দুঃসাহসী টম সয়্যার

লেখক | মার্ক টোয়েন
প্রথম প্রকাশ | ১৮৭৬, যুক্তরাষ্ট্র
ধরন | অ্যাাডভেঞ্চার

দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেল সাপ্তাহিক ছুটি। সারা দিন হইচই করে ভালোই কাটছিল। আবার যেতে হবে স্কুলে। বিরক্তিকর! পুরো এক সপ্তাহ পরে আবার ছুটি। অসহ্য! কেন যে একবার অসুখও হয় না! অসুখের কথা মনে পড়তেই দুষ্টুবুদ্ধিটা মাথায় ঢুকল ছেলেটার। মুহূর্তেই চোখ-মুখ উজ্জ্বল হয়ে গেল তার। বুড়ো আঙুলে যেখানে চোট পেয়েছে, ওখানে ব্যথার ভান করলেই হয়। তাতেও কাজ না হলে ওপরের পাটির একটা দাঁত তো নড়ছেই। ওটা ব্যথা করছে বললে আর অবিশ্বাস করতে পারবে না পলি খালা। কিন্তু সবার চোখকে ফাঁকি দিতে পারলেও পলি খালার চোখকে ফাঁকি দেওয়া অত সোজা নয়। এতসব অজুহাত সত্ত্বেও তাকে ঠিকই স্কুলে যেতে হলোই।

অনেকের কাছেই নিশ্চয়ই পরিচিত মনে হচ্ছে কাহিনিটা। হ্যাঁ, টম সয়্যারের কথাই বলছিলাম এতক্ষণ।

অনেক আগের কথা। যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি নদীর তীরে মিসৌরি শহরে পলি খালার সঙ্গে থাকত দুষ্টু টম, তার ভাই সিড আর মেরি। যাকে বলে লক্ষ্মী ছেলেমেয়ে ঠিক তাই ছিল সিড আর মেরি। কিন্তু খালার যত বিপত্তি, যত যন্ত্রণা একমাত্র টমকে নিয়ে। আর হবে না কেন! গন্ধ শুঁকে শুঁকে সমস্যা খুঁজে বের করাই যে তার কাজ। পলি খালার হাজার শাস্তির ভয়েও পিছপা হয় না সে। আবহাওয়া খারাপ হলেই খুশি টম। কারণ তাতে দুষ্টুমির সুযোগ এমনিতেই জুটে যায়। কিন্তু আবহাওয়া ভালো থাকলেই মন খারাপ হয়ে যায় টমের। অবশ্য তখন মন ভালো করতে স্কুল পালিয়ে সাঁতার কাটতে চলে যায় সে। পড়ালেখার সময়ে তাকে জঙ্গলে বন্ধু জো হারপারের সঙ্গে রবিনহুড খেলতে দেখা যায়। মাঝরাতে সবাই যখন গভীর ঘুমে অচেতন তখন সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে হাকলবেরি ফিনের সঙ্গে মরা বিড়াল হাতে কবরস্থানে দেখা যায়। একটা ডাকাত দল গড়বে বলে একদিন বন্ধুদের নিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে এক নির্জন দ্বীপে চলে যায় সে। এ রকম ছেলেকে নিয়ে যন্ত্রণা হবে না তো কী! তার পরও পলি খালা প্রাণান্ত চেষ্টা করে যান তাকে মানুষ করতে।

দুষ্টুমি করতে গিয়েই একদিন কবরস্থানে টম সয়্যার আর হাক ফিনের চোখের সামনে খুন হন ড. রবিনসন। খুনি তাদের পরিচিত ইনজুন জো। রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডটি দেখে ভয়ে শিউরে উঠে পালিয়ে আসে তারা। নিজেরা খুন হওয়ার ভয়ে মুখ বন্ধ রাখে দুজন। কিন্তু অচিরেই তাদের সব স্বীকার করতেই হলো। ধরা পড়ার আগেই পালিয়ে যায় খুনি জো। তাতে ভয় আরও বেড়ে যায় টম আর হাকের।

গরমের ছুটিতে পাহাড়ের গুহায় টম, হাক ফিন আর টমের বান্ধবী বেকি থ্যাচার গুপ্তধন খুঁজতে যায়। খুঁজতে খুঁজতে একসময় ক্লান্ত আর হতাশ হতে হলো তাদের। তারা যখন ফিরে আসার কথা ভাবছে, ঠিক সে সময় ইনজুন জো ও তার সহযোগীদের পাহাড়ের গুহায় গুপ্তধন লুকিয়ে রাখতে দেখে। দমবন্ধ করে দৃশ্যটা দেখে, কিন্তু লুকানোর আগেই খুনিদের চোখে পড়ে যায়। পাহাড়ের গহিন অন্ধকার গুহায় আটকা পড়ে টম, হাক আর বেকি। তারপর ঘটতে থাকে রোমহর্ষক সব ঘটনা। বাকিটা আগেই বলে দেওয়া কি ঠিক হবে? বইটা পড়েই না হয় জেনে নাও বাকিটুকু।

মার্ক টোয়েন ছদ্মনামের আড়ালে লেখক স্যামুয়েল লাংহর্ন ক্লিমেনসের লেখা সেরা বইয়ের তালিকা করতে গেলে ‘অ্যাডভেঞ্চার অব টম সয়্যার’ বইটির নাম চলে আসবে প্রথম সারিতে। গল্পের নায়কগুলো কিন্তু একেবারে কাল্পনিক নয়। টোয়েনের স্কুলজীবনের দুই বন্ধু ছিলেন জন ব্রিজ এবং উইল বয়েন। এ দুজনকে মিলিয়ে তিনি কালজয়ী টম সয়্যার চরিত্রটি সৃষ্টি করেছিলেন। আর হাকলবেরি ফিন চরিত্রটি তার ছেলেবেলার আরেক বন্ধু টম ব্লাঙ্কেনশিপের আদলে সৃষ্ট। প্রায় দেড় শ বছর আগে রচিত এ ক্লাসিক বইটি এখনো দেশে দেশে শিশু-কিশোরদের কাছে জনপ্রিয়। জনপ্রিয় এ বইটি অনুবাদ হয়েছে বিশ্বের অধিকাংশ ভাষায়। তা ছাড়া মূল উপন্যাস অবলম্বনে অনেকগুলো সিনেমা ও টিভি সিরিজ তৈরি হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায়। সেগুলোও বইটির মতোই পেয়েছে জনপ্রিয়তা।