মা তুমি এতকিছু কী করে পারো

এআই আর্ট

প্রিয় মা,

সেই ২ বছর বয়স থেকে কথা বলতে শিখলেও এখনো মনের কথা তোমার কাছে গুছিয়ে বলতে শিখি নাই। কিন্তু বলতে চাই অনেক কিছু। কিন্তু শব্দের ভীষণ অভাব অনুভব করি, বাংলা ভাষার ৫০টি বর্ণও তখন কম পড়ে যায়। তবুও কীভাবে যে তুমি এত কিছু বুঝে যাও! তুমি কি জাদুকর? নাকি কোনো পরী রাজ্যের পরী?

একবার তুমি জানতে চেয়েছিলে, আমার জীবনের প্রথম বন্ধু কে? আমার প্রথম বন্ধু তো তুমিই। কিন্তু কেন জানি বলা হলো না। বললাম, মনে নাই।

ছোটবেলায় আমার মাইকে কথা বলতে ভয় লাগত। তখন তুমি আমাকে এই ভয়ের কাছে হেরে যেতে দাওনি। বারবার আমাকে আমার ভয়ের সঙ্গে লড়াই করতে তুমিই সাহস দিয়েছ ...কিন্তু কখনো কি তোমাকে আমি বলেছি তুমিই যে আমার অনুপ্রেরণা? আজ আমি যে মাইকে অনবরত কথা বলতে পারি, বক্তব্য দিতে পারি সব কিছুর কারণ তুমিই।

বাসায় মাছ রান্না করলে আমি মাছ খাই না জেনে তুমি শুধু আমার জন্যে আলু বা ডিম ভাজতে ব্যস্ত হয়ে পড়ো। পৃথিবীতে মায়ের ভালোবাসার মতো দ্বিতীয় আর কিছু আছে বলে মনে হয় না।

পিএসসি পরীক্ষার সময় গণিতে আমি দুর্বল তা জেনে তুমি ভীষণ রাগ করবে ভেবেছিলাম। কিন্তু তুমি উলটো অফিসে না গিয়ে নিজেই আমাকে গণিত পড়াতে বসালে। তোমাকে বোঝা সত্যিই কঠিন।

মা..তুমি এতকিছু কীভাবে পারো? আমি ব্যথা পেলে তুমি চিকিৎসক, আমার ক্ষুধা লাগলে তুমি রাঁধুনি, পড়ায় সমস্যা হলে তুমিই শিক্ষক, মন খারাপ থাকলে বন্ধু, পথ হারিয়ে গেলে পথদ্রষ্টা..., তুমি যে একাধারে কত কিছু লিখে শেষ করতে পারব না।

নিজে মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী হয়েও বিজ্ঞানের বিষয়গুলোতে ভালো করতে সাহায্য করেছিলে তুমি। এসএসসি পরীক্ষার সময়ে যখন রাত জেগে পড়তাম, তুমিও রাত জেগে থাকতে আমার খেয়াল রাখতে। একটু পরপর কফি দিতে। আম্মু তোমাকে তো কখনো বলিনি যে জীববিজ্ঞানের কোষের গঠন পড়ার সময়ে আমার প্রতিবার তোমার কথাই মনে পড়তো। কেন জানো?

ওই যে কোষের পাওয়ার হাউস মাইটোকন্ড্রিয়া। ঠিক তেমনই তুমি আমার জীবনের মাইটোকন্ড্রিয়া। আমার পাওয়ার হাউজ। সামনাসামনি বলতে অদ্ভুত লাগবে...তাই চিঠিতে লিখছি । আম্মু, তুমি কেমন আছো? জানি তোমার উত্তর হবে..."তোর সামনেই তো আছি...আবার জিজ্ঞেস করার কী দরকার "

তা ঠিক। তবুও আমি জানতে চাই!! আমি তোমাকে বলতে চাই, সেই ছোটবেলা থেকে তো আমার জন্যে অনেক করলে এবার নিজেকেও একটু সময় দাও, নিজেকে ভালোবাসো , নিজেরও যত্ন নাও। তোমাকে অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি আম্মু!! এভাবেই চিরকাল আমার পাশে থেকো!

আফসারা জামান

একাদশ শ্রেণি, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, ঢাকা

আরও পড়ুন