ব্যাগ ঝুলিয়েছি কাঁধে

বেশ কাজের জিনিস ব্যাগটা একটু অন্য রকম আর রংচঙে হলে দেখায়ও বেশ!
বেশ কাজের জিনিস ব্যাগটা একটু অন্য রকম আর রংচঙে হলে দেখায়ও বেশ!

নতুন বছরের একটি মাস কাটিয়ে ফেলেছি আমরা। সবার হাতে এখন নতুন বই। এই নতুন বইয়ের গন্ধ নিতে সবারই হয়তো ভালো লাগে। তাই, নিজের বইগুলো নতুন রাখা দরকার বছরজুড়ে। বইয়ের ওপরে মলাট দিয়ে ঢেকে নেওয়ার পাশপাশি তাই সঙ্গে রাখতে পারো ব্যাগ। শুধু বই নয়, নিজের সব দরকারি জিনিসই গুছিয়ে রাখতে পারবে এই ব্যাগে। তা ছাড়া, মাথায় সাদা ক্যাপ আর হাতে একটা অচেনা শহরের ম্যাপ (মানচিত্র) নিয়ে বেরিয়ে পড়ার এইতো সময়। ঠিক গানের মতো না হোক, শীতের সময়ে তো ভ্রমণের একটা শিডিউল থাকেই। হোক সে বন্ধুদের সঙ্গে দল বেঁধে বেরিয়ে পড়া বা স্কুল-কলেজের ভ্রমণ। সবখানেই তোমার কাঁধের ব্যাগটা জব্বর কাজে দেবে।

ব্যাগ প্যাকার্সের ব্র্যান্ড ম্যানেজার মাহফুজ রহমান বলেন, ‘কিশোর বয়সের ছেলেমেয়েদের চাহিদায় থাকে উজ্জ্বল রঙের ব্যাগ। এ বছর সাধারণ ব্যাগের বাইরে শিক্ষার্থীরা ব্যাগপ্যাক টাইপের নুতন ব্যাগগুলো বেশি পছন্দ করছে। হালকা আর অল্প জিনিস রাখার জন্য যথেষ্ট জনপ্রিয়তা পেয়েছে এটি। এ ছাড়া, একাধিক চেম্বারের ব্যাগগুলো নিচ্ছে অনেকে।’

 কোথায় কেমন ব্যাগ

 স্কুল-কলেজের জন্য বেছে নিতে পারো একাধিক চেম্বারের ব্যাগ। যেখানে একটা চেম্বারে বই, অন্য চেম্বারে খাতাপত্র রাখা যায়। সামনের দিকে ছোট চেম্বারগুলোতে রাখতে পারো কলম, পেনসিল, জ্যামিতি বক্সসহ অন্যান্য জিনিস। নিজের কোনো দরকারি কাগজ সংরক্ষণের জন্য বেছে নিতে পারো ভেতরের দিকের চেম্বার। অনেকে স্কুলব্যাগেই টিফিনের নাশতা রাখে, সে ক্ষেত্রে টিফিনের বক্সটা আলাদা একটা পলিতে মুড়িয়ে রাখলে ভালো। না হলে খাবারের রসে অনেক সময়ে বই-খাতা নষ্ট হতে পারে। ভ্রমণের জন্য মজবুত, তবে হালকা ব্যাগই বেশি কাজের। অনেক ব্যাগের তলার দিকে ভেজা কাপড় রাখার জন্য আলাদা ওয়াটারপ্রুফ কাপড়ের পকেট থাকে। এখানে ভেজা কাপড় রাখলে ভেতরের কাপড়ের সমস্যা হয় না। তোমরা যারা কাটু‌র্ন পছন্দ করো, তারা নিজের পছন্দের চরিত্রের খোঁজ পেতে পারো ব্যাগে। নানা ধরনের কাটু‌র্নের ছবিযুক্ত ব্যাগ পাওয়া যায় বাজারে। এ ছাড়া, চে গুয়েভারা, ম্যান্ডেলা, বব ডিলানের মতো জনপ্রিয় তারকাদের দেখা মিলবে ব্যাগে। সাধারণত চার ধরনের ব্যাগ বাজারে বেশি প্রচলিত। এর মধ্যে আছে সাধারণ ফেব্রিক, আর্টিফিশিয়াল লেদার, প্যারাস্যুট ফেব্রিক ও জিনস কাপড়। পানির বোতল রাখার জন্য ব্যাগের একপাশে আলাদা নেট পকেট থাকে। এটা দেখেও ব্যাগ কিনেত পারো। কারণ, এখন শীত থাকলেও দুদিন পরেই কাঠফাটা রোদে জলের তেষ্টা পাবে।

যারা একটু স্টাইল পছন্দ করো, তারা ব্যাগের ওপরের দিকে ফিতা বাঁধা ব্যাগ নিতে পারো। এ ছাড়া, ব্যাগের চেন, ওপরের পকেট বা সেপ দেখে ব্যাগ বেছে নিতে পারো। ব্যাগের মধ্যে ল্যাপটপ বা আইপ্যাড রাখার জন্যও আলাদা সেফটিসহ চেম্বার থাকে। দরকার হলে সেটা দেখে নিতে পারো।

 ব্র্যান্ড আছে ব্র্যান্ড নেই!

