দাদুমণির বিদায়

২০২১ সালের কথা। আমি তখন ক্লাস থ্রিতে পড়ি। জানুয়ারির ৪ তারিখে দাদুর বাসা থেকে বাবার কাছে ফোন এল। দাদুমণি অসুস্থ। বাবা ঠিক করলেন, দাদুর বাসায় যাবেন; কিন্তু একা। (আমরা সাধারণত বছরে দুবার দুই ঈদে দাদুর বাসায় যাই) মায়ের অনেক জোরাজুরিতে বাবা আমাদেরও নিয়ে যেতে রাজি হলেন। পরদিন গিয়ে দেখি, অন্য বড় আব্বু ও ফুফুরাও এসেছেন।

রাতে আমরা যে ঘরে ছিলাম, দুটি বিছানা ছিল সেখানে। একটি বিছানায় আমি, আপু, মা আর এক ফুফু। অন্য বিছানায় ছিলেন একজন বড় আম্মু আর তাঁর ছেলেমেয়ে। অনেক দিন পর দেখা, গল্প করতে করতে বেশ রাত হয়ে গিয়েছিল। অবশেষে ঘুমিয়েছি। হঠাৎ তীব্র ঠান্ডায় আমার ঘুম ভেঙে গেল। দেখি, রুমের দরজা খোলা, ঘরে কেউ নেই। শুধু আমি আর আমার পাঁচ বছরের জ্যাঠাতো ভাই। দূরে কোথায় যেন অনেক মানুষের অস্পষ্ট কথা বলার শব্দ শুনতে পেলাম। তখনই অন্য বিছানায় থাকা ভাইটা ঘুম থেকে উঠে গেল। সে-ও ঠিক আমার মতো চারদিকে দেখতে লাগল। আমাকে দেখে বলল, ‘মা কোথায়?’ আমি তখন কী মনে করে বললাম, ‘মায়ের কাছে যাবা?’ (অথচ তখন আমি নিজেই অনেক ছোট ছিলাম) দাদুর বাসায় আবার তিনজন বড় আব্বু থাকেন।

আরও পড়ুন

গ্রামের বাড়ি, এক ঘর থেকে অন্য ঘরে যেতে একটু হাঁটতে হয়। তারপর ওকে নিয়ে বের হয়ে শুনলাম, সে শব্দটা আসলে দাদুমণির ঘর থেকে আসছে। সেদিকে যতই এগোতে লাগলাম, ততই শব্দটা জোরালো হতে লাগল। একসঙ্গে অনেকের ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ শুনে বুকের ভেতর ধক করে উঠল। গিয়ে দেখি, সবাই সেখানে। সবার চোখে পানি। আমার সব সময়ের সঙ্গী আপুকে আমি খুব একটা কাঁদতে দেখিনি; কিন্তু আপুর চোখেও পানি ছিল তখন। কারণ, আমার দাদুমণি আর নেই।

সেদিন ছিল জানুয়ারির ৫ তারিখ। এখনো সেই রাতের কথা আমার মনে পড়ে। আমি বোধ হয় কখনো সেই রাতের কথা ভুলব না। আমি তোমাকে অনেক মিস করি দাদুমণি। তুমি যেখানেই থাকো ভালো থেকো।

সপ্তম শ্রেণি, পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রংপুর

আরও পড়ুন