শেষ পাতা

অলংকরণ: সব্যসাচী চাকমা

১২ বছর ধরে চেনা সেই ঘণ্টাধ্বনি, ভাঙা বেঞ্চ, জানালার ফাঁক থেকে আসা আলো আর বন্ধ দরজার পেছনের ফিসফাস জীবনের ছন্দ হয়ে উঠেছিল। আজ মনে হচ্ছে, এই ছন্দে বিদায়ের সুর বাজছে।

স্কুলে আমার খুব বেশি বন্ধু ছিল না। দু-একজন মাত্র। কিন্তু তাদের ঘিরে আমার স্কুলের সব মজার স্মৃতি। একদিন ক্লাস শেষে বন্ধুরা মিলে একসঙ্গে বসে গল্প করছিলাম। জানালার পাশ দিয়ে আসা বিকেলের রোদটা যেন আমাদের হাসিগুলোকে আরও রঙিন করে তুলেছিল। সেই হাসির আওয়াজ এখনো আমার কানে বাজে।

এই স্কুলে আমি সবকিছু পেয়েছি—কষ্টের স্মৃতি, রাগের গল্প, আনন্দের মুহূর্ত, আরও অনেক কিছু।

আগেই বলেছি, আমার খুব বেশি বন্ধু হয়নি কখনো, দু-একজন ছাড়া। বেশির ভাগ সময় একাই থাকতে হয়েছে। তবু এই দু-একজন বন্ধুকে নিয়েই আমার জীবনের অনেক সুন্দর গল্প। কোনো ছোট বিষয় নিয়ে হাসাহাসি, স্কুলের অনুষ্ঠানের প্রস্তুতির সময় নিজের ছোটখাটো ভুলের জন্য শিক্ষকের বকা খাওয়া, কিংবা একদিন অঙ্ক ক্লাসে বন্ধুর চোখে চোখ পড়ে হেসে ওঠা—সবই এখন মনের কোণে জমে থাকা দারুণ স্মৃতি।

নবম শ্রেণির বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠানে আমরা সবচেয়ে বেশি মজা করেছি। সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্তগুলো কাটিয়েছে সেদিন। মনে হয়েছে, আমাদের এই বন্ধন কোনো দিন ভাঙবে না। কিন্তু জানি, সময় আমাদের আলাদা করে দেবে।

এই শেষ বছরটা যেন একটু আলাদা। মনে হয়, প্রতিদিন নিজের জায়গায় কিছু স্মৃতি রেখে যাচ্ছি। এই স্কুলের মাঠ, ক্লাসরুম, জানালার ধারে বিকেলের আলো—এসব জীবনের গল্পে আর কোনো দিন ফিরে আসবে না। কিন্তু এই স্মৃতিগুলো যেন আমার জীবনের পাথেয়। আজ বিদায় নিলেও এই স্মৃতিগুলো আমাকে জীবনের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।

‘চেনা মাঠ, পুরোনো বেঞ্চ, স্মৃতির ডালি,

স্কুলজীবনের গল্প মন ভাসায় চলতি কালি।’

তবু একটি বিষয় আমি শিখে গিয়েছি—স্কুলের সব স্মৃতি, সুখ কিংবা দুঃখের, সবকিছুই আমাকে শক্ত করেছে। এই স্মৃতিগুলো সারা জীবনের জন্য আমার হৃদয়ের খাতায় লেখা থাকবে।

‘বিদায় বলে চলে গেলেও এই স্কুলের স্মৃতিগুলো কি সত্যিই আমাকে ছেড়ে যাবে?’

লেখক: দশম শ্রেণি, মির্জা আহমেদ ইস্পাহানী উচ্চবিদ্যালয়, চট্টগ্রাম

আরও পড়ুন