আপু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেনি, আমি কিছুতেই মানতে পারছি না
প্রিয় মনোবন্ধু,
আমি অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি। আমরা দুই বোন। আমার বড় আপু আছে। আমার বোন আলহামদুলিল্লাহ অত্যন্ত ভালো। সে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ–৫ পেয়েছে। ২০২২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে আপু। ও প্রথমে ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজের তিতুমীর কলেজে সুযোগ পায়, সেখানে ভর্তি হয়। কিছুদিন পর আপু গুচ্ছভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। পরে অন্যান্য পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে কোথাও সুযোগ পায়নি। ২০২৩ সালে আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য মেসেজ পায় আপু। তবে ও দ্বিতীয়বার মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে গিয়ে আর যশোরে ভর্তি হতে যায়নি। কিন্তু দ্বিতীয়বার আর কোথাও সুযোগ পায়নি আপু। এটা নিয়ে আমার আর আপুর মধ্যে প্রায়ই কথা–কাটাকাটি হয়। কারণ, আমার আপুর সব বান্ধবীই ভালো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেলে পড়ে। তাদের ভাইবোনদের সঙ্গে আবার আমি পড়ি। কিন্তু তাদের সামনে গেলে আমার নিজেকে ছোট মনে হয়। কারণ, সবাই তাদের কাছ থেকে তাদের বড় বোনের ভর্তি পরীক্ষার গল্প শোনে। আমার খুব কষ্ট হয়। আমি জানি, আপু আমার কথায় কষ্ট পায়। কিন্তু আমি নিজেকে সামলাতে পারি না। আমি রাতে একা একা কান্না করি। আমার শুধু মনে হয়, যদি আপু যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতো। ঘটনাটা আমি কিছুতেই মানতে পারছি না। আমি এখন কী করব? আমি খুবই হতাশাগ্রস্ত। আমার শুধু মনে হয়, আপু যদি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারত। এখন আমার করণীয় কী?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
মনোবন্ধু: বাহ্। তুমি তোমার বড় বোনকে নিয়ে চিন্তা করছ, এটি অসাধারণ। কিন্তু মনে রাখবে, প্রতিষ্ঠানের ভালো–মন্দের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, নিজের আত্মবিশ্বাস আর লক্ষ্য অর্জনের জন্য ধৈর্য ধারণ করা। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ই ভালো বা খারাপ নয়। তাই যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছানোটাই জরুরি। আবার তোমার বড় বোনের মনের অবস্থাটাও বোঝার চেষ্টা করবে। হয়তো তিনি নিজেই খানিকটা হতাশ অবস্থায় আছেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে কথা–কাটাকাটি করলে বা অন্যদের সঙ্গে তুলনা করলে তাঁর মন আরও বেশি খারাপ হতে পারে। তাই তাঁকে সাহস দেওয়া আর তাঁর পাশে থাকাটা তোমার জন্য বেশি জরুরি। তোমার বোনের বর্তমান অবস্থা কোনো ব্যর্থতা নয়। হয়তো কোনো ভিন্ন পথের সূচনা। তোমার আপুর সঙ্গে আন্তরিক আর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখো, তাঁকে কাঙ্ক্ষিত প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে উৎসাহিত করো। একদিন দেখবে তোমার আপু নিজেই বলছেন, আমার ছোট বোনই আমার সব সফলতার প্রেরণা। সেই দিনের অপেক্ষায় থাকো।
কারও সঙ্গে আপুর তুলনা করবে না। নিজের পড়ালেখাও ঠিকমতো চালিয়ে যাও আর নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ঠিকমতো সাজাও। তোমার ও তোমার আপুর জন্য শুভকামনা।