যেভাবে করবে ফিফথ রুট

ফিফথ রুট আসলে কী জিনিস? এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে আরও কিছু জিনিসের সঙ্গে পরিচিত হতে হবে। যেমন বর্গ, ঘন, বর্গমূল ও ঘনমূল। একেক করে পরিচিত হয়ে তারপর আমরা ফিফথ রুটে যাব। তা না হলে ফিফথ রুট সহজে বোঝা যাবে না।

প্রথমে আসি বর্গে। কোনো সংখ্যাকে সেই সংখ্যা দিয়ে গুণ করলেই বর্গ করা হয়। যেমন ২-এর বর্গ মানে ২ × ২ = ৪। আবার ৩-এর বর্গ মানে ৩ × ৩ = ৯। একইভাবে ৭-এর বর্গ মানে ৭ × ৭ = ৪৯। বর্গকে ইংরেজিতে বলে স্কয়ার বা পাওয়ার। বাংলায় একে ঘাতও বলা হয়। একে সংখ্যার মাথার ওপরে ছোট করে বসানো হয়। যেমন ৪-এর বর্গ বোঝাতে চাইলে লিখতে হবে ৪২। আর ৪২ = ৪ × ৪ = ১৬।

ঘন মানে কোনো সংখ্যাকে ওই সংখ্যা দিয়ে ৩ বার গুণ করতে হবে। যেমন ২-এর ঘন মানে ২ × ২ × ২ = ৮। ঘনকে ২৩ আকারে প্রকাশ করা হয়। আসলে কোনো সংখ্যার ওপর পাওয়ার বা ঘাত যত থাকবে, মূল সংখ্যাটিকে ততবার গুণ করতে হবে। যেমন এখানে ২-এর পাওয়ার ৩, তাই ২-কে ৩ বার গুণ করলাম। তাহলে ৫-এর ঘন বা ৫৩ = কত হবে? হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছ। ১২৫ হবে। কারণ ৫-কে তিনবার গুণ করতে হবে। অর্থাৎ ৫ × ৫ × ৫ = ১২৫

এখন বুঝতে হবে বর্গমূল ও ঘনমূল। বর্গমূল হলো বর্গের বিপরীত। তেমনি ঘনমূলও ঘনের বিপরীত। মানে তুমি কোনো সংখ্যাকে ওই সংখ্যা দিয়ে গুণ করলে পাবে বর্গ। যেমন ৫২ = ২৫। এখানে ৫-এর বর্গ করে পেয়েছ ২৫। আর ২৫-এর বর্গমূল করলে পাবে ৫। অর্থাৎ ঠিক উল্টো। একে বলে রুট করা। তাহলে ২৭-এর ঘনমূল কত হবে? এটা বের করার জন্য তোমাকে খুঁজে বের করতে হবে, কোনো সংখ্যাকে ৩ বার গুণ করলে ২৭ হয়। হ্যাঁ, ৩-কে তিনবার গুণ করলে হয় ২৭। অর্থাৎ ২৭-এর ঘনমূল ৩।

এবার প্রসঙ্গে ফিরি। ফিফথ রুট কী জিনিস? কোনো সংখ্যাকে ৫ বার গুণ করলে যেটা পাবে, তা হলো পঞ্চম ঘাত। যেমন ২-এর পঞ্চম ঘাত বা ২৫ = ২× ২ × ২ × ২ × ২ = ৩২। আর ৩২-এর ফিফথ রুট হলো ২। এর ভালো কোনো বাংলা হয়তো নেই। তোমরা বোঝার সুবিধার্তে একে পঞ্চমূল বা পঞ্চম ঘাতের মূল বলতে পারো। ইংরেজিতে যেহেতু ফিফথ রুট বলে, তাই আমরা এখানে ফিফথ রুটই বলব।

আশা করি, ফিফথ রুট কী তা তুমি বুঝতে পেরেছ। এখন আমরা শিখব, কীভাবে মুহূর্তের মধ্যে এই ফিফথ রুট বের করা যায়। যেমন ধরো, ১৬ হাজার ৮০৭ একটি সংখ্যা। এর ফিফথ রুট কত হবে? একটা করতে পারো যে প্রথমে আন্দাজে একটা সংখ্যা কল্পনা করে সেই কল্পিত সংখ্যা দিয়ে ৫ বার ভাগ করে দেখতে পারো অথবা কল্পিত সংখ্যাকে পরপর পাঁচবার গুণ করে দেখতে পারো, মূল সংখ্যাটি হয় কি না। যেমন ১৬,৮০৭-এর জন্য আমরা কল্পনায় ৮ নিলাম। এবার পরপর পাঁচবার ৮ গুণ করো। পাবে ৩২ হাজার ৭৬৮, যা আমাদের সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি। তাহলে ৭-কে পাঁচবার গুণ করো। হ্যাঁ, এবার মিলেছে।

বুঝতেই পারছ, এটা সহজ প্রক্রিয়া নয়। মুহূর্তে উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, অনেক বড় সংখ্যা, যেমন ১০ বা ১২ অঙ্কের সংখ্যা তো তুমি সব ক্যালকুলেটরে বসাতে পারবে না। তাহলে সমাধান করবে কীভাবে? সে জন্যই এই সহজ কৌশল শেখা।

কৌশল হলো, যদি কোনো পাঁচ অঙ্কের সংখ্যা হয়, তাহলে ওই সংখ্যার এককের ঘরে যে অঙ্কটি আছে, সেটাই হবে উত্তর। একটু ব্যাখ্যা করি। ওপরে আমরা একটা সংখ্যা নিয়েছি ১৬,৮০৭। এই সংখ্যাটিতে মোট পাঁচটি অঙ্ক আছে। তাহলে এই পাঁচ অঙ্কের সংখ্যার শেষে বা এককের ঘরে যে অঙ্কটি আছে, সেটি হবে উত্তর। এই সংখ্যার এককের ঘরে আছে ৭। তাহলে সংখ্যাটি ৭-এর ফিফথ রুট পঞ্চমূল। এবার নিশ্চয়ই সংখ্যা দেখার সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিতে পারবে!

