আম চুরি

আম গাছঅলংকরণ: সব্যসাচী চাকমা

বছর দুয়েক আগের কথা। ঈদ করতে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছি। ঈদের তৃতীয় কি চতুর্থ দিনে আমি আর আপু বিষণ্ন মনে বসে আছি চাচিমার (পাশের বাসার আন্টির) ছাদে। মনোমুগ্ধকর আকাশ পর্যবেক্ষণের পর চোখ পড়ল আমে ভরপুর বিশালদেহী আমগাছটার ওপর। চিন্তার টনক নড়ল আমার অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মনের ডাকে। মনে হলো, গাছ থেকে পাড়া কাঁচা আমের স্বাদ তো আর শহরের কেনা, তা–ও আবার ফ্রিজে রাখা আমে পাওয়া যাবে না। আপুকে বলতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম যে তার উৎসাহ আমার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়; বরং বেশিই হতে পারে।

আরও পড়ুন

যেই ভাবা, সেই কাজ! আমি আর আপু নেমে পড়লাম ঢিল কুড়াতে। দারুণ কিছু ঢিল পেয়েও গেলাম। এখন আম পাড়ার পালা। প্রথম ঢিল মারলাম, মিস করল। পাশ কাটিয়ে গেল দ্বিতীয় ঢিলও। তৃতীয় ঢিল মারতে যাব, ঠিক তখনই নিচ থেকে চাচিমার চিৎকার শুনলাম, ‘এই আম কে পাড়ছে? যেখানে আছিস, ঠিক সেখানে দাঁড়িয়ে থাক। আমি আসছি। আজ তোর একদিন কি আমার একদিন।’ ওনার চিৎকার শুনে আমরা রীতিমতো আঁতকে উঠলাম। তারপর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, লুকিয়ে পড়লাম। (যদিও আমি তিনতলার ছাদ থেকে লাফ দেওয়ার চিন্তা করছিলাম) ছাদটি খুব খোলামেলা থাকায় যদিও লুকানো খুব সহজ নয়। তা–ও আমি আর আপু চোখের আড়ালে থাকা যায়, এমন একটি জায়গায় লুকিয়ে পড়লাম। ততক্ষণে চাচিমা ছাদে এসে গেছেন এবং আমরা আবিষ্কার করলাম যে তিনি আমাদের দিকেই আসছেন। শেষ পর্যন্ত আমাদের পেয়েও গেলেন তিনি। হঠাৎ হাসতে শুরু করলেন চাচিমা। যদিও তিনি খুব হাসিখুশি মনের মানুষ, কিন্তু তখন তাকে খুবই ভয়ংকর লাগছিল। তিনি বললেন, ‘আম পাড়ছিলে বুঝি? পাড়ো, পাড়ো। কোনো সমস্যা নেই।’ আমরা তো আরও ভয় পেয়ে গেলাম। ভাবলাম যে তিনি আমাদের শাসাচ্ছেন। চাচিমা আরও বললেন, ‘আরে, এটা তো তোমাদেরই গাছ। তোমাদের দাদা নিজের হাতে এই গাছ রোপণ করেছিলেন। পাশের গ্রাম থেকে অনেকেই আম চুরি করে নিয়ে যায় বলে চোখ-কান খোলা রাখতে হয়।’ তারপর তিনি আমাদের প্রতীক্ষিত আমটি পেড়ে দিলেন এবং বললেন যে পরেরবার আম খেতে ইচ্ছা করলে ওনাকে অবশ্যই জানাতে। পরে যখন আমটি খেলাম, তখন বুঝলাম যে চুরি করে আনা আমের স্বাদই আলাদা। হোক না সেটা নিজের গাছের!

লেখক: শিক্ষার্থী, অষ্টম শ্রেণি, বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ, চট্টগ্রাম

আরও পড়ুন