পকেটভর্তি পাঠাগার

ছবি: সুমন ইফসুফ | মডেল: অহনা, মোহনা ও তাজ

কখনো কি ভেবে দেখেছ, পাঠাগার বা বইয়ের দোকানে হেঁটে যাওয়ার আগেই তোমার দুয়ারে পৌঁছে গেছে সদ্য প্রকাশিত কোনো বই? কিংবা স্কুলে রাশি রাশি বইয়ের বোঝা না বয়ে বই নিয়ে যাচ্ছ কোনো ব্যাগ ছাড়াই? অথবা তোমার বুক পকেটে শ পাঁচেক বই? এখন এসব অসম্ভব কিছু না। একসময় বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ছাড়া কোথাও এমনটা ভাবা না গেলেও এখন কিন্তু এটি সম্ভব। আজকাল প্রযুক্তির বদৌলতে স্মার্টফোন আর ট্যাব মানুষের হাতে হাতে চলে এসেছে। ফলে জীবনটা হয়ে গেছে অনেক সহজ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেসবুকিং বা ইনস্টাগ্রামে ছবি আপলোড করা ছাড়াও দারুণ সব কাজ করা যায় একটি স্মার্টফোন আর মোটামুটি গতির ইন্টারনেট থাকলেই।

যদিও কাগুজে বইয়ের পুরো স্বাদ তুমি কখনোই ই-বুক রিডারে নাও পেতে পারো; কিন্তু যদি দেখা যায় তোমার ঘরে পর্যাপ্ত জায়গা নেই কিংবা বইগুলো সহজে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যেতে চাও—সে ক্ষেত্রে ই-বই-ই হতে পারে তোমার জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত। এ প্রসঙ্গে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের অনলাইন বইপড়া কর্মসূচি ‘আলোর পাঠশালা’র সমন্বয়ক মেসবাহ সুমন বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তির প্রভাব পাঠককেও আলোড়িত করছে। কয়েক বছরের মাঝেই কাগজের বইয়ের পাশাপাশি ই-বইও বেশ ভালো জায়গা করে নেবে। লেখাপড়া, জ্ঞান-বিজ্ঞান, গবেষণার জগতে এটা আসলে এরই মাঝে জায়গা করে নিয়েছেও। বইয়ের মাঝে আনন্দ, শিক্ষা, জীবনকে গড়ে তোলার স্বপ্নময় জগৎ আছে। হোক সেটা ই-বই বা কাগজের বই।’

ই-বুক রিডার হিসেবে আমাজনের কিন্ডেল বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হলেও সেটি বাংলাদেশে খুব বেশি সহজলভ্য হয়ে ওঠেনি। তার চেয়ে স্মার্টফোন বা ট্যাবে বই পড়ার কাজটি চালিয়ে দিচ্ছে বইপোকারা। দেশে বর্তমানে বেশ কিছু ওয়েবঅ্যাপ বিনা মূল্যে আর স্বল্প খরচে বাংলা বই পড়ার সুবিধা দিচ্ছে। তা ছাড়া ইংরেজিতে পুরো বিশ্বে লাখ লাখ বইয়ের অনলাইন পাঠাগার তো আছেই!

স্মার্টফোনে বই পড়ার জন্য বেশ কয়েকটি অ্যাপ রয়েছে। নিবন্ধন করে বই ডাউনলোড করা থেকে শুরু করে, পড়া, আলোচনা করা, রেটিং দেওয়াসহ অনেক কিছু করা যায় এসবের মাধ্যমে। চাইলে তুমি বন্ধুদের সঙ্গে বই আদান প্রদানও করতে পারো খুব সহজেই।

আলোর পাঠশালা

এটি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের অনলাইন বইপড়া কার্যক্রম। এতে রয়েছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের নিজস্ব প্রকাশনার নির্বাচিত প্রায় পৌনে দুই শ বই। আগ্রহী যে কেউ সদস্য হয়ে কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারবে এবং ডাউনলোড করে বইগুলো পড়তে পারবে। বই পড়ার জন্য রয়েছে পুরস্কারের ব্যবস্থা। প্রতিটি বইয়ের ঝকঝকে পিডিএফ পাওয়া যাবে সাইটটিতে। বর্তমানে স্মার্টফোনের জন্য অ্যাপও রয়েছে আলোর পাঠশালার। ওয়েবসাইট alorpathshala.org

বেঙ্গল ই-বই

বই পড়ার জন্য তৈরিকৃত বিশ্বের প্রায় সব ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও রিডারেই বেঙ্গল ই-বই পড়া যাবে। পিডিএফ, ই-পাব ও মোবি ভার্সনে পাওয়া যাচ্ছে এর প্রতিটি বই। বর্তমানে আড়াই শরও বেশি বই সংগ্রহে রয়েছে বেঙ্গলের এই কার্যক্রমে। তবে বাংলাদেশ ও কলকাতার জনপ্রিয় ও খ্যাতিমান প্রায় সব লেখকের সঙ্গেই চুক্তি হয়ে যাওয়ায় এ বছরের মধ্যেই দুই হাজারের বেশি বাংলা বইয়ের এক অনন্য সংগ্রহশালা হতে যাচ্ছে এটি। ফন্ট পরিবর্তন, লেখার আকার ছোট-বড় করা, ঔজ্জ্বল্য বাড়ানো-কমানো, নাইট মোডসহ একটি মানসম্পন্ন ই-বুক রিডারের প্রায় সব ফিচারই তুমি পাবে বেঙ্গল ই-বই অ্যাপে। বিনা মূল্যে ও কিনে পড়ার সুবিধা আছে এতে। অ্যানড্রয়েড অ্যাপ পাবে প্লে স্টোরে। আইওএস ভার্সন আপলোড হবে শিগগিরই। ওয়েবসাইট bengalboi.com