কিন্তু সংখ্যাটি যদি পাঁচ অঙ্কের বড় হয়, তাহলে উপায় কী? যেমন ৭৯,৬২,৬২৪ একটি সংখ্যা। এই সংখ্যার ফিফথ রুট কত হবে? বা কোন সংখ্যাটিকে পরপর পাঁচবার গুণ করলে এ সংখ্যাটি পাওয়া যাবে?

খেয়াল করো, সংখ্যাটিতে মোট ৭টি অঙ্ক আছে। কিন্তু আমরা শিখেছি পাঁচ অঙ্কের কৌশল। এ রকম পরিস্থিতে সংখ্যাটির ডান দিক থেকে প্রথম পাঁচ অঙ্ক বেছে নেবে। এ সংখ্যাটির প্রথম পাঁচ অঙ্ক ৬২,৬২৪। এটুকুর জন্য উত্তর হলো ৪। কিন্তু বাঁয়ে এখনো ৭৯ বাকি আছে। যদি বাকি সংখ্যা ৩০–২৩০ এর মধ্যে হয়, তাহলে আগের উত্তরের বাঁয়ে বসবে ২। তখন উত্তর হবে ২৪। তুমি ২৪-কে পাঁচবার গুণ করলে ৭৯,৬২,৬২৪ সংখ্যাটাই পাবে।

তাহলে এখন জানা দরকার, বাকি সংখ্যা কত থেকে কত-এর মধ্যে থাকলে উত্তরে কত নিতে হবে।

১ - ৩০ এর মধ্যে হলে উত্তরের বাঁয়ে বা দশকের ঘরে বসবে ১

৩০ - ২৩০ এর মধ্যে হলে উত্তরের বাঁয়ে বা দশকের ঘরে বসবে ২

২৩০ - ১,০০০ এর মধ্যে হলে উত্তরের বাঁয়ে বা দশকের ঘরে বসবে ৩

১,০০০ - ৩,০০০ এর মধ্যে হলে উত্তরের বাঁয়ে বা দশকের ঘরে বসবে ৪

৩,০০০ - ৭,৫০০ এর মধ্যে হলে উত্তরের বাঁয়ে বা দশকের ঘরে বসবে ৫

৭,৫০০ - ১৬,০০০ এর মধ্যে হলে উত্তরের বাঁয়ে বা দশকের ঘরে বসবে ৬

১৬,০০০ - ৩২,০০০ এর মধ্যে হলে উত্তরের বাঁয়ে বা দশকের ঘরে বসবে ৭

৩২,০০০ - ৫৭,০০০ এর মধ্যে হলে উত্তরের বাঁয়ে বা দশকের ঘরে বসবে ৮

৫৭,০০০ - ৯৯,০০০ এর মধ্যে হলে উত্তরের বাঁয়ে বা দশকের ঘরে বসবে ৯

এখন আমরা একটা সংখ্যার ফিফথ রুট বের করব। ধরো, সংখ্যাটি ৬,৯৩,৪৩,৯৫৭। তাহলে এর ফিফথ রুট কত হবে? কিংবা কোন সংখ্যাটিকে পাঁচবার গুণ করলে ওই বড় সংখ্যাটি পাওয়া যাবে। ডান থেকে প্রথম পাঁচটি সংখ্যা হলো ৪৩,৯৫৭। এটুকুর জন্য উত্তর হলো ৭। বাকি আছে আরও ৬৯৩, যা ২৩০-১,০০০ রেঞ্জের মধ্যে। আর এই রেঞ্জের জন্য নিতে হবে ৩। তাহলে উত্তর হলো ৩৭। অর্থাৎ ৩৭-কে পাঁচবার গুণ করলে হবে ৬,৯৩,৪৩,৯৫৭।

এখন যদি কোনো সংখ্যা থেকে প্রথম পাঁচটি অঙ্ক নেওয়ার পরে ২৩০ বাকি থাকে, তাহলে তুমি কত নেবে? ২ নাকি ৩? কারণ ৩০-২৩০ এর মধ্যে হলে উত্তরের বাঁয়ে বসবে ২। আবার ২৩০-১,০০০ এর মধ্যে হলে বসবে ৩। সে ক্ষেত্রে তুমি কত নেবে?

আসলে এই প্রশ্ন নিয়ে তেমন মাথা ঘামানোর দরকার নেই। কারণ, কখনো ২৩০ বা ১,০০০ এর মতো সংখ্যা বাকি থাকবে না। যেসব সংখ্যা দিয়ে রেঞ্জ বোঝায়, সেগুলো কখনো বাকি থাকবে না। ফলে তোমাকে বিপদেও পড়তে হবে না।

এখন নিচের সমস্যাগুলোর সমাধান করো। চেষ্টা করো ২ সেকেন্ডের মধ্যে সব উত্তর খুঁজে বের করতে। তবে ওপরে যে রেঞ্জ দিয়েছি, তা মুখস্থ না করলে কিন্তু সেকেন্ডের মধ্যে উত্তর দিতে পারবে না।

অনুশীলন

১. ৩৭১২৯৩

২. ২০৫১১১৪৯

৩. ৭৯২৩৫১৬৮

৪. ৪৫৯১৬৫০২৪

৫. ৯৫০৯৯০০৪৯৯

সমাধান

১. ১৩

২. ২৯

৩. ৩৮

৪. ৫৪

৫. ৯৯