এবার আমাদের স্কুলে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় আমার ভাই জিহাদ ‘যেমন খুশি তেমন সাজো’তে নাম দেয়। কিন্তু ও কী সাজবে, তা-ই ভাবছি দুজন মিলে। এর মধ্যেই আমার আম্মু বলল, ‘ভিক্ষুক সাজলে কেমন হয়?’
আমি সঙ্গে সঙ্গে বললাম, ‘আম্মু এইটাই ভালো হয়, সাজানোও সহজ।’ জিহাদ আপত্তি করল না। ওর ভেতর আবার এসবে জড়তা কম। যথারীতি প্রতিযোগিতার দিন ওকে সাজানো শুরু করলাম। কিন্তু জিহাদ বলছিল যে ওকে নাকি চেনা যাচ্ছে। একটু পরপর বলছিল, ‘কী রে, সারা জীবন কী মেকআপ করলি? নিজেরা সাজার সময় তো দেখি ঠিকই চেহারা বদলে ফেলিস। আর আমাকে একটু ভালোভাবে ভিক্ষুক বানাতে পারছিস না?’ এই শুনে আমি একটা বুদ্ধি আঁটলাম। ওকে যত কিছুই করি না কেন, ভেতর থেকে ভিক্ষুক সাজাতে অন্য রকমভাবে কাজ করতে হবে। আনতে হবে একটা ছন্নছাড়া অসহায় ভাব। তাই ওকে বললাম, ‘যাও, বাড়ির কুকুরটাকে একটু খাবার দিয়ে এসো। আসার পর একদম ভালোভাবে সাজিয়ে দেব।’ ও তেমন কিছু না ভেবে কুকুরটিকে একটু খাবার দিতে গেল। এতেই ঘটে গেল এক অবাক কাণ্ড। আসলে আমি ওকে ভালোই সাজিয়েছিলাম, কিন্তু সমস্যা ছিল ওর মনে। ও কুকুরটিকে যেই না খাবার দিতে গেল, কুকুর শুরু করে দিল তার হৃদয়কাঁপানো ডাক। আমার ভাইকে না চিনে দিল তাড়া। যখন বুঝলাম যে অবস্থা বেগতিক, তখন কুকুরটাকে থামালাম। এবার আমার ভাইয়ের চেহারায় কিন্তু সুন্দর একটা অসহায়ত্বের ভাব ফুটে উঠেছে। কুকুরের তাড়া খেয়ে এখন তাকে একদম সত্যিকারের ভিক্ষুক লাগছে। আমি কিন্তু পরে আর বলিনি যে আমি জেনেবুঝেই কুকুরের তাড়া খাইয়েছি ওকে। কারণ, আমার ওর তাড়া খাওয়ার কোনো ইচ্ছাই নেই।
লেখক: শিক্ষার্থী, দশম শ্রেণি, উদ্দীপন বদর সামসু বিদ্যানিকেতন, বাগেরহাট