েছি। তবে সেবার তাড়া ছিল বলে হগজমিডে বেশিক্ষণ ঘুরতে পারিনি। সেখানেই আরেকবার যাব দেখি।
গ. ইয়ে না মানে, সত্যি কোথাও ঘোরার সুযোগ দিলে খুশি হতাম। এই যেমন সুন্দরবন, কক্সবাজার...

৩. হ্যারি পটারের যে চরিত্রের সঙ্গে তোমার ভীষণ মিলে যায়—

ক. কোনো চরিত্রের সঙ্গেই মেলে না। আমি আমার মতো। আর আমি বইগুলো পড়েও দেখিনি, তাই সব চরিত্রকে চিনিও না বাপু।
খ. আমার তো অনেকের সঙ্গেই মিলে যায়। কখনো নিজেকে লুনা লাভগুড মনে হয়, আবার কখনো মনে হয় জর্জ উইজলি। যদিও নিজেকে ওদের মতো ভাবি না, কারণ, ওরা গল্পের চরিত্রমাত্র।
গ. আমার সঙ্গে কারও মিলবে কেন? হ্যারি পটারেরই বরং আমার সঙ্গে খুব মেলে। আমার কপালের দাগটা দেখেছ? হ্যারিরও অমন একটা দাগ আছে। যদিও নিন্দুকেরা বলে, আমি হ্যারিকে নকল করি।

৪. ধরো, কেউ তোমাকে বলল, হ্যারি পটারের মতো ভুয়া আর বাজে গল্প আর হয় না। তোমার প্রতিক্রিয়া কী হবে?

ক. এত বড় কথা? যারা এমনটা বলে ওরা নিজেরাই ভুয়া। ওদের সঙ্গে আমি আর কখনোই মিশব না, সম্পর্ক একদম শিফট্ ডিলিট।
খ. কারও কাছে হ্যারি পটার ভালো না-ই লাগতে পারে। তবে জানিয়ে দেব, আমার হ্যারি পটার বেশ ভালো লাগে। তাদের কেন ভালো লাগে না, সেটাও জানতে চাইব।
গ. আরেহ্‌! ঠিক বলেছে একদম। ভুয়াকে ভুয়া বলবে না? এসব ছাইপাঁশ গল্প পড়ে মানুষ কেন এত মজা পায়, আমি বুঝি না। আমি না পড়েই বলতে পারি, কোনটা বাজে কোনটা ভালো।

৫. কাউকে হ্যারি পটার নিয়ে বেশি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখলে আমার মনোভাব যা হয়—

ক. রাগে আমার গা জ্বলে যায়। একটা গল্প নিয়ে অমন ন্যাকামো করার কী আছে ভাই?
খ. আমি নিজেই তো অনেক উচ্ছ্বাস প্রকাশ করি। আর যে হ্যারি পটার পছন্দ করে, সে তো আমার মেলায় হারিয়ে যাওয়া উইজার্ড বা উইচ বন্ধু। এটা আর বলতে হয়?
গ. যার ভালো লাগবে, সে উচ্ছ্বাস দেখাবে। আমার ভালো লাগে, তবে আমি অত উচ্ছ্বাস দেখাই না। কেউ দেখালে সেটা নিয়েও আমার আপত্তি নেই।

৬. হ্যারি পটারের যে মন্ত্র আমার সবচেয়ে প্রিয় এবং ব্যবহার করতে ইচ্ছা করে—

ক. আসলে হগওয়ার্টজের বাইরে আমরা মন্ত্র–টন্ত্র ব্যবহার করি না। নইলে সব মন্ত্রই আমার প্রিয়। ব্যবহার করার সুযোগ থাকলে সবই করতাম।
খ. ‘এক্সপেক্টো প্যাট্রোনাস’ বললেই যেভাবে ডিমেন্টররা দূর হয়ে যায়, বাস্তবেও যদি এ মন্ত্র বললে সব বিপদ দূর হয়ে যেত, বেশ হতো!
গ. আমি হ্যারি পটারের কোনো মন্ত্রই জানি না। জানার আগ্রহও নেই। তাই প্রিয়–অপ্রিয়র প্রশ্নই উঠছে না।

৭. ধরো, দিনদুপুরে তোমার বাসার সামনে একটা প্যাঁচাকে বসে থাকতে দেখলে। তোমার মাথায় যে চিন্তা প্রথমে আসবে—

ক. আমার হগওয়ার্টজে যাওয়ার চিঠি এসে গেল তাহলে? আমায় আর পায় কে...
খ. ছবি তুলতে ইচ্ছা করবে। দিনদুপুরে তো সচরাচর প্যাঁচা দেখা যায় না।
গ. একবার হলেও মনে হবে, ‘ইশ! সত্যি যদি হগওয়ার্টজে যাওয়ার চিঠি পেতাম!’

৮. ডবি, ফ্রেড উইজলি, ডাম্বলডরের মধ্যে যেকোনো একজনকে বাঁচাতে পারবে তুমি। কাকে বাঁচাতে?

ক. বলছি এরা কারা? কখনো তো এদের নামও শুনিনি।
খ. একজনকেও নয়। হ্যারি পটারের গল্পটা এমনভাবে লেখা, যেখানে আমি খুব বেশি পরিবর্তন আনতাম না। গল্প হিসেবে এটা সত্যিই নিখুঁত।
গ. আমি ওই সময় হগওয়ার্টজে ছিলাম না। থাকলে প্রত্যেকেই বেঁচে থাকত। ফিরিয়ে আনতে পারলে সবাইকেই ফিরিয়ে আনতাম। কিন্তু যা গেছে, সে কথা বলে আর লাভ কী? আমরা হগওয়ার্টজে এখনো ওদের স্মরণ করি।

৯. একদিন হঠাৎ জানতে পারলে, তুমি নিজেও একটা হরক্রাক্স। কী করবে?

