শ্রাবণে বাদল

অলংকরণ: মুগ্ধ

অত্যধিক মানুষের ভারে বুড়িয়ে যাওয়া এই শহরে শ্রাবণে যখন বাদল নামে, হালকা বাতাসের দুলুনিতে মন চলে যায় একেবারে ঢাকার বাইরে, বহুদূরের শৈশবে। এই শহরে এত মানুষের ভিড়, যেখানে দাঁড়ানোর স্থান নেই, সেখানে তো হাঁটার জায়গার বড়ই অভাব। আকাশ যখন খুবই বিষণ্ন হয়, প্রস্তুতি নেয় অঝরে কাঁদার। আকাশের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি। আকাশ দেখতে তখন অপরূপ সুন্দর লাগে। পঞ্চেন্দ্রিয়র বাইরের ইন্দ্রিয়টি জাগ্রত হয়। ভাবের উদয় হয় মনে। কিছু লিখতে ইচ্ছা করে, কিন্তু এমন দিনে কী লেখা যায়? পদ্য ছাড়া অন্য কিছু কি মানায়? বৃষ্টির একটানা আওয়াজ কানে ভাসে, কখনো মনে হয় নদীর কলকল ধ্বনি, কখনো তা ডাল–পাতার মর্মর। এমন দিনে বৃষ্টির ঝুমুর ঝুমুর ও শব্দের ঝংকারই শুধু প্রয়োজন। কিন্তু অসহায় আমি কিছু ভেবে পাই না। বৃষ্টির ফোঁটা দেখলে ভুলে যাই দুনিয়ার অন্য সবকিছু। বৃষ্টি সব জায়গাই সুন্দর। প্রবহমান নদীর জলেই হোক কিংবা সবুজ মাঠ অথবা পিচঢালা পথে। বহুবার জরুরি কাজে ঘর থেকে বেরিয়ে বৃষ্টিতে ভিজেছি, কখনোবা কোনো আশ্রয়ে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গুনেছি বৃষ্টির ফোঁটা। বৃষ্টিকে উপভোগের এর চেয়ে ভালো সুযোগ আর হয় না। অবসরের মেঘলা দিনে একটি ছাতা হাতে শূন্য পথে ঘোরাঘুরির চেয়ে বেশি আনন্দ কি আর কোথাও আছে? কিন্তু এই শহর আমার সব কেড়ে নিল। যেখানে আকাশের দেখা পাওয়াই কঠিন, সেখানে উপভোগ করা তো দুরূহ। তবু লুকিয়ে ঝুঁকিয়ে উঁকি দিয়ে বৃষ্টি দেখার চেষ্টা করি। বৃষ্টি সুন্দর, তাই দেখি। বৃষ্টিপূর্ব থমথমে আকাশের সঙ্গে মনের কোথায় যেন একটু মিল পাই আমি।