বকাবকি আমার একেবারেই অপছন্দ

আমার বয়স ১৬। দশম শ্রেণিতে পড়ি। খুবই স্বাধীনচেতা। বকাবকি আমার একেবারেই অপছন্দ। মা অথবা আমার কোনো অপ্রিয় শিক্ষক বকা দিলে আমার এমন জেদ হয় যে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। উল্টাপাল্টা কথাও বলে ফেলি অনেক সময়। কিছুদিন আগে আম্মু বকা দিয়েছিল বলে মোবাইলটা আছাড় মেরেছিলাম। প্রায় এক বছর আগে স্কুলে প্রিন্সিপালের সঙ্গে সমস্যা হওয়ায় আমার রোল নম্বর ১ থেকে ৯২-এ দিয়ে দেয়। সেই ঘটনার পর আমি লেখাপড়াতেও একদম অমনোযোগী হয়ে পড়েছি। আমি কীভাবে আমার রাগ কমাতে পারি? আবার আগের মতো মনোযোগী হতে পারি লেখাপড়ায়?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

উত্তর: তোমার উপলব্ধির জন্য ধন্যবাদ। তুমি লিখেছ, তুমি স্বাধীনচেতা, তোমার নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ কম, ভীষণ জেদি। অনেকের সঙ্গেই পারস্পরিক সম্পর্কে অসুবিধা হচ্ছে। লেখাপড়ায় মন দিতে পারছ না। তুমি অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবেই বুঝতে পারছ তোমার এই অনিয়ন্ত্রিত রাগ তোমার আচরণে কীভাবে প্রভাব ফেলছে। যারা অতিরিক্ত আদরে ও অতিরিক্ত শাসনে বড় হয়, তারা অন্যকে সম্মান করে না, ভাবে নিয়ম আমার জন্য নয়। আরও মনে করে—মা-বাবার কর্তব্য সন্তানের দায়িত্ব পালন করা। কিছুতেই যেন তাদের কিছু আসে-যায় না। ঠান্ডা মাথায় সুচিন্তিতভাবে বিবেচনা করে দেখো, সবকিছুরই কিছু নিয়ম, কিছু শাসন থাকেই। পাখি যে আকাশে ওড়ে, সে-ও স্বাধীন নয়, আলো ফুটলেই খাবারের সন্ধানে বেরোয়, সন্ধে হলে নীড়ে ফেরে। যদি বোঝাবুঝি ঠিক থাকে, পারস্পরিক সম্পর্ক স্বতঃস্ফূর্ত হয়, বিশ্বস্ততা তৈরি হয়, দায়িত্ব বাড়ে। সবই সম্ভব যদি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা যায়। আমার মনে হয়, তোমার প্রতিক্রিয়ার ধরনটা যদি পাল্টে ফেলতে পারো, অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তুমি রি-অ্যাকটিভ ভাষা সচেতনভাবে পরিবর্তন করে প্রো-অ্যাকটিভ ভাষা ব্যবহার কোরো। এতে অনেক অসংগতি, জটিলতা দূর হয়ে যাবে। ইতিবাচক প্রকৃতির অধিকারী হতে হলে অভ্যাস করতে হবে—আমি সচেতন থেকে নিজের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংগতিপূর্ণ আচরণ করব, বাইরের পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নয়। তুমি যদি মনে করো জীবনটা আনন্দময়, তাহলে সব নেতিবাচক আচরণ পরিবর্তন কোরো। অর্থাৎ অন্যের দুর্বলতা ও বাইরের পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে, অন্যের ঘাড়ে দোষ না চাপিয়ে, আবেগপ্রবণ ও উত্তেজিত না হয়ে ঠান্ডা মাথায় সচেতনভাবে আচরণ কোরো। আশা করি তুমি উদ্যোগ নেবে এবং সফল হবে।

এই বিভাগে তোমরা তোমাদের মানসিক নানা সমস্যা, যা তোমার শিক্ষক, মা-বাবা বা অন্য কাউকে বলতে পারছ না, তা আমাদের লিখে পাঠাও। পাঠানোর ঠিকানা—মনোবন্ধু, কিশোর আলো, ১৯ কারওয়ান বাজার, ঢাকা। ইমেইল করতে পারো [email protected]-এই ঠিকানায়। ইমেইলে পাঠাতে হলে সাবজেক্টে লিখবে - মনোবন্ধু, তারপর তোমার সমস্যাটি ইউনিকোড ফরম্যাটে লিখে পেস্ট করে দেবে মেইলের বডিতে। নাম, বয়স লিখতে ভুলবে না। তোমার সমস্যা বোঝার ক্ষেত্রে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ।