মা-বাবার আচরণে আমার ছোট ভাইবোন অনেক ভীত হয়ে পড়েছে
প্রিয় মনোবন্ধু,
আমি এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি। আমি সব সময় চাইতাম, আমি যেন একটি সুস্থ পরিবেশে বসবাস করি। কিন্তু পরিবারের ঝামেলার কারণে সেটা পারছি না। আমি অনেক মানসিক চাপে আছি। জানি না, আপনি আমার লেখাটা পড়বেন কি না। কিন্তু দয়া করে আমাকে একটু সাহায্য করুন। আমার পরিবারের ঝামেলা হলো, আব্বু–আম্মুর ভেতর সামান্য কথা–কাটাকাটি হলে তাঁরা দুজনই ব্যাপারটাকে অনেক উচ্চতর পর্যায়ে নিয়ে যান। তাঁরা হাতাহাতি পর্যন্ত করেন। এতে আমার ছোট ভাইবোন অনেক ভীত হয়ে পড়ে। তারা কয়েক দিন মানসিক চাপে থাকে। ভয়ে থাকে। আমি সারাক্ষণ এসব বিষয় নিয়ে চিন্তিত থাকি। আমি একটুও স্বাধীন–সুন্দরভাবে থাকতে পারি না। তাঁরা প্রতিনিয়ত এগুলো করেন। আমি বাধা দিতে গেলে আমার সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করেন। আমি এগুলো নিতে পারি না। প্লিজ, আমাকে এ থেকে মুক্তির উপায় বলুন। আমি বিষয়টার সমাধান চাই। আব্বুর আবার আমার নানুদের সঙ্গে জায়গাসংক্রান্ত একটা বিষয় নিয়ে ঝামেলা আছে। এটা নিয়েও আম্মুকে কথা শোনান। আমি কী করব এ অবস্থায়? আমি প্রায় রাতে দুঃস্বপ্ন দেখি এগুলো নিয়ে। মাঝেমধ্যে ভয়ে শরীরে কাঁপুনি ধরে যায়। আমি কী করব? প্লিজ আমাকে একটু সাহায্য করুন। প্লিজ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, এসএসসি পরীক্ষার্থী
মনোবন্ধু: প্রথমেই তোমাকে ধন্যবাদ যে তুমি তোমার ছোট ভাইবোনদের পাশে থাকার চেষ্টা করছ, তাদের নিয়ে চিন্তা করছ। এটি তোমার দায়িত্ববোধ আর তাদের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ। এটি তোমার অনন্য মানবিক গুণ, তোমার শক্তি। মা-বাবা যদি চান, তাহলে তাঁদের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য কাপল থেরাপির সাহায্য নিতে পারেন। তুমি তোমার মানসিক শক্তি বাড়াতে তাঁদের কলহের সময় ভাইবোনদের নিয়ে পাশের ঘরে চলে যাও, গান শোনো বা বই পড়ো; বড় বড় করে শ্বাসের ব্যায়াম করতে পারো (৪ সেকেন্ড শ্বাস নাও, ৪ সেকেন্ড শ্বাস ধরে রাখো, ৪ সেকেন্ড ধরে শ্বাস ছাড়ো)। ভাইবোনদের বলো এবং নিজেকেও বলো যে এটি তোমাদের দোষ নয়, বড়দের বিষয়; নিশ্চয়ই তাঁরা সমাধান করে ফেলবেন। একটি শান্ত ও আন্তরিক পারিবারিক সময় বেছে নিয়ে মা বা বাবা কিংবা দুজনের সঙ্গেই ধীরে ধীরে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে পারো, তাঁদের কলহ যে তোমাদের মনের ওপর তীব্র চাপ তৈরি করছে, সেটা বুঝিয়ে বলো। এ ক্ষেত্রে ওনারা চাইলেও তুমি নিরপেক্ষ থেকে কেবল নিজের বিষয়টি বলো। ওনাদের বুঝিয়ে বলতে পারো যে এসবের জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক মনোসামাজিক সহায়তা রয়েছে। ওনারা যেন মানসিক স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগযোগ করেন। তুমি অবশ্যই নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যাবে এবং ভাইবোনদেরও পড়তে উৎসাহিত করবে।