বিড়ালের জীবন

অলংকরণ: আপন জোয়ার্দার

ঝড়ের রাত। পরিবেশটা বেশ সুন্দর। ঝোড়ো হাওয়া, বৃষ্টি আর তার সঙ্গে এক কাপ কড়া রং চা—ব্যাপারটাই রোমাঞ্চকর। এক কাপ চা হাতে জানালার কাছে বসে গল্পের কথা ভাবছিলাম। একটা উপন্যাস লেখা শুরু করেছিলাম, তার গল্প মেলাতে পারছি না। এসব ভাবতে ভাবতে একটা ঘোরের মধ্যে পড়ে গেলাম। কত ধরনের গল্প; ভূতের গল্প, হাসির গল্প, রোমান্টিক গল্প, রবীন্দ্রনাথের গল্প আরও কত কী...। কিন্তু জুতমতো কোনো লেখাই খুঁজে পাচ্ছি না।

হঠাৎ একটা আওয়াজে ঘোর ভেঙে গেল। কী যেন একটা পড়ল মনে হলো। কোথায় কী পড়ল, ঠিক আন্দাজ করতে পারলাম না। ফাঁকা বাড়িতে অল্প আওয়াজ হলেই মনে হয় যেন সবকিছু ভেঙেচুরে পড়েছে। কোথায় কী পড়ল, দেখতে গেলাম।

একটা বিড়াল! এই ঝড়ের রাতে?...

বিড়ালটা টেবিলের বইগুলো ফেলে দিয়েছে। বিড়াল আমার খুব পছন্দ, তাই বইগুলোর দিকে নজর না দিয়ে আমি ওকে নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। বিড়ালটাকে খেতে দিলাম, সে-ও খাওয়া শুরু করল। মাছ দিয়ে ভাত বলে কথা। বিড়াল তা না খেয়ে থাকতে পারে না। ঝড়ের রাত, বিড়ালটা কোথায় যাবে, তাই তার জন্য শোবার একটি জায়গা ঠিক করে দিলাম। সে-ও নিজের জায়গাটা পরখ করে নিল।

খাওয়া আর ঘুম, এই তো বাবুর কাজ। আমি আবার গল্পে মন দিলাম। গল্পের শেষ লাইনটা লিখেছিলাম, ‘পাড়ার বিড়ালটাও আজ কান্না করছে সুভাষের জন্য’। এরপর কাহিনিটাকে কোন দিকে নিয়ে যাব? সুভাষের কারণে ছায়ার মৃত্যু নাকি নতুন করে ছায়ার জীবন শুরু।

ঘড়ির কাঁটা টং করে উঠল। রাত ১২টা বেজে গেছে, আজকের মতো লেখা এখানেই শেষ করলাম।

বিড়ালটা দিব্যি ঘুমাচ্ছে। যদি বিড়ালের মতো আমার গল্পের সুভাষও যেকোনো পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে পারত, তাহলে হয়তো সে আত্মহত্যা করত না। সবাই যদি বিড়ালের মতো করে ভাবত, তাহলে হয়তো জীবন নামের যুদ্ধটা আরেকটু সহজ হতো।