দৃঢ়ভাবে মাদককে না বলতে হবে

যুগে যুগে কবি-সাহিত্যিকেরা বন্দনা করেছেন যৌবনের। কারণ, শিশুরা অপরিপক্ব; মধ্যবয়সীরা কর্মব্যস্ত; ক্লান্ত। কিন্তু তারুণ্য সদাজাগ্রত, চঞ্চল। তারাই পারে দেশকে এগিয়ে নিতে। কিন্তু আধুনিকতার মোহে মাদকের নেশায় তারুণ্য আজ ধ্বংসের মুখে। এর ভয়াবহতায় প্রশাসন বিচলিত; অভিভাবকেরা শঙ্কিত।

সাময়িক উত্তেজনার লোভে কিশোর-তরুণেরা অধিক হারে মাদকাসক্ত হচ্ছে। আশঙ্কার বিষয়—ধূমপানসহ অনেক মাদক গ্রহণ সমাজে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। অনেকের কাছেই সিগারেট ফ্যাশনের অঙ্গ। ‘যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে’ চলতে অনেকেই সিগারেটের আশ্রয় নিচ্ছে।

তরুণেরা পরিবারের চেয়ে বন্ধুর সঙ্গে থাকতে পছন্দ করে। তাদের কৌতূহলও বেশি। ফলে মাদকাসক্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। মাদকাসক্ত বন্ধু থাকলে তারাও নানাভাবে প্রভাবিত করে। অনেক সময় বন্ধুরা প্রলোভন দেখায়; উপহাস করে; সেকেলে বা গেঁয়ো বলে হেয় করে। তাই আধুনিক হওয়ার চেষ্টায় অনেকে মাদকাসক্ত হয়।

আবার বিদেশি চলচ্চিত্রে নায়কদের হাতে নামীদামি ব্র্যান্ডের সিগারেট বা মদের গ্লাস থাকে। তাদের অনুকরণ করতে গিয়ে এসবে আসক্ত হয় তরুণেরা। বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ বা স্কুলশিক্ষার্থীরা বিভ্রান্ত হয়ে স্মার্ট হতে মাদকাসক্ত হয়।

এখন মরণ নেশা ইয়াবার কাছে সব মাদকই হার মেনেছে। শহর থেকে অজপাড়াগাঁ এর বিস্তৃতি। নৈতিক শিক্ষার অভাব ও বন্ধুদের প্ররোচণায় তরুণেরা এতে আসক্ত হচ্ছে। আসলে আধুনিকতা এসবের বিপরীত। আধুনিকতার নামে মাদকের জালে আটকা পড়ে শুধু নিজের ক্ষতিই করছে না; জাতির ভবিষ্যৎও ঠেলে দিচ্ছে অন্ধকারে। পরিবারের কষ্টার্জিত সম্পদ অপচয় করে নেশায় বুঁদ হয়ে শেষ রাতে ঘরে ফেরা, নিজের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করাকে আধুনিকতা ভাবা হাস্যকর।

বিশ্বের আধুনিক জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করতে প্রয়োজন আধুনিক নাগরিক। সেটা নেশার নীল আধুনিকতা নয়। আধুনিক হতে হলে হতে হবে আত্মসচেতন, নির্ভীক ও বুদ্ধিমান। শত প্রলোভনেও সে বিচ্যুত হবে না। দৃঢ়ভাবে নিজে ‘মাদককে না’ বলবে ও অন্যকেও মাদকের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করবে।