সাজেদুল করিমের বারোটি হাসির গল্প

প্রচ্ছদ | হাশেম খান
প্রকাশক | বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র
প্রথম প্রকাশ | জানুয়ারি, ১৯৯৫
ভাষা | বাংলা

দুষ্টুমি আর হাসি যদি না থাকত, তাহলে পৃথিবী দুদিনেই খরখরে মরুভূমি হয়ে যেত। এই বেদবাক্যটি মাথায় রেখে গল্প লিখতেন শিশুসাহিত্যিক সাজেদুল করিম। তাই তিনি গল্পে উপদেশের ডালি সাজিয়ে কান ঝালাপালা করতেন না। তার বদলে গল্পকে স্বপ্নময় আর আনন্দময় করার অদম্য আকাঙ্ক্ষায় তিনি দিতে চেষ্টা করেছেন বুদ্ধিদীপ্ত আর প্রণোচ্ছল হাস্যরস। যাতে স্কুলের একঘেয়ে সিলেবাসের বাইরে একটু বিনোদনের খোরাক জোগাড় করে নিতে পারে শিশু-কিশোরেরা। তারই সঙ্গে সৃজনশীল স্বপ্ন বুনতেও শেখে তারা।

ইতিহাস, বিজ্ঞান, জ্যামিতি কিংবা ইংরেজি ভাষা নিয়ে এমন বুদ্ধিদীপ্ত আর হাস্যরসাত্মক গল্পের উদাহরণ বাংলায় বিরল। তার রচনায় ছোটদের দুষ্টুমির বিষয় যেমন আছে, তেমনি আছে দুঃখীদের জন্য মায়া-মমতা আর ভালোবাসাও। শুধু শিশু-কিশোরই নয়, রচনার স্বাদগুণ আর অভিনবত্বের কারণে সব বয়সী পাঠককেই আকর্ষণ করতে পেরেছেন তিনি। কিন্তু দুঃখজনকই বলতে হবে, আরও অনেক কিছুর মতোই বর্তমান প্রজন্মের কাছ থেকে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে সাজেদুল করিমের নাম।

সাজেদুল করিমের জন্ম ১৯১৫ সালে। স্কুলে ছিলেন মেধাবী ছাত্র। সে সময় থেকেই তাঁর লেখার হাতেখড়ি। চল্লিশের দশকেই তিনি বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক হিসেবে পরিচিতি পান। পরবর্তী সময়ে ঢাকার জগন্নাথ কলেজের অর্থনীতির অধ্যাপনার পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের জন্য লিখতে থাকেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা মাত্র ছয়টি। চিংড়ি-ফড়িং-এর জন্মদিনে, দস্যিছেলের দশচক্রে, চেরাপুঞ্জি পলিটিকস, এপ্রিলস্য প্রথম দিবসে, মাসিপিসির অ্যালজেব্রা এবং টুং পাহাড়ে সূর্যোদয়। কিন্তু এ সামান্য কয়টি লেখাকেই বাংলাদেশের শিশুসাহিত্যের অমূল্য সম্পদ বলে মনে করেন সমালোচকেরা। শিশুসাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন বাংলা একাডেমি, শিশু একাডেমীসহ আরও অনেক পুরস্কার। ১৯৯৪ সালের ৯ ডিসেম্বর নিভৃতচারী লেখক সাজেদুল করিম চলে যান না-ফেরার দেশে।

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র থেকে প্রকাশিত সাজেদুল করিমের ১২টি হাসির গল্প বইয়ে আক্ষরিক অর্থেই বাছাই করা ১২টি গল্প স্থান পেয়েছে। সেগুলো হচ্ছে চেরাপুঞ্জি পলিটিকস, উল্টো শার্লক হোমস, উসখুস, অবাক করা বিয়ের প্রেজেন্ট, চিংড়ি-ফড়িং-এর জন্মদিনে, প্যারালাইসিস, এপ্রিলস্য প্রথম দিবসে, ষাঁড়ান্তর, জ্যামিতি কষে লিচু খাও, ক্যাটস স্লিপ, তিন অঙ্কে সমাপ্ত ও কর্নওয়ালিস। সাজেদুল করিমের গল্পের ধরন কেমন তা তো আগেই বলে দিয়েছি। তাই এখানে গল্পগুলোর কোনোটিরই কাহিনি বলছি না। তার চেয়ে নিজেই বইটি সংগ্রহ করে একবার পড়ে দেখো। তোমাকে হতাশ হতে হবে না, এটুকু চোখ বন্ধ করেই বলা যায়।