 দেশের বাইরে চায়না থেকে প্রচুর ব্যাগ বাংলাদেশে আসে। আমাদের দেশেও ব্যাগ তৈরি হয়। নিজের বাজেটের ওপর পছন্দমতো ব্যাগ বেছে নিতে পারবে। ননব্র্যান্ডের ব্যাগের মধ্যে বেশি বৈচিত্র্য দেখা যায়। অল্প টাকায় একটু দেখেশুনে কিনে নিতে পারো তোমার পছন্দের পিঠঝোলা। তবে সে ক্ষেত্রে ব্যাগটা চেক করে নিলে ঠকার সম্ভাবনা কম। আর তোমার বাজেট যদি বেশি হয়, তাহলে চোখ দিতে পারো নানা ব্র্যান্ডের দিকে। ব্র্যান্ডের ব্যাগ কিনতে চাইলে টাকা কিছু বেশি লাগবে, তবে ব্যাগটার নিশ্চয়তা থাকে। এই ব্যাগগুলো বেশি টেকসই হয়। আবার অনেকে ওয়ারেন্টি দিয়ে থাকে। যে কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যাগ ছিঁড়ে গেলে সেটা কর্তৃপক্ষ ঠিক করে দেয়। জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের ব্যাগের মধ্যে আছে উইলসন, হ্যাপার, সেইন্ট ইগল, ক্যামেল মাউন্টেন, রয়েল মাউন্টেন, হেড ইত্যাদি।

 দরদাম

 ব্যাকপ্যাক পাবে নানা ধরনের। তবে এর মধ্যে একদম সাধারণ ব্যবহারের জন্য চিকন জুতার ফিতা দেওয়া ব্যাগপ্যাকে দাম পড়বে ১০০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা পর্যন্ত। আর ভালো ফেব্রিকের ব্যাকপ্যাক পাওয়া যাবে ৪০০ টাকার ভেতরেই। ৩৫০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে কিনতে পারো একাধিক চেম্বারের ব্যাগ। আর একটু ভালো মানের ব্র্যান্ডের ব্যাগের দাম শুরু হাজার প্লাস টাকা দিয়ে।

 যেখানে কিনবে

 ব্যাগ কোথায় পাওয়া যায়, অনেকেই জানো। যেকোনো গঞ্জ থেকে শহরেই ব্যাগের জন্য আলাদ দোকান থাকে। ঢাকাসহ যেকোনো বড় শহরের নিউমার্কেটে ব্যাগ পাবে। আর ঢাকায় নিউমার্কেট ছাড়াও ব্যাগ প্যাকার্স, বসুন্ধরা সিটি, বঙ্গবাজার, মিরপুর, উত্তরা, মালিবাগ, ধানমন্ডির অধিকাংশ শপিং মলেই ব্যাগ পাবে।

ব্যাগের যত্নে

ব্যাগ যেহেতু নিয়মিত ব্যবহার করা হয়, তাই এটা ময়লা হয়ে যায়। যারা অলস, তারা একটু ম্যাটমেটে (কালো বা বর্ণচোরা রং) রঙের ব্যাগ কিনতে পারো। এর সুবিধা হলো, বেশি পরিষ্কার করতে হবে না। তবে নিয়মিত ব্যাগ পরিষ্কার করা দরকার। তাহলে ব্যাগের উজ্জ্বলতা ফুটে উঠবে। ফেব্রিকের ব্যাগ পরিষ্কার করতে নরমাল ড্রাইওয়াশ করে নিতে পারো। অল্প ময়লা হলে ব্যাগ ভিজিয়ে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিলেই চলবে। ময়লার কারণে যদি আসল রংটা ঢাকা পড়ে যায়, তাহলে অন্য ব্যবস্থা। এ ক্ষেত্রে একটু ডিটার্জেন্ট পাউডার দিয়ে ঘষে ধুয়ে ফেললেই চলবে। ব্যাগের চেইন টানার সময় সাবধানে টানতে হবে, না হলে সেটা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ব্লেড বা ছুরি ব্যাগে না রাখাই ভালো। এতে ব্যাগ কেটে যেতে পারে।

ছবি: কবীর শাহরীয়ার

মডেল: রুম্মানা, শাহরিন, তাসনিম ও ইমরান