দ্য সুইস ফ্যামিলি রবিনসন

ইতালিয়ান অভিযাত্রী কলম্বাস ভারত খুঁজতে গিয়ে ভুল করে ১৪৯২ সালে আবিষ্কার করেছিলেন নতুন দুনিয়া বা আমেরিকা। এরপর, একটা হুলুস্থুল কাণ্ড ঘটে গিয়েছিল পুরো ইউরোপে। সাত সমুদ্দুর পেরিয়ে ভিনদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে অভিযানে নেমেছিল অনেকে। নতুন পৃথিবীর অমূল্য সব সম্পদ কুক্ষিগত করতে কলোনি স্থাপনে উঠেপড়ে লেগেছিল ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। এসব কারণে রাতারাতি সেসব দেশে গড়ে উঠেছিল বিভিন্ন নামধারী কোম্পানি। এদের মধ্যে ভারত উপমহাদেশের ডাচ, পর্তুগিজ, ফরাসি কিংবা ব্রিটিশ বণিকদের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কথা তো সবারই জানা।

আটলান্টিক আর প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দিয়ে সারা বিশ্বেই দুঃসাহসী সব অভিযানে ছড়িয়ে পড়েছিল ইউরোপের বণিক আর অভিযাত্রীরা। তা করতে গিয়ে জলে-স্থলে নানান বিপদের মুখোমুখি হয়েছিল তারা। সে সময় পালতোলা জাহাজই ছিল তাদের একমাত্র ভরসা। ঝড় বা জলদস্যুদের কবলে পড়ে অনেক সময় সাগরেই হতো অনেক অভিযাত্রীর সলিলসমাধি। আর ভাগ্য ভালো থাকলে সাগরে ভাসতে ভাসতে কারও কারও আশ্রয় জুটত মহাসমুদ্রের বুকে ছোট্ট কোনো দ্বীপে। এদের মধ্যে স্কটিশ নাবিক অ্যালেকজান্দার সেলকার্কের কথা হয়তো অনেকেই জানো।

বাস্তব এসব সাগরময় অভিজ্ঞতা মুখে মুখে ছড়াতে ছড়াতে একসময় (মানে ১৭ ও ১৮ শতকের দিকে) ইউরোপের শিল্প-সাহিত্যেও উঠে এসেছিল। অনেকেই এসব ঘটনার ওপর ভিত্তি করে লিখতে শুরু করেছিলেন কাল্পনিক দুঃসাহসী সব অভিযানের গল্প। এর মধ্যে ডেনিয়েল ডিফোর রবিনসন ক্রুসোকে প্রথম সফল আর জনপ্রিয় উপন্যাস হিসেবে ধরা হয়। এ সফলতার পালে উদ্দাম হাওয়া পেয়ে এরপর বিস্তর কাগজের অপচয় হতে থাকে। লেখা হতে থাকে ভূরি ভূরি সাগর অভিযানের গল্প-কাহিনি। তাদের অধিকাংশই কালের গণ্ডি পেরোতে পারেনি। হারিয়ে গেছে নষ্ট কাগজের মতোই। টিকে আছে কেবল রবিনসন ক্রুসোসহ রবার্ট মাইকেল ব্যালান্টাইনের কোরাল আইল্যান্ড, স্টিভেনসনের ট্রেজার আইল্যান্ড আর জোহান ডেভিড ওয়েসের দ্য সুইস ফ্যামিলি রবিনসন-এর মতো গুটিকয়েক উপন্যাস।

দ্য সুইস ফ্যামিলি রবিনসন-এর কাহিনিও অনেকটা সেই রবিনসন ক্রুসোর মতোই। কোনো একদিন অথই সমুদ্রে জাহাজ চলছিল দূরের পথে। হঠাৎ এক ভয়ংকর ঝড়ে সব ওলটপালট। পথ হারিয়ে ফেলল পালতোলা জাহাজ। সাত দিন ঝড়ের সঙ্গে একটানা লড়ে জাহাজ তীরের প্রায় কাছাকাছি পৌঁছাল। কিন্তু এক ডুবো পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে আটকে যায় জাহাজ। নাবিকেরা নৌকায় উঠে জাহাজ ছেড়ে ঝটপট পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। ঝড়ের দাপটে পাগলপ্রায় সমুদ্র। নাবিকেরা হারিয়ে যায় চিরতরে।

পরের দিন সকালে ঝড় থেমে সূর্য উঁকি দিল। সেই ভাঙাচোরা জাহাজে দেখা গেল, ছয়জনের এক পরিবার রয়ে গেছে। বাবা-মাসহ গোটা এক সুইস পরিবার। ওদের চোখের সামনেই এক সুন্দর দ্বীপ। দ্বীপে পৌঁছানোর জন্য নিজেরাই জাহাজের বিভিন্ন জিনিস দিয়ে চমৎকার ভেলা তৈরি করে ফেলে। এরপর উত্তাল ঢেউ পেরিয়ে একে একে পুরো পরিবার আশ্রয় নেয় দ্বীপটিতে। উদ্ধারের আশা ছেড়ে দিয়ে সেখানেই সংসার পাততে শুরু করে তারা। সভ্যজগত্ থেকে বহুদূরে শুরু হয় তাদের ভীষণ মজার আর দুঃসাহসী জীবন। প্রকৃতির কোলঘেঁষা সেই সুন্দর সবুজ জীবনের সঙ্গে মিশে যেতে চাইলে অবশ্যই পড়তে হবে দ্য সুইস ফ্যামিলি রবিনসন। বইটি জার্মান ভাষায় লেখা হলেও বিভিন্ন ভাষায় এটি অনুবাদ করা হয়েছে। ইংরেজির পাশাপাশি রয়েছে বাংলা অনুবাদও। সেবা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বইটি সংগ্রহ করে পড়ে নিতে পারো। তোমার সামনে খুলে যাবে চমৎকার এক পৃথিবীর দরজা।