আলবার্ট আইনস্টাইনের মৃত্যু

আলবার্ট আইনস্টাইন

আলবার্ট আইনস্টাইনের জন্ম জার্মানিতে। দানিউব নদীর তীরে ছোট্ট ছিমছাম শহর উল্‌ম। রেলস্টেশন রোড–বানহফস্ট্রাসের ২০ নম্বর বাড়ির তৃতীয় তলার ছোট্ট একটি অ্যাপার্টমেন্টে ১৮৭৯ সালের ১৪ মার্চ শুক্রবার পলিন ও হেরমান আইনস্টাইনের প্রথম সন্তান আলবার্ট আইনস্টাইনের জন্ম।

আলবার্ট আইনস্টাইনের স্কুলজীবন শুরু হলো ১৮৮৫ সালের ১ অক্টোবর মিউনিখে বাড়ির কাছের ক্যাথলিক স্কুলে। স্কুলের পড়াশোনার প্রতি তেমন কোনো আগ্রহ সৃষ্টি না হলেও বাড়িতে লেখাপড়ার একটি নতুন পথ খুলে যায় আলবার্টের। মিউনিখ ইউনিভার্সিটির মেডিকেলের ছাত্র ২১ বছর বয়সী ম্যাক্স ট্যালমুডের সঙ্গে ১০ বছর বয়সী আলবার্ট আইনস্টাইনের জ্ঞানবিজ্ঞানের যোগসূত্র তৈরি হয়।

১৮৯৪ সালে আইনস্টাইনের বাবার ব্যবসা লাটে ওঠে। দেউলিয়া হয়ে তাঁকে মিউনিখের পাট গুটিয়ে চলে যেতে হয় ইতালির মিলানে। মা-বাবা আর বোন ইতালিতে চলে গেলেও আইনস্টাইনকে থেকে যেতে হয় মিউনিখের স্কুলে। কিন্তু সেখানে মোটেও ভালো লাগে না তাঁর। একদিন স্কুল থেকে পালিয়ে মিলানে চলে যান তিনি। তাঁর মা-বাবা খুব রেগে যান তাতে। তাঁর বাবা চেয়েছিলেন ছেলেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার বানাতে। কিন্তু আলবার্টের ইচ্ছা দর্শনের শিক্ষক হওয়ার। মা-বাবা অনেক বুঝিয়ে জুরিখের সুইস পলিটেকনিক্যালে পড়ার ব্যাপারে রাজি করান তাঁকে। কিন্তু পলিটেকনিক্যালের ভর্তি পরীক্ষায় ১৮৯৫ সালে পাস করতে পারলেন না আইনস্টাইন। পরের বছর ১৮৯৬ সালে আবার পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি পরীক্ষায় পাস করে সুইস পলিটেকনিক্যালে ভর্তি হলেন আলবার্ট। পদার্থবিজ্ঞানের প্রতি তাঁর ভালোবাসার শুরু এখানেই।

১৮৯৬ থেকে ১৯০০—এই চার বছরের কোর্স পাস করে গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করলেন আইনস্টাইন।

১৯০২ সালে বন্ধু মার্সেল গ্রোসম্যানের বাবার সুপারিশে সুইজারল্যান্ডের রাজধানী বার্ন শহরের পেটেন্ট অফিসে তৃতীয় শ্রেণির টেকনিক্যাল এক্সপার্ট হিসেবে চাকরি পান আলবার্ট আইনস্টাইন। এসময় বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির পেটেন্ট পরীক্ষা করতে করতে নানা রকম নতুন যন্ত্র দেখতে দেখতে বেশ অভিজ্ঞ পরীক্ষক হিসেবে নাম করেছেন তিনি। ১৯০৩ সালে তিনি বিয়ে করলেন তাঁর সহপাঠী বান্ধবী মিলেভা মেরিককে। ১৯০৪ সালে তাঁদের প্রথম পুত্র হ্যান্সের জন্ম হয়। অফিস থেকে ফিরে হ্যান্সকে কোলে নিয়ে বসেন আইনস্টাইন। বাচ্চাকে কোলে বসিয়ে কাগজ–পেনসিল নিয়ে লিখতে শুরু করেন। প্রচণ্ড হট্টগোলের মধ্যেও গভীর মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে পারেন তিনি। অনেক সময় দেখা যায়, কোলের ওপর বাচ্চা কাঁদছে অথচ তিনি গভীর চিন্তায় মগ্ন।

১৯০৫ সালে আপেক্ষিকতা তত্ত্বের বিশেষ সূত্র ব্যাখ্যা করেন। ১৯০৯ সালে জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিলেন তিনি। ১৯১০ সালে তাঁর দ্বিতীয় সন্তান এডওয়ার্ডের জন্ম হয়। ১৯১১ সালে তিনি যোগ দেন প্রাগ ইউনিভার্সিটিতে। ১৯১২ সালে যোগ দেন সুইস পলিটেকনিক্যালে পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে। ১৯১৪ সালে যোগ দেন বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে।

ইউরোপে নাৎসিদের উত্থান ঘটায় আইনস্টাইনকে জার্মানি ছেড়ে আশ্রয় নিতে হয় যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে তিনি প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজে অধ্যাপক হিসেবে কাটিয়ে দেন বাকি জীবন। ১৯৫২ সালে আইনস্টাইনকে ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়। আইনস্টাইন সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। ১৯৫৫ সালের ১৮ এপ্রিল আইনস্টাইনের মৃত্যু হয়।

সূত্র: বিজ্ঞানচিন্তা/ আলবার্ট আইনস্টাইন: সেরা বিজ্ঞানী, প্রদীপ দেব