আমি ও আমার সঙ্গে ক্যাপ্টেন, রাইফেল হাতে পায়ে পায়ে এগিয়ে চলেছি পশ্চিমের ঘরের দিকে। না, এখানেও নেই। তাহলে গেল কোথায় আমাদের অতি মূল্যবান জিনিস? শত্রুপক্ষ আমাদের কাছ থেকে জোর করে আমাদের জিনিস কেড়ে নিয়ে বাড়ির ভেতরেই কোথাও লুকিয়ে রেখেছে। শত্রুপক্ষ বাড়িতে নেই, এই সুযোগে আমরা মিশনে বেরিয়েছি। যে করেই হোক সফল হতেই হবে। কিন্তু কোথাও তো পাচ্ছি না। বাকি আছে ড্রয়িংরুম আর রান্নাঘর। সোফার তলায়, খাটের নিচে, টিভির পেছনে সব জায়গাতেই দেখলাম। নাহ, ড্রয়িংরুমেও নেই। শত্রুপক্ষ যেকোনো মুহূর্তে চলে আসতে পারে, তাই জলদি করতে হবে। এবার রান্নাঘর খোঁজা হবে। রান্নাঘরেও খুঁজলাম কিন্তু নেই। তখনই আমাদের চোখ গেল কিচেন র৵াকের দিকে। ওটা তখনো খোঁজা হয়নি। বুঝলাম বাড়ির কোথাও যখন নেই, তখন নিশ্চয় এটার ভেতর আছে। কিন্তু এটাতে তো তালা মারা। তাহলে উপায়? উপায় একটাই, তালাটা ভাঙতে হবে। ক্যাপ্টেনকে বললাম, ক্যাপ্টেন তপু, একটা হাতুড়ি নিয়ে আসো। সে সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিল। ‘ওকে স্যার।’ হাতুড়ি আনার পর সেটা দিয়ে তালায় বাড়ি মারতে লাগলাম। এতে তালার তো কিছুই হলো না, উল্টো কিচেন র৵াকের গায়ে দাগ হয়ে গেল আর রংও উঠে গেল। মনে মনে বললাম, শত্রুপক্ষ বাড়ি ফিরলে আজ আর আস্ত রাখবে না। হঠাৎ মাথায় একটা বুদ্ধি এল। টিভিতে একবার দেখেছিলাম চুলের ক্লিপ দিয়ে তালা খোলা যায়। বাস্তবে কখনো সেটা প্রয়োগ করিনি, কিন্তু আজ করা হবে। ক্যাপ্টেন কিছু বুঝে ওঠার আগেই দৌড়ে চলে গেলাম শত্রুপক্ষের ঘরে। আমার হাতে ক্লিপ দেখে ক্যাপ্টেনও বুঝে ফেলল কী করতে চাইছি। কী আশ্চর্য! ক্লিপ তালার ভেতর ঢুকিয়ে ঘোরাতেই তালা খুলে গেল। উত্তেজনায় তখন আমাদের কাঁপাকাঁপি অবস্থা। ঝট করে খুলে ফেললাম র৵াকের দরজা। তারপর দেখতে পেলাম আমাদের অতি মূল্যবান জিনিসটা। এই তো সিঙ্গাপুর থেকে ছোট মামার আনা ‘চকলেট বক্স’। আনন্দে দুজনে চিত্কার করে উঠলাম, হুররে...। একসঙ্গে বললাম, আমাদের মিশন চকলেট বক্স সাকসেসফুল। তারপর আমাদের আর দেখে কে, হাপুসহুপুস-গাপুসগুপুস। হঠাৎ দেখলাম, তপুর মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কী হয়েছে? ও তোতলাতে তোতলাতে বলল, ‘ভাইয়া, তোমার পেছনে দেখো।’ আমি পেছনে ফিরে দেখলাম, শত্রুপক্ষ দাঁড়িয়ে আছে। সে যে কখন বাড়িতে ঢুকে, দরজা খুলে আমাদের দেখছে, সেটা আমরা টেরও পায়নি। দেখলাম, তার দুই চোখে রাগের আগুন জ্বলছে। অগত্যা দুজনে হাত তুলে সারেন্ডার করলাম। কারণ এ এমন শত্রুপক্ষ, যার কাছে হাত তুলে সারেন্ডার করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।