হারিয়ে যাওয়ার পর পরিবার আমাকে যেভাবে খুঁজে পেল

এটা হয়তো ২০১৩ সালের ঘটনা। তখন আমার বয়স তিন কি চার বছর। ভালোভাবে কিছু বুঝতাম না। আব্বু–আম্মু কী একটা কাজে ঢাকায় গিয়েছিলেন। আমাকে রেখে গেছেন নানুর বাসায়। সেখানে পাঁচ দিন ছিলাম। এর মধ্যে একদিন হলো কী, আমার কাজিনরা সবাই গেল পাশের বাসায় টিভি দেখতে। মামিরা সবাই রান্নাঘরে কাজ করছেন। নানাভাই আর মামা গেলেন বাজার করতে। আমার বড় খালামণি ছিলেন অফিসে। অন্য খালামণিরা আর নানু গল্প করছিলেন দোতলায়। এদিকে বাসায় শুধু আমি একা। আশপাশে কাউকে না দেখে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে পড়লাম। তখন দেখি, আমার বড় খালামণির মতো দেখতে একজন নারী হেঁটে যাচ্ছেন। ওনাকেই আমার খালামণি মনে করে পায়ের স্যান্ডেল জোড়া হাতে নিয়ে ওনার পিছু পিছু দৌড়াতে লাগলাম। জোরে জোরে ‘খালামণি, খালামণি’ বলে ডাকছিলাম; কিন্তু তাঁর তো কোনো খবরই নেই। লম্বা লম্বা পা ফেলে হাঁটতে লাগলেন তিনি। কিছু দূর যাওয়ার পর ক্লান্ত হয়ে আর দৌড়াতে পারলাম না। একটু বসলাম। ওমা! এরই মধ্যে দেখি, মহিলা উধাও! কোন দিকে যাব, কোথায় যাব—কিছুই বুঝতে পারলাম না।

কিছুক্ষণ পর কয়েকজন লোক আমাকে একা দেখে এগিয়ে এলেন। ওনারা বড় খালামণির পরিচিত। তখন খালামণির সঙ্গে আমার চেহারার হালকা মিল ছিল। লোকগুলোর কিছুটা সন্দেহ হলো। তাড়াতাড়ি খালামণিকে ফোন করে জানতে চাইলেন, কোনো ছোট মেয়ে হারিয়ে গেছে কি না। খালা তো ছিলেন অফিসে, কিছু জানেনই না। বাড়িতে যখন ফোন করলেন, তখন সবাই টের পেলেন আমি নেই। ততক্ষণে আব্বু-আম্মুর কানেও খবর পৌঁছে গেছে। একের পর এক ফোন। সবাই অস্থির। মামা, নানা—সবাই তাড়াতাড়ি বাড়িতে চলে এসেছেন। খালামণিও তাড়াতাড়ি অফিস থেকে চলে এলেন। পুরো বাড়িতে হইচই পড়ে গেল। তারপর লোকগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনোমতে আমাকে বাড়ি আনা হলো। এর পর থেকে সবাই আমাকে চোখে চোখে রাখতেন।

বড় খালামণি এখনো আমাদের বাসায় এলে বলেন, ‘সেদিন যদি সামিয়াকে না পেতাম, তাহলে কী যে হতো!’ এই বলে আমাকে জড়িয়ে ধরেন। ভাগ্যিস লোকগুলো ওনার পরিচিত ছিলেন। না হলে আমি যে কোথায় থাকতাম, নিজেও জানি না। হয়তো সেদিন আল্লাহর রহমত ছিল আমার ওপর।

লেখক: শিক্ষার্থী, দশম শ্রেণি, রাউজান আরআরএসি মডেল সরকারি হাইস্কুল, চট্টগ্রাম

আরও পড়ুন