সেইবই

সেইবই স্মার্টফোনে বই পড়ার জন্য আরও একটি অনলাইন পাঠাগার। এখান থেকে ব্যবহারকারী পছন্দ অনুযায়ী বই সংগ্রহ করতে পারবে। বইগুলো পড়ার জন্য রয়েছে সেইবই অ্যাপ। বিনা মূল্যে অনেকগুলো চিরায়ত বই ছাড়াও এতে রয়েছে সাম্প্রতিক কালে প্রকাশিত বেশ কিছু জনপ্রিয় বই। তবে সেগুলো কিনে পড়তে হবে। অ্যাপটিতে বই পড়া ছাড়াও নির্দিষ্ট বাক্য হাইলাইট করা, বাংলা অভিধানে অর্থ খোঁজা, লেখা ছোট-বড় করার সুবিধা রয়েছে। ওয়েবসাইট sheiboi.com

লেখক বা প্রকাশকের অনুমতি ছাড়াই অনেকে বই স্ক্যান করে অন্যায়ভাবে আপলোড করে। সেগুলোর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে
ছবি: সুমন ইফসুফ

অ্যালডিকো

অ্যালডিকো বুক রিডারের সংগ্রহে রয়েছে প্রায় ১০ হাজার বই। কেউ যদি অন্য কোনো সাইট থেকে নামানো বইও পড়তে চায়, তা-ও সম্ভব এটি দিয়ে। অ্যালডিকো অ্যাপে লেখার আকার বড়-ছোট করা, স্ক্রিনের ঔজ্জ্বল্য বাড়ানো-কমানো, লেখার ফন্ট পরিবর্তন, অভিধানসহ অনেকগুলো আকর্ষণীয় ফিচার আছে। তা ছাড়া বইগুলো সুন্দর করে সাজিয়ে রাখার জন্য রয়েছে ভার্চুয়াল সেলফ। ই-পাব আকারের ইংরেজি বই পড়ার জন্য অ্যাপটি ভালো হলেও বাংলা বইয়ের ফন্টে সমস্যা হতে পারে। অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএসের জন্য অ্যালডিকো অ্যাপ পাওয়া যায়। ওয়েবসাইট aldiko.com

মুনপ্লাস রিডার

মুনপ্লাস রিডারও অ্যালডিকোর মতোই একটি ই-বুক রিডার অ্যাপ। তবে এর ডিজাইনে রয়েছে ভিন্নতা। স্বয়ংক্রিয় পৃষ্ঠা পরিবর্তন করতে পারবে তুমি এই রিডারে। এর অ্যানিমেশনও চমৎকার। তুমি চাইলে অ্যাপটিই তোমাকে বই পড়ে শোনাবে। বিনামূল্যের সংস্করনেও পেয়ে যাবে হরেক রকম থিম, যা ইচ্ছামতো তুমি পরিবর্তন করে ফেলতে পারবে। ওয়েবসাইট moondownload.com

ই-বই পড়া আনন্দের ব্যাপার যদিও, তবে কিছু সতর্কতা মাথায় রাখতে হয়। স্মার্টফোন বা ট্যাব থেকে একধরনের নীল আলো বেরোয়, যা বেশিক্ষণ একনাগাড়ে ব্যবহারে চোখের ক্ষতির কারণ হতে পারে। সে জন্য অতিরিক্ত সময় ই-রিডার ব্যবহার না করাই ভালো। ব্লু লাইট ফিল্টার অ্যাপ ব্যবহার করা যেতে পারে। লেখার ফন্টের আকার প্রয়োজন অনুযায়ী বড়-ছোট করে নিতে হবে। কারণ, খুব বেশি ছোট লেখা পড়তে গেলে দৃষ্টিশক্তির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। স্মার্টফোনের স্ক্রিন খুব ছোট হলে সেটিতে বই না পড়াই ভালো। অনেক সময় লেখক বা প্রকাশকের অনুমতি ছাড়াই অনেক বই স্ক্যান করে অন্যায়ভাবে অনলাইনে আপলোড করা হয়। এর ফলে লেখক বা বইয়ের স্বত্ব্বাধিকারী ক্ষতির মুখে পড়েন। তাই ই-বই পড়ার সময় বইটি অনুমতি নিয়ে প্রকাশিত কিনা, সেটিও মাথায় রাখতে হবে। প্রযুক্তিকে শুধু সময় কাটানোর মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার না করে এর মাধ্যমে ভালো অনেক কিছুই করা যায়। বই পড়ার জগতে তোমাদের সবাইকে স্বাগত। ক্যাপশন মডেল: অহনা, মোহনা ও তাজ, ছবি: সুমন ইফসুফ লেখক বা প্রকাশকের অনুমতি ছাড়াই অনেকে বই স্ক্যান করে অন্যায়ভাবে আপলোড করে। সেগুলোর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে