প্রিয় রম্য বইপত্র

ডমরু চরিত

ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের লেখা পড়ে তোমার মনে হতে পারে সাহিত্যিকেরা সময়ের সীমা পেরিয়ে আসতে পারেন। ডমরু চরিত কতকাল আগের লেখা, অথচ কত আধুনিক!

তোমরা যারা এরিখ রাসপের বিখ্যাত চরিত্র ব্যারন মুনশাউজেনের কথা জানো, তারা ডমরু চরিত পড়েও সেই স্বাদ পাবে। ও রকমই নানা অসম্ভব ও উদ্ভট ঘটনা বইটিজুড়ে। কিন্তু সেসব গল্পের পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্কারকে নিয়ে তিনি যেসব রসিকতা করেছেন, ভাবলেই অবাক লাগে সেসব গ্রহণের মতো মানুষ তখন ছিল কি না। বাঙালি পাঠকদের জন্য অতি অবশ্যপাঠ্য একটি বই।

টেনিদা

ডি লা গ্যান্ডি মেফিস্টোফিলিস বলে কেউ যদি হঠাৎ চেঁচিয়ে ওঠে তোমার আশপাশে, তাহলে ভালো করে দেখে নিয়ো। কেননা, হয় সে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের টেনিদা-ভক্ত, নয়তো টেনিদা নিজেই। কেননা, ওটা তাঁরই বুলি। টেনিদাকে নিয়ে আছে যেমন অনেক ছোটগল্প, তেমনি বেশ কয়েকটা উপন্যাস, কোনোটারই স্বাদ কম নয়। টেনিদা আর ওর তিন সঙ্গী প্যালারাম, হাবলু আর ক্যাবলাকে নিয়ে নানা গপ্পবাজি আর অ্যাডভেঞ্চার দারুণ মনোমুগ্ধকর লাগবে, তোমাদের কাছে এ হলফ করে বলা চলে।

শিবরাম রচনাসমগ্র

শিবরামের গল্পের ধরন নিয়ে বলতে গেলে এককথায় বলতে হয়, গল্পের মূল আনন্দ তাঁর ভাষায়, বাক্যের গাঁথুনিতে। বাংলা ভাষা যে এত রসিক, তা কে জানত? প্রতিটা শব্দ যেন রসগোল্লা—চুইয়ে চুইয়ে যেন রস পড়ছে। পড়তে পড়তে তুমি ভুলে যাবে কী গল্প বলা হচ্ছে—গোগ্রাসে গিলতে থাকবে এই ভাষা-রস। তাঁর লেখায় আছে প্রচুর পান (pun), পান হলো শব্দ নিয়ে মজা করার যে টার্ম, সেটা। প্রতিটা শব্দ নিয়েই তিনি মজা করেছেন, ভেঙেচুরে অর্থ করেছেন নিজের মতো। আর তাঁর এক-একটা গল্পের ঘটনা, কথোপকথন এমন যে বিশ্বাস করাই কষ্ট একজন মানুষ কী করে এত আজগুবি চিন্তা করতে পারে! খুব নির্মম ঘটনাও তিনি এমনভাবে বর্ণনা করেছেন যে হাসতে হাসতে পেট ব্যথা হয়ে যাবে। আবার খুব হাসির একটা ঘটনা পড়ে হেসে নিয়ে হয়তো খারাপ হবে মনটাই।

শ্রেষ্ঠ রম্যরচনা—সৈয়দ মুজতবা আলী

সৈয়দ মুজতবা আলী যে ভীষণ রসিক ছিলেন, তা কে না জানে। তাঁর রসিকতাও খুব উঁচু মানের, যতই আস্বাদন করো না কেন, স্বাদ শুধু বেড়েই চলে। তার বেশ কিছু রম্য প্রবন্ধ নিয়ে তাঁর শ্রেষ্ঠ রম্যরচনা বইটি। আজই সংগ্রহ করতে পারো কি না দেখো।

পরশুরামের সেরা হাসির গল্প

রাজশেখর বসু খুব রাশভারী মানুষ ছিলেন, আর ছিলেন দারুণ মেধাবী। আইন নিয়ে পড়েছেন। পড়েছেন রসায়ন। বিখ্যাত রসায়নবিদ আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের সঙ্গে কাজ করেছেন, অভিধান লিখেছেন। এই লোকটিই যে আবার রম্যগল্প লিখবেন, সেটা অভাবনীয়! কিন্তু তিনি রম্যগল্প লিখে পাঠকদের মনে বিশেষ স্থান অর্জন করেছেন। রম্যগল্পগুলোতেও তাঁর গাম্ভীর্য ধরা পড়ে, কিন্তু সেসবে খোঁজ পাওয়া যায় তীক্ষ বিদ্রূপের ছোঁয়া। পরশুরামের হাসির গল্প শিরোনামে তাঁর অনেক রম্যগল্প একসঙ্গে পাওয়া যায় বইয়ের দোকানে।

বনফুলের শ্রেষ্ঠ গল্প

বনফুল বা বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়ের বেশ কয়েকটা উপন্যাস রয়েছে, যা বাংলা ভাষার মূল্যবান রত্ন। তবে সাধারণের কাছে তিনি সবচেয়ে জনপ্রিয় তাঁর ছোটগল্পের জন্য। গল্পগুলো ব্যঙ্গাত্মক, রসাত্মক ও

বিদ্রূপাত্মক। কিছু গল্পের শেষে চমকাতে হয়, কখনো ভড়কাতেও হয় আবার হাসতে হয় অজান্তেই। বনফুলের গল্পগুলো বনফুলের গল্প সমগ্র নামে বেশ কয়েকটি প্রকাশনীর মোড়কে পাওয়া যায়।

ঘনাদা

বাহাত্তর নম্বর বনমালী নস্কর লেনের ঘনশ্যাম দাসকে যদি তুমি না চিনে থাকো, তাহলে ভারী মুশকিল। তাঁকে চেনা জরুরি, কারণ প্রেমেন্দ্র মিত্রের এই চরিত্রটি ভারি রসিক, ভোজনপটু আর সবচেয়ে বড় কথা ভারি গপ্পবাজ। আর তাঁর গল্পগুলো লাগামছাড়া, কখনো কল্পবিজ্ঞান, কখনো ইতিহাসের কোনো চেনা পটভূমি, কখনোবা দুর্গম কোনো জায়গা, যেখানে যাওয়াই অসম্ভব। আর বলাবাহুল্য, ওসব গল্পের নায়ক সব সময় থাকেন তিনি নিজেই। তিনি তাঁর পাড়ার শিবু, গৌর, শিশির আর সুধীরকে যেভাবে গল্প বলে মনোমুগ্ধ করে রাখেন, তেমনি তোমাদেরও রাখবেন, এটা বিশ্বাস করা চলে।

বাঙালির হাসির গল্প

কবি জসীমউদ্দীন যে ভীষণ রসিকও ছিলেন, তা তাঁর সংগৃহীত বাঙালির হাসির গল্প বইটি পড়লে জানা যায়। গল্পগুলো তিনি সংগ্রহ করেছেন আমাদের দেশের লোকমুখে শোনা নানা গল্প থেকে। তবে তাঁর লেখনীর গুণে তা হয়ে উঠেছে সর্বেসর্বা, অতুলনীয়। গ্রামবাংলার একদম আপন গল্পগুলো এত মধুর করে তিনি তুলে এনেছেন যে বাংলা রম্যসাহিত্যে তাঁর এ কাজটি চিরকাল জ্বলজ্বল করবে।

হুমায়ূন আহমেদ

হুমায়ূন আহমেদ আমাদের বাংলা সাহিত্যের পরশপাথর। উপন্যাস, সায়েন্স ফিকশন, রহস্য, এমনকি রূপকথাতেও তিনি যুগসেরা লেখা লিখেছেন। তাঁর অনেক উপন্যাসকেই রম্যসাহিত্য বলা চলে, তবে তাঁর কিছু কলাম নিয়ে সংকলন বই এলেবেলে ১ দারুণ এক রম্য উপাখ্যান। সব লেখা কিশোর উপযোগী না-ও হতে পারে, তবে লুকিয়ে পড়ে ফেলতে পারো। এ ছাড়া রম্যের ছোঁয়া পাবে তাঁর অসংখ্য লেখাতে। আমার ছেলেবেলা, কিছু শৈশবসহ হুমায়ূন আহমেদের আত্মজৈবনিক রচনাগুলো প্রতিটিই হাসিতে ভরপুর। আর ‘হিমু’ সিরিজের কথা নিশ্চয়ই তোমাদের আলাদা করে বলতে হবে না!

মুহম্মদ জাফর ইকবাল

টুকি ও ঝায়ের (প্রায়) দুঃসাহসিক অভিযান—মুহম্মদ জাফর ইকবালের এ বইটি একদমই অন্য রকম। এটি একটি সায়েন্স ফিকশন, তবে তার চেয়েও রোমাঞ্চকর ব্যাপার এটি একটি রম্য সায়েন্স ফিকশন। দুই চোর পালাতে গিয়ে ভুলে এক মহাকাশযানে চড়ে বসে, সেই মহাকাশযান আবার মহাশূন্যে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল, টুকি এবং ঝাকে নিয়ে মহাশূন্যে নানা গ্রহে সেটা ঘুরেও বেড়ায়। এক-একটা গ্রহে গিয়ে টুকি আর ঝা একেকটা কাণ্ড করে। পড়তে পড়তে হাসি না পেলে বলব, তুমি লোকটা ভারি গম্ভীর তো! আর প্রিয় এই লেখকের সব বই-ই তো তোমাদের পড়া। তবু দস্যি ক’জন, দুষ্টু ছেলের দল, টুকুনজিল, বিজ্ঞানী অনিক লুম্বা, বিজ্ঞানী সফদর আলীর মহা আবিষ্কার বইগুলোর কথা না বললে এই লেখাটাকে ব্যর্থ মনে করবে অনেকেই।