চড়ুই পাখির ছানা

মস্ত বড় দালান—বাড়ির উই-লাগা ওই কড়ির ফাঁকে

ছোট্ট একটি চড়াই-ছানা কেঁদে কেঁদে ডাক্ছে মাকে।

‘চুঁ চা’ রবে আকুল কাঁদন যাচ্ছিল নে’ বসন-বায়ে,

মায়ের পরান ভাবলে—বুঝি দুষ্টু ছেলে নিচ্ছে ছা-য়ে।

অমনি কাছের মাঠটি হতে ছুটল মাতা ফড়িং মুখে,

স্নেহের আকুল আশিস-জোয়ার উথ্লে ওঠে মার সে বুকে।

আধ—ফুরফুরে ছাটি নীড়ে দেখছে মা তার আসছে উড়ে,

ভাবলে আমি যাই না ছুটে, বসি গে’ মার বক্ষ জুড়ে।

হৃদয়-আবেগ রুধতে নেরে উড়তে গেল অবোধ পাখি,

ঝুপ করে সে গেল পড়ে-ঝরল মায়ের করুণ আঁখি!

হায়রে মায়ের স্নেহের হিয়া বিষম ব্যথায় উঠল কেঁপে,

রাখলে নাকো প্রাণের মায়া, বসল ডানায় ছাটি ঝেঁপে।

ধরতে ছোটে ছানাটির ক্লাসের যত দুষ্টু ছেলে;

ছুটছে পাখি প্রাণের ভয়ে ছোট্ট দুইটি ডানা মেলে।

বুঝতে নারি কি সে ভাষায় জানায় মা তার হিয়ার বেদন,

বুঝে না কেউ ক্লাসের ছেলে—মায়ের সে যে বুকেভরা ধন!

পুরছে কেহ ছাতার ভেতর, পকেটে কেউ পুরছে হেসে

একটি ছেলে দেখছে, আঁসু চোখ দুটি তার যাচ্ছে ভেসে।

মা মরেছে বহুদিন তার, ভুলে গেছে মায়ের সোহাগ,

তবু গো তা মরম ছিঁড়ে উঠল বেজে করুণ বেহাগ।

মই এনে সে ছানাটিরে দিল তাহার বাসায় তুলে,

ছানার দুটি সজল আঁখি কররে আশিস পরান খুলে।

অবাক-নয়ান মাটি তাহার রইল চেয়ে পাঁচুর পানে,

হৃদয়-ভরা কৃতজ্ঞতা দিল দেখা আঁখির কোণে।

পাখির মায়ের নীরব আশিস যে ধারাটি দিল ঢেলে,

দিতে কি তার পারে কণা বিশ্বমাতার বিশ্ব মিলে!

অলংকরণ: তুলি