নিজের যোগ্যতাকে তুলে ধরো

প্রিয় মনোবন্ধু,

আমি মানসিকভাবে খুবই ভেঙে পড়েছি। জানি না এ চিঠির কোনো জবাব পাব কি না, তবু নিরুপায় হয়ে লিখছি। আমার বাবা একটি স্বনামধন্য সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক। আমি ছোটবেলা থেকে পারিবারিক সমস্যার মধ্য দিয়ে বড় হচ্ছি। সব পরিবারেই সমস্যা থাকে, কিন্তু আমি কোনো স্বাভাবিক সমস্যার মধ্য দিয়ে বড় হচ্ছি না। মধ্যযুগের বর্বরতার মতো বাবা আমার মাকে মারধর করেন। তিনি মাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে বহুকাল ধরে কারণে-অকারণে নির্যাতন করে আসছেন। এমনকি যৌতুকের দাবিও করেছেন। শিশুকাল থেকে আমি এসব দেখে বড় হচ্ছি। তিনি আমাকেও মারধর করেন। আমি দশম শ্রেণির ছাত্রী। আমি কখনোই বাবার সঙ্গে অসম্মানজনক ব্যবহার করিনি। মা ও আমাকে তিনি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। আমার মা চক্ষুলজ্জার ভয়ে এসব সহ্য করে আসছেন। আমিও এ ব্যাপারে কখনোই কাউকে কিছু বলার সাহস পাইনি। আমি মানসিকভাবে অনেক হতাশ। মায়ের কষ্ট আমি আর সহ্য করতে পারছি না। ১৭ বছরের মেয়ের গায়ে হাত তোলার কি কোনো অধিকার বাবার আছে? আমি অন্যায় করেছি এবং এ কারণে তিনি আমার সঙ্গে এমন ব্যবহার করেন, এটা তেমন কিছু নয়। মেয়ে হয়ে জন্মেছি বলে তিনি আমাকে দেখতে পারেন না। এখানে উল্লেখ করতে হয়, একবার আমার সামনেই অন্তঃসত্ত্বা মাকে তিনি নির্মমভাবে মারধর করেন। পরদিনই আমার মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং শিশুটির মৃত্যু হয়। বাবার এসব ব্যবহারে আমি ও মা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। আমার মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মাঝেমধ্যে মনে হয় আত্মহত্যা করি। কিন্তু মায়ের চোখের দিকে তাকিয়ে নীরবে সব সহ্য করছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

ঢাকা, বাংলাদেশ

উত্তর: প্রথমেই মনে রাখবে যে আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়। সব সমস্যার বিজ্ঞানসম্মত সমাধান আছে। মা–বাবার দ্বন্দ্ব ও পারিবারিক পরিবেশে কোনো জটিলতা দেখা দিলে পরিবারের শিশুদের বিকাশে অসুবিধা হতে পারে। এই সময় তোমার সবচেয়ে বড় কাজ হচ্ছে নিজেকে প্রস্তুত করা। তোমার মায়ের প্রতি যে ঘটনাগুলো ঘটছে, সেটার সবচেয়ে বড় প্রতিকার হচ্ছে নিজেকে আগামী দিনের জন্য স্বনির্ভর করা, নিজের যোগ্যতাকে তুলে ধরা। কষ্ট–দুঃখ তোমার হবে, না হওয়াটাই অস্বাভাবিক। সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করে তোমার মায়ের মনে যে কষ্ট হচ্ছে, তোমার মনে যে কষ্ট হচ্ছে, সেটা দূর করার জন্য তোমাদের দুজনেরই মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন। তুমি যেহেতু ঢাকায় থাকো, তাই জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের বহির্বিভাগে যোগাযোগ করতে পারো। আরেকটি বিষয়, তোমার বাবা যেটি করছেন, তা অবশ্যই অন্যায়। তুমি ছোট, তাই এ বিষয়ে তুমি নির্ভরযোগ্য বড় কোনো আত্মীয়ের সাহায্য নিয়ে বাবাকে বোঝাতে পারো যে তিনি যা করছেন, তা ঠিক নয়। আর যদি তোমার মা সম্মত হন, তবে তিনি কিন্তু আইনি সাহায্য গ্রহণ করতে পারেন। তোমার বাবা সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক, তাঁর এমন আচরণ কিন্তু সরকারি চাকরির জন্যও বিপজ্জনক।

আরও পড়ুন