তুরস্কে গিয়ে বাংলাদেশি হিসেবে গর্বিত হলাম যে কারণে

২০২৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ভয়াবহ এক ভূমিকম্প তুরস্কে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে। এই ভূমিকম্পে বহু মানুষের মৃত্যু হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশটির অর্থনীতি। এই দুর্যোগের মাত্র দুই সপ্তাহ পর পরিবারের সঙ্গে আমি তুরস্কে ঘুরতে যাই। ভূমিকম্পের কবলে পড়ার ভয় ছিল। তবু ৯ দিনের এই ভ্রমণে অনেক আনন্দ করেছি। সুন্দর সুন্দর জায়গায় ঘুরেছি। তবে এর বাইরে ঠিকই দুঃখের আভাস পেয়েছি।

একদিন আমরা গিয়েছিলাম ধ্বংস হয়ে যাওয়া ট্রয় নগরী ঘুরতে। হোমারের বইয়ে পড়েছি ট্রোজান যুদ্ধের কথা। ট্রয় নগরী ছিল ট্রোজান যুদ্ধক্ষেত্র। এখানে দাঁড়িয়ে সে কথাই মনে পড়ল। ট্রয় বাদেও দেশটি জুড়ে রয়েছে বেশ কিছু প্রাচীন শহরের ধ্বংসাবশেষ। এমনই দুই শহর এফিসাস ও পামুক্কাল। যেখানে বেড়াতে গিয়েছিলাম আমরা। প্রাচীন এই সভ্যতাগুলো ধ্বংসের পেছনে সব সময়ই ছিল ভূমিকম্প। হাজার বছর পরও পরিস্থিতি বদলায়নি। আজও ভূমিকম্প বিপর্যয় সৃষ্টি করে।

আমরা ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা গাজিয়ান্তেপে যাইনি। তবে আমাদের ট্যুর গাইডের বাড়ি ছিল সেখানে। তিনি আমাদের সেই ভয়ংকর দিনের কথা বললেন। কীভাবে তাঁর পরিবারের ঘরবাড়ি, দোকানপাট—সব ধ্বংস হয়ে গেছে জানালেন। মর্মান্তিক ঘটনার কথা শুনে আমার দৃষ্টিভঙ্গি একেবারেই পাল্টে যায়। প্রকৃতির কাছে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী মানুষও দুর্বল, তুর্কি বেড়িয়ে আমি সেটাই বুঝতে পারলাম।

ঘোরাঘুরি শেষে ফিরে আসার দিন ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে চোখে পড়ল একটি সাইনবোর্ড। বোর্ডটিতে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত জায়গার ছবির পাশে বাংলায় লেখা ছিল, ‘আপনার ঐক্যবদ্ধতার জন্য ধন্যবাদ।’ জানতে পারি, তুর্কিকে সহায়তা করতে আমাদের দেশ থেকে পাঠানো হয়েছে উদ্ধারকারী দল। সাধারণত বিদেশে গেলেই আমরা সেই দেশকে নিজ দেশের সঙ্গে তুলনা করি। অনেক সময় বাংলাদেশের সমালোচনাও করি। কিন্তু সেদিন সাইনবোর্ডটির দিকে তাকিয়ে আমি বাংলাদেশি হতে পেরে গর্বিত বোধ করছিলাম।

লেখক: শিক্ষার্থী, নবম শ্রেণি, এস এফ এক্স গ্রিনহেরাল্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল