প্রিয় নানু,
ছোটবেলা থেকে তোমার সঙ্গে কাটানো সময়গুলো আমার কাছে অনেক আনন্দের। শৈশবের স্মৃতির একটা বড় অংশজুড়ে আছ তুমি। তুমিই আমাদের দুই ভাই-বোনকে কোলেপিঠে করে বড় করে তুলেছ। মায়ের মতো ভালোবাসা দিয়েছ। আদর-মমতায় হয়ে উঠেছিলে আমাদের দ্বিতীয় মা, তুমিই নানু।
তোমার সঙ্গে বসে টিভিতে সিরিয়াল দেখা আর সিরিয়ালের চরিত্রদের নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা করার সময়গুলো সুন্দর ছিল। সিরিয়ালের চরিত্র সম্পর্কে তুমি আমার সঙ্গে আলোচনা করতে করতে বলতে, ‘অমুক একটা হাঁদারাম, মাথায় একটুও বুদ্ধি নাই; তমুক মস্ত বড় শয়তান, সারা দিন শয়তানি করে বেড়ায়’। তোমার নানা মন্তব্য শুনে আমি হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতাম। আর কখনো সহমত, কখনো দ্বিমত প্রকাশ করতাম।
তুমি থাকতে আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে। জানালা দিয়ে যখন তোমাকে ‘নানুউউউউউ’ বলে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে ডাকতাম, তখনই জানালায় ছুটে আসতে তুমি। জানালা দিয়ে যখন আমরা খাবার আদান-প্রদান করতাম, তখন তুমি ‘সাবধানে ধরিস, আবার ফেলে দিসনে’ বলে আমাদের সতর্ক করে দিতে। আর যখন তোমাদের বাসা আর আমাদের বাসায় সহজেই যাওয়া-আসা করার জন্য একটা পথ তৈরি করা হলো, তখন আমরা খুব খুশি হয়েছিলাম। কারণ, তারপর থেকেই যখন ইচ্ছা তখনই তোমার বাসায় চলে আসতে পারতাম।
তুমি আমাদের জন্য নানা রকম খাবার রান্না করতে, সেগুলো খেতে অনেক সুস্বাদু হতো। তুমি মুরগির মাংসকে যেভাবে মিষ্টি মিষ্টি করে কোরমার মতো রান্না করতে, সেটা খেতে আমি খুবই পছন্দ করতাম। ডিম ভাজি করে সেই ডিমের যে ঝোল রান্না করতে, তা আমি মজা করে খেতাম। তুমি আমাদের বিভিন্ন ধরনের ডাঁটা রান্না করে খাওয়াতে। শজনেডাঁটা তোমার সবচেয়ে প্রিয় ছিল। নানা রকম শাকসবজি খাওয়া তো তোমার কাছ থেকেই শিখেছিলাম আমি। তোমার প্রিয় সব খাবারই আমার পছন্দের খাবারের তালিকায় যুক্ত হয়েছিল।
নানু, তোমার সঙ্গে আমার আর কোনো স্মৃতি যুক্ত হবে না এই মনের অ্যালবামে। তুমি যে আর নেই, এটা ভাবলেই মন হু হু করে কেঁদে ওঠে। তোমার সঙ্গে কাটানো দিনগুলোর কথা অনেক মনে পড়ে। তুমি আমার রুমে আমার পড়ার টেবিলের যে চেয়ারে বসে নামাজ পড়তে, সে চেয়ারটা আজও আছে, নেই শুধু তুমি! প্রতিদিন ভোরে তুমি যে কোরআন তিলাওয়াত করতে, সে ধ্বনি আর কোনো দিন শুনতে পাব না। তুমি আমাদের জন্য আর কখনো মজার মজার খাবার রান্না করবে না। তোমার সঙ্গে সিরিয়াল নিয়ে তর্কবিতর্ক করা হবে না। সবচেয়ে বড় কথা, আমি আর কাউকে ‘নানু’ বলে ডাকতে পারব না! তোমাকে হারানোর বেদনা আমার হৃদয়কে ভীষণভাবে ব্যথিত করেছে। তুমি যেখানেই থাকো, যেন ভালো থাকো, এটাই আল্লাহর কাছে প্রার্থনা।
ইতি
তোমার নাতনি
নিসর্গ শবনম
একাদশ শ্রেণি, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, ঢাকা