হাতে নিয়ে আলোকবর্তিকা

১০ বছর বয়সী রাকিব মহাখালীর একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ছে। কোভিড-১৯ মহামারি শুরুর পর থেকে স্কুল বন্ধ। বন্ধু, শিক্ষক আর শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে ৪ মাসে অনেক দূরত্ব তৈরি হয়েছে রাকিবের। ৯০ স্কয়ার ফিটের ছোট্ট টিনের ঘরে মা, বাবা ও ভাইবোন নিয়ে গাদাগাদি করে থাকতে হয় তাকে। রাকিবের স্বপ্ন শিক্ষক হওয়া। দারিদ্র্য সে স্বপ্ন পূরণ হওয়ার পথ দূরে ঠেলে দেয় বারবার। এমন অবস্থায় কোভিড-১৯ অনিশ্চয়তা বাড়িয়ে দিয়েছে আরও। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়া অসংখ্য রাকিবের গল্প এখন এ রকমই।

সালমার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি চাকরি হারিয়ে পুরো পরিবারকে নিয়ে গ্রামে ভিড়েছে। মাধ্যমিকের গণ্ডি না পেরুতেই হয়তো বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হবে তাকে। পরিবারের অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা সালমার জীবনকে এমন অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে।

প্রতুলের এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে গেছে। কবে হবে বা আদৌ হবে কি না, তা জানে না সে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি তো আরও পরের ব্যাপার। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সেতুও জানে না সেশন জট কতটা ভোগাবে। বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে চাকরিতে যোগ দিয়ে পরিবারের হাল ধরাটা যে তার জন্য অনেক জরুরি! শুধু প্রতুল বা সেতুই না, ১৪ বছর বয়সী বিন্দুর প্রয়োজন হয় বিশেষায়িত শিক্ষা। তার শিক্ষা কার্যক্রম কীভাবে চলবে তা নিয়ে কেউ কি ভাবছে? কী ভাবছে?

এমন নানা প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে আমাদের সবার মনে। এসব প্রশ্ন, তার উত্তর এবং সম্পর্কিত ভাবনা নিয়ে কিশোর আলোর ফেসবুক পেজে শুরু হচ্ছে শিক্ষাবিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠান ‘হাতে নিয়ে আলোকবর্তিকা’। তরুণ শিক্ষাগবেষক মুনিয়া ইসলাম মজুমদার ও তাসনিম আফরোজের পরিকল্পনায় এ আয়োজনে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার কিশোর আলো ছাড়াও ইয়ুথ এঙ্গেজমেন্ট পার্টনার হিসেবে থাকছে প্রথম আলোর ফিচার পাতা স্বপ্ন নিয়ে। এ ছাড়া, নলেজ পার্টনার হিসেবে বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার (বিওয়াইএলসি) ও টেকনিক্যাল পার্টনার হিসেবে থাকছে লাইট অফ হোপ।

বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন স্তরের শিক্ষাব্যবস্থার অনুশীলনের ধরন, করোনা-পরবর্তী শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন, ভবিষ্যত শিক্ষার রূপরেখা বিশ্লেষণসহ শিক্ষাবিষয়ক বেশ কিছু গুরুক্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে হাতে নিয়ে আলোকবর্তিকার পর্বগুলো। বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যম এবং মাদ্রাসাসহ সব স্তর, সহশিক্ষা ও বিশেষ শিক্ষা কার্যক্রমের শিক্ষক এবং নীতি-নির্ধারকদের একই প্ল্যাটফর্মে এনে বর্তমান ও ভবিষ্য্যতের করণীয় ঠিক করা এ আয়োজনের অন্যতম উদ্দেশ্য বলে জানান মুনিয়া ইসলাম মজুমদার। উদ্যোক্তাদের আরেকজন তাসনিম আফরোজ মনে করেন, এই মহামারির সময়টি পেরিয়ে যাবে, কিন্তু এই সময়ের অভিজ্ঞতা আর অনুশীলনগুলো লিপিবদ্ধ থাকলে এগুলো পরবর্তীকালে পাথেয় হবে।

শনিবার, ৪ জুলাই সন্ধ্যা ৭টায় কিশোর আলোর ফেসবুক পাতায় সরাসরি সম্প্রচারিত (লাইভ) হবে আয়োজনের প্রথম পর্ব। একই সঙ্গে তা প্রচার হবে সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর ফেসবুক পাতায়ও। এ পর্বে অতিথি হিসেবে থাকবেন শিক্ষা মন্ত্রণায়লয়ের অতিরিক্ত সচিব মোমিনুর রশিদ আমিন, অ্যাকসেস টু ইনফরমেশনের (এটুআই) হেড, ফিউচার অব লার্নিং মো. আফজাল হোসেন সারোয়ার, সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশের এডুকেশন অ্যাডভাইজর মোহাম্মদ কামাল হোসেন, ও লাইট অফ হোপের সিইও ওয়ালিউল্লাহ ভূঁইয়া।

প্রতি শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় অনুষ্ঠিত হবে ছয় পর্বের এই আলোচনা অনুষ্ঠানটি।