ভালো পাঠক হওয়ার উপায়

তুমি কি বেলুন ছাড়া বাতাস ধরতে পারো? রূপকথার বই পড়ো, ভালো পাঠক হও, জানতে পারবে
ছবি: খালেদ সরকার

তুমি যদি ভালো মানে উত্তম পাঠক হতে চাও, তাহলে কী করবে? তার আগে চলো জানি পাঠক কে? যে পাঠ করে, সে-ই পাঠক। আর ‘বই’ শব্দটি আরবি ‘ওহি’ আর ফারসি শব্দ ‘বহি’ থেকে উৎপত্তি হয়েছে। ‘ওহি’ অর্থ প্রত্যাদেশ বা জ্ঞানসমৃদ্ধ নির্দেশাবলি। তাহলে শব্দের উৎপত্তি বিচার করলে দেখা যাবে, জ্ঞানতথ্যসমৃদ্ধ বাক্য দ্বারাই বই নামক বস্তুটি তৈরি হয়ে থাকে। সব বইয়ে কিন্তু তা না-ও থাকতে পারে।

আর বইয়ের ইংরেজি হলো ‘BOOK’। এই চারটি অক্ষরের বিশ্লেষণে কী পাই? B for Best, O for output, O for of, K for knowledge। এককথায়, Best output of knowledge। ওই ধরনের বিষয়-আশয় থাকলে পাঠক লাভবান হন, আনন্দের সঙ্গে বই পাঠ পড়ে থাকেন।

বিখ্যাত রাশিয়ান লেখক, অধ্যাপক ভ্লাদিমির নভোকভ পাঠকের ১০টি গুণ নিরূপণ করেছিলেন। এই ১০টির অন্তত চারটি গুণ না থাকলে ভালো পাঠক হওয়া সম্ভব নয়।

গুণ ১০টি এ রকম—

১. পাঠক একটি বুক ক্লাবের সদস্য হবে।
২. পাঠক সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত সম্পর্কে সজাগ হবে।
৩. পাঠক গল্পটির চলচ্চিত্রায়িত রূপ দেখবে।
৪. পাঠকের কল্পনাশক্তি থাকবে।
৫. পাঠক স্মৃতিশক্তিসম্পন্ন হবে।
৬. পাঠক একজন হবু লেখক হবে।
৭. পাঠকের কিছুটা রসবোধ থাকবে।
৮. পাঠক নায়ক অথবা নায়িকার সঙ্গে একাত্ম বোধ করবে।
৯. পাঠক ঘটনা ও সংলাপহীন গল্পের বদলে ঘটনা ও সংলাপযুক্ত গল্প পছন্দ করবে।
১০. পাঠকের একটি অভিধান থাকবে।

তুমি ১০ মিনিট চিন্তা করো। কী করেছ? মনে হবে সব কটিই দরকার। কিন্তু কোনটা আগে জরুরি। তুমি অনেক কিছু পাঠ করো, অনেক কিছু লেখো। কিন্তু তোমার কিছুই মনে থাকে না। তার মানে গোড়াতেই গলদ! স্মৃতিশক্তি বা স্মরণশক্তি একজন ভালো পাঠকের ১ নম্বরের ভালো গুণাবলি। নেপোলিয়ন ‘ওয়াটার লু’ যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর জেনারেলদের কাছে যুদ্ধে পরাজয়ের কারণ জানতে চাইলেন। জেনারেলরা তিন দিন বৈঠক করে ৭২টি কারণ লিপিবদ্ধ করে তাঁকে শোনাতে গেলেন। ‘স্যার, ১ নম্বর কারণ, আমাদের সব গোলাবারুদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। ২ নম্বর কারণ...’ সঙ্গে সঙ্গে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বললেন, ‘থামো, থামো। গোলাবারুদ না থাকলে আর কারণ জানার দরকার নেই।’ তো তোমার যদি স্মৃতিতে কিছুই না থাকে, তাহলে আর গুণাবলি থেকে কোনো লাভ নেই। কাজেই স্মৃতিশক্তিসম্পন্ন হতে হবে। আর স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর কায়দা হলো বারবার পড়তে হবে এবং যেটা স্মরণে রাখতে চাও সেটা লিখতে হবে। লেখাপড়া, পড়ালেখা নয়। মানে, চোখ দিয়ে এবং তোমার স্নায়ু দিয়ে মগজে ঢোকাতে হবে।

