গোরস্তানের শেষ প্রহর
রাত তখন দুটো। শহরের সবচেয়ে পুরোনো আর জনমানবহীন গোরস্তানটার পাশ দিয়ে একা হেঁটে যাচ্ছিল আশিস। বন্ধুর দেওয়া একটা বাজি জেতার জন্য তাকে শুধু পাঁচ মিনিটের জন্য গোরস্তানের ভেতরটা ছুঁয়ে আসতে হবে। বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ আর শুকনো পাতার মচমচ আওয়াজ ছাড়া আর কোনো শব্দ ছিল না। চাঁদটা ছিল মেঘে ঢাকা।
গোরস্তানের লোহার ফটকটা ভাঙা। ভেতরে ঢুকতেই পুরোনো, শেওলাধরা সমাধিগুলোর ভিড়ে একটা হিমশীতল বাতাস শরীর কাঁপিয়ে দিল। আশিসের বুক ধুকধুক করছিল। প্রতিটা পুরোনো পাথরের দিকে তাকাতেই তার মনে হচ্ছিল যেন অন্ধকার গর্ত থেকে কিছু একটা উঠে আসছে।
আশিস দ্রুত হাঁটার চেষ্টা করল, কিন্তু পা দুটো যেন মাটিতে আটকে যাচ্ছে। হঠাৎ সে শুনতে পেল, খুব ক্ষীণ, দূরে কেউ যেন কাঁদছে। প্রথমে সে ভাবল, তার মনের ভুল। কিন্তু শব্দটা ধীরে ধীরে কাছে আসতে লাগল, যেন কেউ মাটির তলা থেকে ফিসফিস করে ডাকছে।
ভয়ে আশিস চারপাশে তাকাল। তার চোখ পড়ল একটি অদ্ভুত সমাধির ওপর। সেটি বাকিগুলোর চেয়ে নতুন, কিন্তু তার ওপর কোনো নাম লেখা নেই। কেবল একটি লাল কাপড় জড়ানো। কান্নার আওয়াজটা ঠিক সেই সমাধির নিচ থেকে আসছে বলে মনে হলো।
আশিস পালাতে চাইল, কিন্তু তার পায়ে যেন আঠালো কাদা লেগে আছে। সে দেখল, লাল কাপড়ের নিচ দিয়ে একটি স্যাঁতসেঁতে, সাদা হাত ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছে। হাতটা বড় হতে হতে পুরো সমাধিটাকে আঁকড়ে ধরল। সেই হাতের আঙুলগুলো ভীষণ লম্বা আর নখগুলো তীক্ষ্ণ। কান্নার শব্দটা এখন বিকট চিৎকারে পরিণত হয়েছে।
আশিস জ্ঞান হারানোর আগে দেখল, সেই সাদা হাত ধীরে ধীরে ওপরের দিকে উঠছে যেন কারও গলা টিপে ধরার জন্য।
পরদিন সকালে, বন্ধুরা আশিসকে গোরস্তানের বাইরে অচেতন অবস্থায় খুঁজে পায়। কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হলো, আশিসের গলায় পাঁচটি আঙুলের ছাপ ছিল; আঙুলগুলো অস্বাভাবিক রকম লম্বা। আর তার পকেটে পাওয়া গেল একটা হলুদ হয়ে যাওয়া, পুরোনো দাঁত! কেউ জানে না সেটা কোথা থেকে এল বা কার ছিল। সেই লাল কাপড়ে জড়ানো নামহীন সমাধিটিও আর সেখানে খুঁজে পাওয়া গেল না।
সেই রাতে গোরস্তানে আসলে কী ঘটেছিল? সেই লম্বা আঙুলের ছাপগুলো কার ছিল?
লেখক: শিক্ষার্থী, ষষ্ঠ শ্রেণি, মনিপুর উচ্চবিদ্যালয়, ঢাকা