সিরাপ মামা এবং রহস্যজনক কই মাছ

অলংকরণ : তুলি
অলংকরণ : তুলি

সিরাপ মামা আসার পর আমার জীবনটাই বদলে গেছে। যে কয়েক দিন মামা থাকেন, সে কয়েক দিন আমারও ছুটি। পড়াশোনাকে টাটা-বাই বাই বলে সারা দিন টো টো করে ঘুরি। তোমরা আবার ভেবো না, মামার আসল নামই সিরাপ। মামার নাম বদরুল। তিনি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন। পেটব্যথা, নাকব্যথা যা-ই থাকুক, মামা তখনই তাকে সিরাপ খাইয়ে দেন। মামার এই ‘সিরাপ-পাগল’ ব্যাধি ছাড়া সবই আমার পছন্দ। যা-ই হোক, ‘নাই মামার চেয়ে দুষ্টু মামা ভালো’ কথাটা প্রমাণ করার জন্যই হয়তো বা মামা যখনই আসেন, তখনই রহস্যজনক ঘটনা ঘটতে থাকে।

সেদিন সকালে মামা হঠাৎ আমাকে খুব জোরে জোরে ঝাঁকাতে লাগলেন। ভূমিকম্প হচ্ছে ভেবে আমি ঘুমের মধ্যেই ‘হেল্প! হেল্প!’ বলে চেঁচাতে লাগলাম। মামা আরও কয়েকবার ধাক্কা দিতেই আমি ধড়মড় করে জেগে গেলাম, ‘কী হয়েছে মামা? ভূমিকম্প নাকি?’ সিরাপ মামা উত্তেজিত কণ্ঠে বললেন, ‘মিসটেরিয়াস ব্যাপার ঘটে গেছে রে! বাড়িতে কোথা থেকে জানি একটা জ্যান্ত কই মাছ এসে হাজির! চল দেখি।’ আমি হাই তুলতে তুলতে রান্নাঘরে গেলাম। কই মাছটা লাফাচ্ছে, আর মা বারবার একই ডায়লগ দিচ্ছেন, ‘কী কাণ্ড, কই মাছটা এল কোথা থেকে? হ্যাঁ?’ মামা কিছুক্ষণ ভুরু কুঁচকে কই মাছটা দেখলেন। তারপর গম্ভীর কণ্ঠে বললেন, ‘এটা যে-সে কই মাছ নয়। নিশ্চয়ই পেটে টাইমবোমা লাগানো আছে। সবাই সাবধান! সরো দেখি।’ সিরাপ মামার কথা বিশ্বাস না হলেও সরে দাঁড়ালাম। মামা আস্তে আস্তে মাছের কাছে গিয়ে বললেন, ‘নাহ্, এ দেখি ডায়েটিং করা মাছ। টাইমবোমা এর পেটে আঁটবে না। তাহলে কী থাকতে পারে?’ মা চিৎকার করে মামাকে বললেন, ‘কী ছাগলের মতো কথা বলিস? টাইমবোমা কে ফেলবে?’ আমি বললাম, ‘মামা, ককটেল থাকতে পারে, সাবধান।’ মামা হাতে কিল দিয়ে বলল, ‘খাঁটি কথা, ককটেল থাকতে পারে। ছোটখাটো একটা রেকর্ডারও থাকতে পারে। আমাদের কথা রেকর্ড করা হচ্ছে। এটা মোটেই নিরীহ মাছ নয়। মেকআপ করিয়ে নিরীহ করা হয়েছে।’ হঠাৎ বাইরে বেশ চিৎকার-চেঁচামেচি শোনা গেল। সিরাপ মামা আর তাঁর সহকারী হিসেবে আমি ছুটে গেলাম। রান্নাঘরের খোলা জানালা দিয়ে একটা বিড়াল ঢুকে ঘাপটি মেরে বসে ছিল, ততক্ষণে খেয়াল করলাম। আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম। জানালা বরাবর মাছের বাজারটায় বিরাট হইচই। বাজার থেকেই বিড়ালটা কই মাছ চুরি করে এখানে এনে রেখেছে। আসামি পলাতক। গোয়েন্দা সিরাপ মামা আর আমার কী ঘটেছে বুঝতে বাকি রইল না।

উপমা অধিকারী, বনানী, ঢাকা