যে সিনেমা প্রকৃতির কথা বলে

ওয়াল-ই
ওয়াল-ই

২৮০৫ সালের পৃথিবী। মাত্রাতিরিক্ত আবর্জনার জঞ্জালে বসবাসের অযোগ্য। মানুষবিহীন সেই পৃথিবীতে বাস করে ছোট্ট এক রোবট ওয়াল-ই। একদিন ওয়াল-ই জঞ্জালের স্তূপের ভেতর আবিষ্কার করে একটা ছোট্ট গাছের চারা, সেটাকে সে নিজের বাসায় আনে। হঠাত্ করে একটু পরেই আকাশ থেকে নেমে আসে একটা স্পেসশিপ, সেই স্পেসশিপ থেকে নেমে আসে ইভ নামের সাদা একটা রোবট। একসময় ওয়াল-ই ইভকে সেই গাছের চারাটা দিতেই ইভ সেটাকে নিজের ভেতর নিয়ে অচল হয়ে পড়ে। হাজার চেষ্টা করেও ওয়াল-ই ইভকে সচল করতে পারে না। একদিন আবার সেই স্পেসশিপটা ফেরত আসে এবং ইভকে নিয়ে ফিরে চলে মাদার-শিপ অক্সিয়ামের উদ্দেশে, স্পেসশিপের বাইরে ঝুলে ঝুলে ফ্রি টিকিটে ওয়াল-ইও চলে যায় তাদের সঙ্গে।

মাইক্রোগ্র্যাভিটি আর স্বয়ংক্রিয় জীবনব্যবস্থায় অক্সিউমে বসবাসরত মানবজাতি তত দিনে হয়ে পড়েছে দুর্বল আর মোটাসোটা, এমনকি তাদের ক্যাপ্টেন ম্যাকেরাও। ইভ গাছের চারা নিয়ে ফিরে আসার পর ক্যাপ্টেন ম্যাকেরা জানতে পারে যে এই গাছের চারার মাধ্যমেই অক্সিউমকে হাইপার-ডাইভের মাধ্যমে পৃথিবীতে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়ে আবার মানুষের বসতি পুনরায় স্থাপিত করা সম্ভব। কিন্তু তাতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় অক্সিউমের রোবোটিক অটোপাইলট অটো, সে কৌশলে সরিয়ে ফেলে গাছের চারাটি। তারপর কী হলো সেটা জানতে হলে অবশ্যই তোমাদের দেখতে হবে পিক্সার অ্যানিমেশনের ওয়াল-ই সিনেমাটি।

এই ওয়াল-ই সিনেমার গল্পটি মাত্রাতিরিক্ত দূষণের ফলে প্রাণীদের বসবাসের অযোগ্য এক পৃথিবীর দৃশ্য সামনে এনে মানুষদের পৃথিবীকে বাঁচাতে এখনই সচেতন হয়ে ওঠার এক নীরব বার্তা দিয়ে গেছে খুবই মজাদার ও আকর্ষণীয়ভাবে, যা দেখে ফুল মার্কস দিতে বাধ্য তুমি।

দ্য লোরাক্স
দ্য লোরাক্স

পৃথিবীতে গাছ না থাকলে কী হবে? একবারও ভেবে দেখেছ কি তোমরা?

গাছবিহীন পৃথিবীর আরেক গল্প ফেঁদেছিলেন বিখ্যাত শিশু-কিশোর সাহিত্যিক ড. সেউস। তাঁর সেই গল্পের নাম ছিল দ্য লোরাক্স। বনের রক্ষক লোরাক্স গাছের কথা বলে, মাছের কথা বলে, প্রকৃতির কথা বলে। পরে ২০১২ সালে তাঁর সেই বইয়ের কাহিনি নিয়ে মুক্তি পায় দ্য লোরাক্স অ্যানিমেশন সিনেমাটি।

সিনেমার টেড নামের ছেলেটি থেনিডভিল নামের যে শহরটিতে বাস করে, তার সবকিছুই কৃত্রিম, প্লাস্টিক আর মেটালে তৈরি গাছবিহীন এক শহর। টেড তার দাদির কাছে জানতে পারে ওয়ানস-লারের কিংবদন্তির কথা যে কিনা পনেরো সেন্ট, একটা পেরেক আর দাদার দাদার দাদার বয়সী শামুকের একটা খোলের বিনিময়ে গাছদের কথা জানায়, শেষ হয়ে যাওয়া সত্যিকারের গাছদের কথা। ধাতব দেয়ালে ঘেরা থেনিডভিলের বাইরের খালি ও অনুর্বর পতিত জায়গায় টেড খুঁজে বের করে ওয়ানস-লারকে। ওয়ানস-লারের কাছে টেড জানতে পারে সত্যিকারের গাছের কথা, তাদের সৌন্দর্যের কথা, সেই গাছদের শেষ পরিণতির কথা। ওয়ানস-লার টেডকে ট্রাফুলা গাছের শেষ বীজটিও দেয়, যাতে সেই বীজটি রোপণ করে আবার ফিরিয়ে আনতে পারে গাছদের। কিন্তু তাতে বাদ সাধে শহরের মেয়র ও’হেয়ার। সত্যিকারের গাছ ফিরে এলে যে তার কৃত্রিম অক্সিজেন বিক্রির ব্যবসা মাঠে মারা যাবে!

তারপর?

সিনেমাটা শেষ করলেই তুমি জানতে পারবে তারপরের গল্প। দেখতে গিয়ে তুমি কখনো খিলখিল করে হেসে উঠবে, আবার পরক্ষণেই ভ্রু কুঁচকে ভাববে গাছেদের প্রয়োজনের কথা।

ওপেন সিজন
ওপেন সিজন

টিম্বারলাইন শহরের বুগ নামের সেই গ্রিজলি ভালুকটার গল্প জানা আছে তোমাদের? বেথ নামের এক মহিলার পোষা ভালুক বুগ। খায়দায় আর পেট বাজিয়ে মজায় মজায় দিন কাটে বুগের। সুখে থাকতে ভূতে কিলায় তত্ত্বের জের ধরেই একদিন বুগের সঙ্গে পরিচয় হয় জঙ্গল থেকে আসা এলিয়ট নামের এক শিংওয়ালা এক হরিণের। তারপর? সে এক কেলেঙ্কারি কাণ্ড, শহরে অঘটন ঘটিয়ে আরাম-আয়েশের জীবন ছেড়ে বুগকে চলে যেতে হয় জঙ্গলে। এদিকে জঙ্গল শিকারের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ায় শিকারিরা বন্দুক নিয়ে হামলে পড়ে বনের জন্তু-জানোয়ারদের ওপর। বনের জন্তুদের একত্র করে বুগ রুখে দাঁড়ায় শিকারিদের বিরুদ্ধে। এই দুর্দান্ত মজার সিনেমাটির নাম ওপেন সিজন।

অন্যগুলোর মতো এই সিনেমাতেও উঠে এসেছে প্রকৃতি বাঁচানোর, বন বাঁচানোর কথা।

ফার্নগালি  দ্য লাস্ট রেইন ফরেস্ট
ফার্নগালি দ্য লাস্ট রেইন ফরেস্ট

এর বাইরেও ফার্নগালি : দ্য লাস্ট রেইন ফরেস্ট সিনেমাটা দেখলেও তুমি স্বাদ পাবে প্রকৃতির। বাম্বি, হ্যাপি ফিট, এপিক, রিও, ওভার দ্য হেজ সিনেমাগুলোর ভেতরেও রয়েছে প্রকৃতি বাঁচানোর প্রয়োজনীয়তার গল্প। চাইলে এগুলোও দেখে নিতে পারো।

প্রকৃতিতে আমাদের বাস,  প্রকৃতি দূষিত হলে, গাছ না থাকলে আমরাও টিকে থাকতে পারব না। এই বার্তা নিয়ে দিন দিন এ রকম আরও মজার সিনেমা তৈরি হয়েছে, নিত্যদিন হচ্ছে। এই সিনেমাগুলো শুধু প্রকৃতি বাঁচানোর ভারী কথাই বলে না, সঙ্গে দেয় পূর্ণ বিনোদন, যা দেখে তুমি হাসবে, আনন্দ পাবে এবং ভাবতেও বাধ্য হবে প্রকৃতির সুস্থতার প্রয়োজন নিয়ে।