‘ভয়ং...কর’ রাজ্যে আমার প্রবেশ

ভূতের রাজ্যঅলংকরণ: সব্যসাচী চাকমা

কিশোর আলোর ২০২৪ সালের নভেম্বর সংখ্যায় ‘ভূত রাজ্যে আমার প্রবেশ’ শিরোনামে একটা লেখা দিয়ে বলেছিলাম, ভূতদের আরেকটা শহর পরিদর্শনে যখন যাব, সেই অভিজ্ঞতাও তোমাদের সঙ্গে ভাগ করে নেব। তাই আবার চলে এলাম। চলো, এবারের অভিজ্ঞতাটাও একটু বিস্তারিত বলি।

এবার আমি গেছিলাম ‘ভয়ং...কর’ নামের শহরটিতে। এটা হলো ভূতেদের সবচেয়ে পুরোনো ও অবহেলিত শহর। কোনো উন্নতিই হয়নি এখনো শহরটার। আমিই ভূত সরদারকে বলেছিলাম, ‘গতবার যেহেতু রাজধানী দেখতে গেছিলাম, এবার একটু গ্রাম এলাকাটা ঘুরতে চাই।’

বরাবরের মতোই আমার সঙ্গে দুজন গাইড ছিল। আগেরবার যারা ছিল, তারাই—লম্বু ভূত ও বাচাল ভূত। প্রথমেই একটা বাড়িতে ঢুকলাম আমরা। ভূতদের গ্রামের বাড়ি আসলে কেমন হয়, সেটাই দেখার উদ্দেশ্য আমার! দেখলাম এক বুড়ি মা দূরে বসে হাত নেড়ে তার চামচ, পাতিল ও চুলা নিয়ন্ত্রণ করছেন। সম্ভবত রান্না করছিলেন।

আরও পড়ুন

আমাকে দেখে তিনি উঠে এলেন। আমি যে মানুষ, তা বুঝলেন তিনি। আমাদের সবাইকে যত্ন করে বসালেন। হালকা নাশতা করালেন। বললেন তাঁর দুঃখের কথা। বুড়ো বয়সে মৃত্যু হওয়ায় তাঁকে নাকি ভূতের সনদ দেওয়া হয়নি। পৃথিবীর হালচালও তিনি জানতে চাইলেন। ওখানেই আমার বেশ খানিকটা সময় কেটে গেল।

এরপর আরও কিছু দেখার জন্য যখন বের হলাম। বুড়ি মা তাঁর সেলাই করা একটি রুমাল আমাকে উপহার দিলেন। ওনার ব্যবহারে আমি এত খুশি হলাম যে আমার চোখে পানি চলে এল।

এরপর ঠিক করলাম একটা দোকানে যাব। দোকান থেকে কিছু একটা কিনে বুড়ি মাকে উপহার দেব। তখন বেশ অন্ধকার হয়ে এসেছিল। তাই গাইড দুজনকে সঙ্গে নিয়ে তাড়াতাড়ি দোকানের দিকে গেলাম।

অন্ধকার একটা রাস্তা দিয়ে যখন যাচ্ছিলাম, তখন আমাকে ধরল চার ডাকাত। ভূতদের গ্রামে যে ডাকাত থাকবে, তা আমি কখনো ভাবিনি! আমার সঙ্গে তো কিছুই ছিল না, কিন্তু ওরা গাইড দুজনকে ভয় দেখিয়ে তাদের সবকিছু ব্যাগে ভরে ফেলল। আমি তাদের কিছু দিতে পারছি না বলে তারা আমাকে মারধরের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তখন আমার দুই ভীতু, অকর্মণ্য গাইডের মধ্যে একজন মিনমিনিয়ে বলল, ‘ডাক্কু ভাতি (ভূত+ভাই=ভাতি), ইনারে ছাইড়ে দ্যান। ইনি “অতিথি”।’

আরও পড়ুন

তখন ডাকাতগুলো বুঝল যে আমি মানুষ। সঙ্গে সঙ্গে তারা আমাদের মুক্ত করে দিল! তারা অতিথিকে কখনো অসম্মান করবে না।

শেষমেশ আমি যখন বুড়ি মায়ের জন্য একটা চাদর কিনলাম, আমার ফেরার সময় হয়ে গেল। চাদরটা গাইড দুটোর হাতে দিয়ে হয়তো বলতে পারতাম যেন তারা বুড়ি মাকে সেটা দিয়ে দেয়। কিন্তু আমি আসলে নিজের হাতেই ওটা দিতে চাচ্ছিলাম! তাই দুই গাইড ভূতকে বিদায় জানিয়ে রুমাল আর চাদর হাতে পৃথিবীতে ফিরে এলাম।

আমি চাদরটা বুড়ি মাকে দিতে আবার সেই এলাকায় যেতে চাই। দেখি ভূত সরদার রাজি হয় কি না! যদি সে রাজি হয়, তাহলে হয়তো সেই গল্পও তোমাদের সঙ্গে ভাগ করে নেব। তোমরা কি তা চাও?

লেখক: শিক্ষার্থী, সপ্তম শ্রেণি, ওয়াইডব্লিউসিএ উচ্চমাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, ঢাকা

আরও পড়ুন