বোকাই থাকতে চাই আমি!

অলংকরণ : সাদমান মুন্তাসির

২৩ মার্চ ২০১৮। কোচিংয়ে বসে আছি। তখনো এসে পৌঁছায়নি সবাই। একটু পরেই স্যার আসবেন। কোচিংয়ের কেয়ারটেকার উজ্জ্বল আঙ্কেল দেখতে এসেছেন ক্লাসের সবকিছু ঠিকঠাক আছে কি না। তখনই হঠাৎ ক্লাসে ঢুকলেন একজন মধ্যবয়স্ক লোক। চোখেমুখে একধরনের হতাশার ছাপ। আমাদের সবার সামনে দাঁড়িয়ে লোকটি বললেন, ‘তুমাদের সবার কাছে আমার একটা মিনতি আছে।’ উজ্জ্বল আঙ্কেল লোকটাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, ‘এখান থেকে যান। ওরা সাহায্য করতে পারবে না, যান তো!’ হয়তো উজ্জ্বল আঙ্কেলের কাছে অফিস রুমে আগেও এসেছিলেন লোকটি। তবে তাঁর কথায় লোকটি থামলেন না। অপমান হজম করে আবার বলতে শুরু করলেন, ‘আমার একটা মেয়ে আছে তুমাদের বয়সী। ক্লাস এইটে বৃত্তি পাইছে। লেখাপড়ায় খুব ভালো আমার মেয়েটা। ওর ব্রেন টিউমার হইছে। অপারেশন করতি অনেক টাকা লাগবে। তোমরা যে যা পারো, যদি একটু সাহায্য করো!’ লক্ষ করলাম, লোকটি আর কিছু বলতে পারছেন না। প্রাণপণে চোখের পানি আটকানোর চেষ্টা করছেন। আমি আবিষ্কার করলাম, আমার চোখ দুটোও ভিজে আসছে। একমুহূর্তও অপেক্ষা না করে উঠে দাঁড়িয়ে বললাম, ‘আমি সাহায্য করতে চাই।’ ঈদের সালামি থেকে পাওয়া একটা নতুন এক শ টাকার নোট বের করে দিলাম লোকটাকে। আমার এই সামান্য সাহায্যেও লোকটির মুখে কৃতজ্ঞতার হাসি ফুটে উঠল।

কিন্তু আমি লক্ষ করলাম, কিছু কোচিংমেট আমার দিকে এমনভাবে তাকাচ্ছে, যেন আমি বড় ধরনের কোনো বোকামি বা ভুল করে ফেলেছি। পেছন থেকে কে যেন বলল, ‘ও পাগল নাকি?’ আর আমার ভেজা চোখ লক্ষ করে আমার বেঞ্চের মেয়ে দুটি আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করতে লাগল। কোচিংমেটদের এমন আচরণের কারণটা বুঝে উঠতে পারলাম না আমি। কে জানে, হয়তো আমি সত্যিই বোকা! তবে আজীবন এমন বোকাই থাকতে চাই আমি। পৃথিবীতে কিছু বোকা মানুষেরও প্রয়োজন আছে, যারা অন্যের বিপদে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারে।