আমার স্কুল এখন দিয়াবাড়িতে

ফল প্রকাশের পর উত্তরায় অবস্থিত মাইলস্টোন কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস। ঢাকা, ২৬ নভেম্বরছবি: সংগৃহীত

২০২১ সালের শেষে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে। স্কুল খুলছে। তখন আমি নবম শ্রেণিতে। বলতে গেলে বছরটা মুঠোফোনে কাটিয়ে দিয়েছি। অনলাইনে ক্লাস, অনলাইনেই সময় কাটানো। এমন সময় জানতে পরলাম, আমাদের ক্লাস শুরু হবে। এখন থেকে স্কুলের মূল ক্যাম্পাস দিয়াবাড়িতে আমরা ক্লাস করব। এই খবর শুনে আক্ষরিক অর্থে আমার বত্রিশটা দাঁত বের হয়ে গেল। সেই স্বপ্নের দিয়াবাড়ি, যেখানে বছরে অন্তত একবার যাওয়ার জন্য আমার প্রাণ কাঁদে!

দিয়াবাড়ি ক্যাম্পাসে যখন প্রথম যাই, তখন আমি ছিলাম আস্ত বোকা। সেদিন ছিল ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নেওয়ার দিন। ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য অন্য এক স্কুলে যেতে হবে। কথা ছিল আম্মু নির্দিষ্ট সময়ে দিয়াবাড়ি ক্যাম্পাসে থাকবে। আমাকে নিয়ে বাসায় ফিরবে। ভ্যাকসিন নিয়ে বের হওয়ার পর মনে পড়ল, হায় হায়! আম্মু কোথায় দাঁড়াবে, সেটাই তো ঠিক করা হয়নি! কী আর করা। স্কুলে ফিরে আম্মুকে খুঁজতে বের হলাম, কোথাও পেলাম না। এদিকে আমার শ্রেণিশিক্ষককে যে বলব আম্মুকে ফোন করতে, তা–ও সম্ভব না। আমি বুঝলাম, যে বিল্ডিংয়ে আমার ক্লাস হওয়ার কথা, সেই বিল্ডিংটাই হারিয়ে ফেলেছি! নিজেকে আইনস্টাইন মনে হলো। কারণ, আইনস্টাইন নাকি নিজের বাসার ঠিকানা ভুলে যেতেন।

সেই বোকা আমি, যে কিনা দিয়াবাড়ি ক্যাম্পাসের ভেতরই হারিয়ে যেত, সে এখন রোজ একা বাসায় ফেরে। দিয়াবাড়ি ক্যাম্পাস শুধু লেখাপড়ার জন্য নয়, আমাকে বাস্তব জীবনের জন্যও তৈরি করেছে।

দিয়াবাড়ি ক্যাম্পাসের প্রতিটা দিন স্বপ্নের মতো। একেক দিন নতুন অভিজ্ঞতা। করোনাকালের আগে মোটামুটি ভালো ছাত্রী ছিলাম। তবে ওই সময় বইয়ের সঙ্গে খানিকটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়ে যাওয়ায় আমার গ্রেড ক্রমশ কমতে লাগল। একপর্যায়ে মনে হতো, আমি বোধ হয় আর কখনো ভালো ফল করতে পারব না। আমার অনেক সৌভাগ্য, এই সময় আমি এমন কিছু বন্ধু পেয়েছি, যারা প্রতিনিয়ত আমাকে প্রেরণা জুগিয়েছে। রোজ বলত, ‘তুই পড়লেই পারবি। এখনো দেরি হয়ে যায়নি। পড়াটা চালিয়ে যা!’

আমি ওদের কাছে কৃতজ্ঞ। ওদের বলব, ‘তোরা না থাকলে আমি আজ কোথায় থাকতাম? আমি হয়তো মুখে বলি না। তবে আমি তোদের খুব ভালোবাসি।’

আর মাত্র কয়েক মাস। তারপরে বিদায় জানাতে হবে প্রিয় স্কুলকে। এত বড় কবে হয়ে গেলাম, কে জানে। মাঝেমধ্যে ভাবি, বড় হওয়া মানে কী? যেই স্কুলে কাঁদতে কাঁদতে ঢুকেছিলাম, সেই স্কুল থেকে কাঁদতে কাঁদতে বের হওয়ার নামই কি বেড়ে ওঠা?

লেখক: এসএসসি পরীক্ষার্থী ২০২৩, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উত্তরা, ঢাকা