আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

১৯৯৯: ফ্রান্সের প্যারিসে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেসকোর সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়, একুশে ফেব্রুয়ারি এখন থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

ফাল্গুন মাসের আট তারিখ। বাতাসে বসন্তের ছোঁয়া। এমন এক সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ উত্তাল হতে থাকে ছাত্রদের আনাগোনায়। উদ্দেশ্য—মায়ের ভাষা বাংলা ছেড়ে কোনোভাবেই ভিনদেশি কোনো ভাষা রাষ্ট্রভাষা হতে পারে না। এই দাবিতে ডাকা হরতালে সাড়া দেওয়া।

বলছিলাম বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের কথা।

১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে গভর্নর জেনারেল মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা দেন যে উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। সেই থেকে শুরু। এরপর টানা চার বছর বিভিন্ন সময় এ ঘোষণাকে ঘিরে চলে নানা রাজনৈতিক অস্থিরতা। তবে এই অস্থিরতা গর্জনে রূপ নেয় ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি। সেদিন পাকিস্তানের নবনিযুক্ত গভর্নর জেনারেল খাজা নাজিমুদ্দিন ঢাকায় এসে উর্দু রাষ্ট্রভাষা হবে বলে ঘোষণা দেন। আর তাতেই জ্বলে ওঠে প্রতিবাদের আগুন। বায়ান্ন সালের আজকের এই দিনে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ হরতালের ডাক দেয়। হরতাল দমন করতে পাকিস্তান সরকার সেদিন ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে। তবে সেই ১৪৪ ধারা গ্রাহ্য না করে প্রতিবাদ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সংগ্রাম পরিষদ।

ছাত্ররা যখন মিছিল নিয়ে ঢাকা মেডিকেলের দিকে অগ্রসর হন, ঠিক তখনই তাঁদের দমাতে অপর দিক থেকে পুলিশ এলোপাতাড়ি গোলাগুলি শুরু করে। মুহূর্তের মধ্যে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারের মতো ভাষাসৈনিকেরা।

ভাষার জন্য যাঁরা নিজেদের জীবন বিসর্জন দিলেন, সেই সব শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ২০০০ সাল থেকে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী এই দিনে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ পালিত হয়।