তুমি ১০ মিনিট চিন্তা করো। কী করেছ? মনে হবে সব কটিই দরকার। কিন্তু কোনটা আগে জরুরি। তুমি অনেক কিছু পাঠ করো, অনেক কিছু লেখো। কিন্তু তোমার কিছুই মনে থাকে না। তার মানে গোড়াতেই গলদ! স্মৃতিশক্তি বা স্মরণশক্তি একজন ভালো পাঠকের ১ নম্বরের ভালো গুণাবলি। নেপোলিয়ন ‘ওয়াটার লু’ যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর জেনারেলদের কাছে যুদ্ধে পরাজয়ের কারণ জানতে চাইলেন। জেনারেলরা তিন দিন বৈঠক করে ৭২টি কারণ লিপিবদ্ধ করে তাঁকে শোনাতে গেলেন। ‘স্যার, ১ নম্বর কারণ, আমাদের সব গোলাবারুদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। ২ নম্বর কারণ...’ সঙ্গে সঙ্গে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বললেন, ‘থামো, থামো। গোলাবারুদ না থাকলে আর কারণ জানার দরকার নেই।’ তো তোমার যদি স্মৃতিতে কিছুই না থাকে, তাহলে আর গুণাবলি থেকে কোনো লাভ নেই। কাজেই স্মৃতিশক্তিসম্পন্ন হতে হবে। আর স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর কায়দা হলো বারবার পড়তে হবে এবং যেটা স্মরণে রাখতে চাও সেটা লিখতে হবে। লেখাপড়া, পড়ালেখা নয়। মানে, চোখ দিয়ে এবং তোমার স্নায়ু দিয়ে মগজে ঢোকাতে হবে।

ভালো পাঠকের কাছে বইপাঠ হয়ে ওঠে আনন্দের খেলা
ছবি: সাবহানাজ রশীদ

তারপর তোমার কল্পনাশক্তি থাকতে হবে। ‘ধানের খেতে সবুজ বাতাস ঢেউ খেলে যায়’। বাতাস সবুজ হয়? হয়, কল্পনায় দেখতে পারলে হবে। ‘আকাশে হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমায় ঐ’। ঘুমায় নাকি? কল্পনায় দেখো। এরপর রসবোধ থাকতে হবে। এটা না থাকলে কবিতা, গল্প, উপন্যাস পড়ে কোনো মজাই পাবে না। একটা গল্প দিয়ে বোঝাচ্ছি। এক দেশে ছিলেন এক কবিতাপাগল রাজা। কবিতা শুনে অনেক পুরস্কার দিতেন। তো এক চালাক ফাঁকিবাজ কবি গেলেন রাজদরবারে। তাঁর পালা এলে রাজা হুকুম দিলেন কবিতা বলার জন্য। তো কবি বললেন, ‘বিড়াল ক্ষীর খায়।’ রাজা বললেন, ‘তারপর?’ ‘হুজুর এটুকুই আমার কবিতা।’ রাজা থমকে গিয়ে বললেন, ‘এই যে মশাই, কবিতায় কমপক্ষে চারটি চরণ থাকে।’ ‘কেন হুজুর, বিড়ালের চারটি চরণ আছে না?’ রাজা চমকে গিয়ে বললেন, ‘তা তো বুঝলাম। তা কবিতায় তো একটু রস থাকবে।’ ‘বিড়াল ক্ষীর খায়। ক্ষীরে তো রস আছেই!’ কী, হাসছ তো? এটাই হলো গিয়ে রসবোধ।

শেষে একজন পাঠকের বাংলা-ইংরেজি অভিধান থাকবে। শব্দভান্ডার বাড়ানোর জন্য পাঠরত অবস্থায় অনেক অজানা শব্দ পড়া হয়। অর্থ না জানলে অভিধান দেখতে হবে। একটা শব্দ দেখতে গিয়ে পাঁচটি শব্দের অর্থ জানা যায়।

বর্ণিত চারটি গুণ থাকলেই তুমি ভালো পাঠক হওয়ার সনদ পেতে পারো। ভালো পাঠক হওয়া মানেই একজন উদার চিত্তের মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন সমৃদ্ধ মানুষের সৃষ্টি হওয়া।

আমাদের নভোকভ আরও লিখেছেন, পাঠক বই কেন পাঠ করবে? তিনি বলেছেন মাত্র তিনটি কারণে পাঠক বই পড়বে—

১. জ্ঞানার্জনের জন্য
২. আশ্রয় লাভের জন্য
৩. বাস্তব জীবনকে পঠিত বিষয়ের সাহায্যে উত্তরণ ঘটানোর জন্য।

কোনো পাঠক জ্ঞান অর্জন করে। অবসর কাটায়। আবার সে বইয়ের আশ্রয়ে থেকে পৃথিবীর জ্বালাযন্ত্রণা ভুলে অথবা নতুন কিছু জানার আনন্দ-উল্লাসে পাঠের মধ্যে ডুবে থাকে। শিশু ভয় পেয়ে যেমন মায়ের কোলে আশ্রয় নেয়, ঠিক তেমনটি।

এসব কারণে পাঠক বই পড়বে। না করলে পাঠক অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত থাকবে। তুমি এখন চিন্তা করে দেখো, ভালো পাঠক হবে, না মন্দ পাঠক হবে। অবশ্যই ভালো পাঠক, তাই না? তুমি কি বেলুন ছাড়া বাতাস ধরতে পারো? তুমি কি ডিম পাড়তে পারো? রূপকথার বই পড়ো, জানতে পারবে। বই পড়লেই বুদ্ধি বাড়ে, আনন্দ বা মজা বাড়ে। এই কারণে বলি—

‘পড়িলে বই আলোকিত হই
না পড়িলে বই অন্ধকারে রই
এই সহজ কথাটি বুঝবে অবশ্যই’

মডেল: নীলাঞ্জনা, তনিমা ও তন্ময়

(কিশোর আলোর মার্চ ২০১৪ সংখ্যায় প্রকাশিত)