বিষণ্নতার নোনা জল
আষাঢ় মাসের শেষ দিন। সারা দিন বৃষ্টি। কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি, আবার কখনো তুমুল বর্ষণ। একটুখানি রোদের দেখা মেলেনি। বিকেলে হালকা দু-এক ফোঁটা বৃষ্টি থাকায় ভেজার সম্ভাবনা নেই, তাই আমি রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ কবরস্থানে চলে গেলাম।
জায়গাটা আমার বেশ পছন্দ। নিরিবিলি। প্রকৃতিঘেরা লেকের সবুজ জলে নানা রকম নাম না জানা মাছের লাফালাফি। গাছের সবুজ পাতার আড়াল থেকে নানা রকম পাখির কিচিরমিচির আমাকে ভীষণ মুগ্ধ করে। পরিচিত-অপরিচিত শত শত মানুষের সমাধি, তাঁদের নীরব নিশ্চুপ ঘুমিয়ে থাকা আমাকে জীবনের পাঠ শেখায়।
একা একা সমাধিগুলোর দিকে তাকিয়ে বাবা না থাকার শূন্যতা, তাঁর নীরব হয়ে ঘুমিয়ে থাকা, দীর্ঘদিন তাঁর সঙ্গে দেখা না হওয়া, তাঁর কাঁধে চড়ে না ঘোরা—কেন যেন ফেলে আসা স্মৃতিগুলো জ্বলজ্বল করে ওঠে। দুটো চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ে বাবা না থাকার বিষণ্নতার নোনা জল। বাবাকে দেখতে খুব ইচ্ছা হয়, এই পৃথিবীতে তাঁর মতো আপন তো কেউ নেই।
কিন্তু তিনি তো পাড়ি জমিয়েছেন পরপারে, যেখানে যাওয়া যায়, তবে ফেরা যায় না।
প্রিয় বাবা, আর মাত্র অল্প কিছুদিন পরই তোমার সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী এসে যাবে। জানো বাবা, লোকে যখন বলে, ‘তোমার বাবা নেই?’ আমার তখন ভীষণ কষ্ট হয়। মাঝেমধ্যে প্রায়ই আম্মুকে দেখি, জায়নামাজে বসে তোমার জন্য প্রার্থনা করেন।
প্রিয় বাবা, আজ বিকেলে যখন কবরস্থানে হাঁটছিলাম, আমার মতোই বাবাহীন এক আপুকে দেখলাম। সে তার বাবার কবরের পাশে বসে কেমন কান্না করছিল। ফুলগাছ থেকে ফুল ছিঁড়ে বাবার কবরের ওপর ছড়িয়ে দিচ্ছিল। তার জন্য আমার ভীষণ মায়া হচ্ছিল।