প্রতিদিন একটি করে বই

আজ ২৫ মার্চ ২০২০, সময় রাত ১১টা ৪৮ মিনিট। করোনা ভাইরাসের জন্য আজ সপ্তম কোয়ারেন্টিন অবস্থায় বাসায় নিরাপদে অবস্থান করছি। এই দিনকাল আমার জন্য খুব চমৎকার যাচ্ছে। বাইরে বেরোতে পারছি না বটে, কিন্তু বাসায় থেকেও খারাপ লাগার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। কেননা, আমার মা-বোন যারা আমার জন্য সব সময় কষ্ট করে, তাদের সঙ্গে সময় কাটানোর খুব সুন্দর সুযোগ হয়েছে। প্রতিদিন একঘেয়েমি স্কুল আর প্রাইভেটের জ্বালায় তাদের সঙ্গে সময় কাটানোর খুব কম সুযোগ হয়েছে। আমি তাদের সঙ্গে বিভিন্ন ঘরোয়া কাজে যুক্ত হয়েছি, বিভিন্ন ঘরোয়া কাজ করা শিখছি। আম্মু আমাকে রান্না করা শেখাচ্ছে, আর এদিকে আপু আমার পড়ালেখার দায়িত্ব নিয়েছে। তাদের সময় অনুযায়ী পড়ালেখা করে অন্য যেকোনো কাজ করলে তারা আমাকে বাধা দেয় না। শুধু একটাই বাধা, বাইরে যাওয়া যাবে না, এমনকি আমি বাইরে যেতে ইচ্ছুকও না। আমি বই পড়ার টার্গেট ধরেছি, যেমন ছুটির এ সময় আমি ২০টি গল্প–উপন্যাস পড়ে শেষ করব। প্রতিদিন একটা করে বই পড়ছি। শুরু করি ঘরে আর শেষ করি বাসার ছাদে মাঠ বরাবর চেয়ার পেতে মনোমুগ্ধকর পরিবেশে। মাঝেমধ্যে ছাদে বসে অতিরিক্ত সময়ে আমি কবিতা লিখি। কবিতা লেখা আমার অন্যতম শখ। ছুটির এ সময়টিতে আম্মু আর আপু বিভিন্ন ঘরোয়া সুস্বাদু খাবার রান্না করছে। এই কোনো দিন সেমাই, কোনো দিন কাস্টার্ড, কোনো দিন সকালে নাশতার বদলে খিচুড়ি। আমি কোনো দিক থেকেই বাসার জীবনকে অসহায় মনে করছি না। এদিকে আমার বন্ধু থেকে দূরে থাকা সত্ত্বেও সামাজিক যোগাযোগ আমাকে তাদের থেকে দূরে রাখেনি। প্রতিদিন ভিডিও কিংবা অডিও কলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। ছুটির এ সময় আমি বাসায় বসে কিছু উৎসাহমূলক কাজ করার চেষ্টা করছি। নিজে বাসায় বিভিন্ন উৎসাহমূলক ভিডিও তৈরি করে ফেসবুকে যেমন সবার মাঝে উৎসাহ ছড়িয়ে দিচ্ছি, তেমনি নিজে উৎসাহিত হচ্ছি। আবার বাইরের বিশ্বের শোচনীয় অবস্থা নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করতে ভুলিনি। সবাইকে করোনা সম্পর্কে ভিডিও তৈরির মাধ্যমে সতর্ক করেছি। সবাই আমাকে খুব উৎসাহ দিয়েছে, প্রশংসা করেছে। আমার এই দিনকাল মোটেও খারাপ যাচ্ছে না, বরং খারাপ পরিস্থিতিকে নিজের আপন অনুকূলে আনতে আমি শিখে গেছি। আমি অনেক কিছু শিখেছি এবং অনেক ভালোবাসা পেয়েছি এই সময়ে।

লেখক: শিক্ষার্থী, আফরোজ খান মডেল স্কুল, ময়মনসিংহ