ক. একটা গোপন কথা বলি। আমার প্রায়ই এমন সন্দেহ হয় যে আমি একটা হরক্রাক্স হলেও হতে পারি। হ্যারি যেভাবে সামলেছে, সেভাবেই সামলাতে হবে ব্যাপারটা।
খ. আমার হরক্রাক্স হওয়া সম্ভব নয়। গল্পে হ্যারিই ছিল শেষ হরক্রাক্স।
গ. এসব ভুয়া গল্পেই আমি বিশ্বাস করি না, আবার ভাবব নিজেকে হরক্রাক্স?

১০. কুইডিচ ম্যাচ দেখার টিকিট পেলে। কিন্তু বাসায় কেউ বিশ্বাস করছে না হ্যারি পটারের দুনিয়াটা একদম সত্যি, তাই যাওয়ার অনুমতিও দিচ্ছে না তোমায়। এমন পরিস্থিতিতে কী করবে?

ক. আমার মনে হয় না আমি টিকিট পেলেও দেখতে যাব। কারণ আমি জানি, কুইডিচ বলে কোনো খেলা নেই। ভাবব, কেউ নিশ্চয়ই মজা করছে আমাকে বোকা বানানোর জন্য।
খ. সুযোগ পেলে সত্যিই যেতাম, বাসাকে যেভাবেই হোক বুঝিয়ে–সুঝিয়ে। কিন্তু গল্প কি আর সত্যি হয়?
গ. আরে অনুমতি পাওয়ার জন্য প্রয়োজন হলে কান্নাকাটি করতাম। আর একেবারেই না পেলে, অনুমতি ছাড়াই যেতাম। কী এসে যায়?

নম্বর

১. ক. ১০ খ. ০ গ. ৫

২. ক. ৫ খ. ১০ গ. ০

৩. ক. ০ খ. ৫ গ. ১০ 

৪. ক. ১০ খ. ৫ গ. ০   

৫. ক. ০ খ. ১০ গ. ৫  

৬. ক. ১০ খ. ৫ গ. ০  

৭. ক. ১০ খ. ০ গ. ৫ 

৮. ক. ০ খ. ৫ গ. ১০ 

৯. ক. ১০ খ. ৫ গ. ০ 

১০. ক. ০ খ. ৫ গ. ১০

তুমি যেখানে দাঁড়িয়ে

০–৪০: হ্যারি পটারের ব্যাপারে তোমার এত বৈরী ভাব কেন বলো তো? মেজাজ মাপার কোনো থার্মোমিটার থাকলে মেপে দেখো, হ্যারি পটারের নাম শুনলেও তোমার মেজাজ ১০৫ ডিগ্রিতে উঠে যায়। তুমি তো হ্যারি পটার পছন্দ করোই না, অন্য কেউ পছন্দ করলে সেটাও আবার সহ্য করতে পারো না। যদিও তুমি বইগুলো ঠিকমতো পড়োনি, কিন্তু তবুও এ ব্যাপারে তোমার একরকম বিদ্বেষ আছে বলা যায়। বইগুলো একবার পড়েই দেখো না, হয়তো ভালো লেগে যেতে পারে। আর অন্যের পছন্দে নাক সিঁটকানোর স্বভাব থাকলে সেটাও বাদ দাও।

৪৫-৭০: হ্যারি পটারের বই বা মুভি সবই তোমার ভীষণ পছন্দ। কিন্তু তুমি খুবই বাস্তববাদী মানুষ। গল্পগুলোকে সত্যি ভাবো না। তুমি জানো এ রকম চমৎকার গল্প আর কখনো তৈরি হবে না, কিন্তু এই গল্পগুলো নিয়ে বেশি মাতামাতি করতেও তুমি নারাজ। তোমার কাছে হ্যারি পটারও অন্য ৮-১০টা ভালো বইয়ের মতো। অন্য যেকোনো ভালো বই নিয়ে যেমন মনোভাব রাখো, তেমনটাই ভাবো হ্যারি পটারকে নিয়ে। এ নিয়ে বিশেষ কোনো উচ্ছ্বাস দেখাও না।

৭৫-১০০: হ্যাগ্রিড খুব সম্ভবত তোমাকে উইজার্ড বা উইচ ঘোষণা করে দিত। তুমি হ্যারি পটারের জগতেই বাস করো। তুমি এতটাই পটারভক্ত যে মানুষ তোমাকে অতিরিক্ত কল্পনাপ্রবণ ভাবে এবং এ নিয়ে বেশ ঝক্কি পোহাতে হয় তোমাকে। মাঝেমধ্যে তুমি অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ো হ্যারি পটার নিয়ে। এই যেমন যারা হ্যারি পটার পছন্দ করে না, তাদের তুমি একেবারেই দেখতে পারো না। এ রকম মনোভাব রাখা কিন্তু ঠিক নয়। কোনো ঝামেলার মুখোমুখি হলে তোমার আফসোস হয়, তুমি কেন হগওয়ার্টজে নেই। বেশি দুঃখ পেয়ো না। এই ভেবে খুশি হও যে হ্যারি পটারের সর্বশ্রেষ্ঠ ভক্ত বলে কোনো পদক থাকলে তুমিই সেটা জিততে!