নুলিয়াছড়ির সোনার পাহাড়

লেখক | শাহরিয়ার কবির
প্রচ্ছদ ও অলংকরণ | হাশেম খান
প্রকাশক | প্রতীক প্রকাশনা সংস্থা
প্রথম প্রকাশ | ১৯৭৬

জুন মাসের ঝাঁ ঝাঁ রোদে ঝলসে যাচ্ছে ঢাকার রূপলাল লেনের গোটা পাড়া। আকাশজোড়া এমন গনগনে রোদে কোথাও যাওয়ার উপায় নেই। একরত্তি ছায়া নেই কোথাও, বাতাসও বন্ধ। বাধ্য হয়ে বাড়ির চিলেকোঠায় শুয়ে-বসে বই পড়ছিল আবির আর বাবু। মাত্র কদিন আগেই আবিরের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার ফল বেরিয়েছে। বরাবরের মতোই সে ক্লাসে ফার্স্ট। গ্রীষ্মের দীর্ঘ ছুটি কাটাতে সুদূর আমেরিকা থেকে উড়ে এসেছে আবিরের একমাত্র বন্ধু বাবু। আবিরেরও স্কুল ছুটি। ভেবেছিল দুজন মিলে এই ছুটিতে খুব মজা করবে। কিন্তু শুধু চিলেকোঠায় বন্দী থাকলে কি মজা পাওয়া যায়? সময় আর কাটে না।

ঠিক এ সময়েই সুখের বার্তা নিয়ে জলপাই-সবুজ চিঠি এল নেলী খালার। আবিরের মায়ের ভাষায় যতসব ‘উদভুট্টি কাণ্ড’ করে বেড়ান নেলী খালা। ২৭ বছর বিদেশ-বিভুঁইয়ে কাটিয়ে এখন দেশে ফিরেছেন। কিন্তু আর দশজনের মতো চাকরি না করে শুরু করলেন ব্যবসা। তাও আজ সবজি বিক্রি করেন তো কাল ডিমের কিংবা মুরগির ব্যবসা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সফল হয় না কোনোটাই। এবার উদভুট্টি কাণ্ডের চূড়ান্ত করলেন নেলী খালা। সবাই পইপই করে আপত্তি করলেও কক্সবাজারে নিজেদের অমন চমত্কার বাড়িটা বিক্রি করে দিলেন। তার বদলে মিয়ানমার সীমান্তের একেবারে কাছে নুলিয়াছড়িতে অনেক দিনের পুরোনো জমিদারবাড়ি কিনলেন তিনি। সেখানে নাকি তিনি মোটেল বানাবেন।

চিঠিতে এ বাড়িতেই ছুটি কাটানোর জন্য আবির আর বাবুকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন নেলী খালা। এমন সুদূর রোমাঞ্চের হাতছানির অপেক্ষাতেই যেন ছিল আবির আর বাবু। তাই বাবা-মায়ের অনুমতি নিয়ে নুলিয়াছড়িতে পড়িমরি করে ছুটল দুজন। সেখানে গিয়ে পরিচয় হলো ওদের বয়সী ললি আর টুনির সঙ্গে। ললি আর টুনির মতো পাহাড় আর সুনীল সমুদ্রঘেঁষা জমিদারবাড়িটি দেখে তাদেরও নিমেষেই পছন্দ হয়ে গেল। তবে এলাকার লোকজন বলে বাড়িটি নাকি অভিশপ্ত। একসময় হার্মাদ আর ডাকাতদের আস্তানা ছিল ওই রহস্যময় বাড়ি। লোকজনকে ধরে এনে এখানেই নাকি দেহ থেকে মুণ্ডু আলাদা করত তারা। এখনো আশপাশের জঙ্গলে খুঁজলেই নাকি মড়ার খুলি পাওয়া যায়। আর ভূতের আনাগোনা তো আছেই।

তবে সেখানে তাদের জন্য এর চেয়েও বড় চমক অপেক্ষা করছিল। জমিদারবাড়ির পাশ দিয়ে ছুটে চলা নদীতে কদিন আগেই সোনার গুঁড়ো পেয়েছেন নেলী খালা। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস, আশপাশেই নিশ্চয়ই কোথাও সোনার খনি আছে। শুনে দারুণ এক অ্যাডভেঞ্চারের নেশা চাপল আবির, বাবু, ললি আর টুনির। সোনার খনির খোঁজে শুরু হলো চারজনের রোমাঞ্চকর তল্লাশি।

রহস্যের গন্ধ শুঁকে শুঁকে একদিন পাহাড়ের গহিনে গুপ্তধনের এক গুহায় হাজির হলো তারা। সেখানে ধরা পড়ল ভয়ংকর একদল অপরাধী চক্রের হাতে। অন্তত জীবিত থাকতে তাদের হাত থেকে পালানোর কোনো উপায় নেই। এখন কী করবে তারা? সেই উত্তরটা এখানে বলে বই পড়ার মজাটা নষ্ট করা বোধ হয় ঠিক হবে না। তার চেয়ে বইটি সংগ্রহ করে তুমি নিজেই যোগ দিতে পারো আবির, বাবু, ললি আর টুনিদের শ্বাসরোধ করা রোমাঞ্চকর অভিযানে। শিশুসাহিত্যিক শাহরিয়ার কবিরের লেখা বইগুলোর মধ্যে কিশোর উপন্যাস নুলিয়াছড়ির সোনার পাহাড় সবচেয়ে জনপ্রিয়। বইটি পড়লে নিজেই তার প্রমাণ পাবে একেবারে হাতেনাতে।