পরীক্ষায় ভালো করতে চাও?

সামনে মাধ্যমিক পরীক্ষা। এরপর আবার আসবে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। স্কুলগুলোর বার্ষিক পরীক্ষাও আসন্ন। উফ্‌! তোমাদের জন্য আমার মায়া হচ্ছে! ভাবো দেখি, ছাত্রজীবনটা কত মজার হতো, যদি পরীক্ষা না থাকত! কী আর করা! পরীক্ষা থাকবেই। আর পরীক্ষা না থাকলে আমরা যে পড়ালেখায় একটু ফাঁকি দিতাম, তাও তো সত্য। পরীক্ষায় ভালো করার সহজ কোনো বুদ্ধি কি আছে? আজ সেটা নিয়ে আলোচনা করব।

মুখে হাসি, মাথা ঠান্ডা

এক নম্বর কথা হলো, পরীক্ষাকে ভয় পেয়ো না। হাসিখুশি একটা ব্যাপার হিসেবে নাও। সাকিব আল হাসান যে ক্রিকেটে ভালো করেন, তার একটা কারণ হলো, খেলার কঠিন সময়েও তার মুখটা থাকে হাসি হাসি। তিনি ভয় পান না। কঠিন সময়ে হাসিমুখে থেকে সাহসী কাজটা মাথা ঠান্ডা রেখে করেন।

পরীক্ষায় ভালো করার জন্যও এই চারটা কথা আমরা মনে রাখব। আমরা দুশ্চিন্তা করব না। দুশ্চিন্তা করলেই ফল ভালো হবে না। ব্যাপারটাকে বেশ একটা উৎসব হিসেবে নেব। আমরা সাহসী, আমরা পরীক্ষাকে ভয় পাই না। আমরা মাথা রাখব ঠান্ডা। ঠান্ডা মাথায় পরীক্ষার খাতায় আমরা সঠিক উত্তর গুছিয়ে লিখব।

পরিশ্রম আর প্রস্তুতি

কিন্তু পরীক্ষার আগে দরকার প্রস্তুতি। সাকিব আল হাসান ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ভালো করলেন, তার পেছনেও ছিল তাঁর প্রতিজ্ঞা আর প্রস্তুতি। সাকিব নেটে প্র্যাকটিস করেছেন, ব্যায়াম করে ওজন কমিয়েছিলেন। তুমি এখনই প্রতিজ্ঞা করো যে এবার আমি ফল ভালো করব। আর সে জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নাও।

রুটিন বানাও

একটা রুটিন বানাও। আগামী দুই মাসের ক্যালেন্ডার। সেটা টাঙিয়ে রাখো পড়ার টেবিলের সামনে।

ধরো, তুমি প্রাথমিক পরীক্ষা দিচ্ছ। তোমার ছয়টা বিষয় আছে। ধরা যাক, পরীক্ষার আছে আর ২৫ দিন। তুমি প্রথমেই ঠিক করো, রোজ প্রতিটা সাবজেক্ট পড়বে, নাকি এক দিন শুধু একটা সাবজেক্টই পড়বে। তুমি একটা সাবজেক্ট তিন দিন করে পড়ে শেষ করে ফেলতে পারো। ১৮ দিনে সব সাবজেক্ট শেষ হলো। আরও থাকল ছয় দিন। আবার প্রতিটা সাবজেক্ট এক দিন করে শেষ করলে। ব্যস, ২৪ দিনে সব সাবজেক্ট দুবার করে পড়া হলো। পরীক্ষার আগের দিনে হালকা পড়ো। না পড়লেও চলে।

অনেকে আবার এক সাবজেক্ট বেশিক্ষণ পড়তে পারে না। তাহলেও তুমি রুটিন করে নাও। রোজ প্রতিটা সাবজেক্ট আধঘণ্টা করে পড়লে ছয়টা সাবজেক্ট পড়তে তোমার লাগবে তিন ঘণ্টা। আগামী ১৮ দিনে তুমি পুরো সিলেবাস শেষ করবে, সব সাবজেক্টেরই।

পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র কেমন হয়

পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র কেমন হয়! এটা তোমাকে জানতে হবে। গত বছরের প্রশ্ন জোগাড় করো। প্রশ্নের ধরন বোঝো। ২০১৭, ২০১৬, ২০১৫ সালের প্রশ্নপত্র জোগাড় করো। তারপর সেগুলোর উত্তর নিজে নিজে লিখে ফেলো। মানে তুমি একটা পরীক্ষার মহড়া দাও।

পরীক্ষার আগের রাতে

পরীক্ষার আগের রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাবে। প্রচুর হাসাহাসি করবে। হাসলে ব্রেন ভালো থাকে। সকালে উঠে বেশি পড়ার দরকার নেই। ওই পড়া কোনো কাজে লাগে না।

যা পড়েছ, তা না দেখে লিখে ফেলো

শুধু পড়লে হবে না। লিখতে পারতে হবে। যা শিখেছ, তা লিখে ফেলো। না দেখে লেখো। গণিতের অনুশীলনী না দেখে শেষ পর্যন্ত করে প্র্যাকটিস করো। একই অঙ্ক বারবার কষলে পরীক্ষার হলে ভালো করা যায়। তবে মুখস্থ লিখবে না। গণিতের ধাপগুলো নিজেই তোমাকে নিয়ে যাবে এরপর কী লিখতে হবে, সেই ধারায়। লিখে যদি প্র্যাকটিস করো, তাহলে নির্ভুল বানানও শেখা যাবে। হাতের লেখাও ভালো হবে।

পরীক্ষার হলে

পরীক্ষার হলে প্রথমে খাতায় নিজের রোল নম্বর ইত্যাদি যা লিখতে হয়, তা লিখবে। পরীক্ষার প্রবেশপত্র সঙ্গে রাখবে। সেটা দেখে নির্ভুলভাবে ক্রমিক নম্বর লিখবে। আলাদা পৃষ্ঠা নিলেও তাতে নম্বর লিখবে। মার্জিন দেবে। ভাঁজ করে হোক, কিংবা পেনসিল দিয়ে হোক। দুই প্রশ্নের উত্তরের মধ্যে ফাঁক রাখবে। কোন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছ, সেটা ঠিকভাবে লিখবে। মানে প্রশ্নের ক্রমিক নম্বর নির্ভুল লিখতে হবে।

প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়ার পর

প্রশ্নপত্র পড়ে নেবে। কোনো প্রশ্নের উত্তর দেওয়া বাধ্যতামূলক কি না, তা দেখে নিতে হবে। প্রশ্নের পাশে মান দেওয়া থাকবে। বেশি নম্বর নাকি কম নম্বর দেখে সেভাবে উত্তর লিখবে। এক কথায় বা এক বাক্যে উত্তর চাওয়া হলে টু দ্য পয়েন্ট উত্তর দেবে। ধরা যাক, প্রশ্ন এলো, বাংলাদেশের রাজধানীর নাম কী? তুমি লিখতে পারো, ঢাকা। আবার লিখতে পারো, বাংলাদেশের রাজধানীর নাম ঢাকা।

কিন্তু যদি বলা হয়, বাংলাদেশের রাজধানী নিয়ে একটা অনুচ্ছেদ বা পাঁচটি বাক্য লেখো। তখন তো শুধু এক লাইনে বা এক শব্দে উত্তর লিখলে চলবে না।

ছোট ছোট প্রশ্ন বা অবজেকটিভ টাইপ প্রশ্নের উত্তর আগে দেবে। রচনা লিখবে সবার শেষে।

রিভিশন দেবে

সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলে আবারও প্রশ্ন পড়বে। কোনো কিছু বাকি থাকল কি না। তারপর রিভিশন দেবে। যা লিখেছ, তা আবারও পড়বে।

না পারলে ঘাবড়াবে না

কোনো একটা প্রশ্নের উত্তর তুমি না–ও জানতে পারো। কোনো পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কঠিন হতে পারে। তাতে ঘাবড়াবে না। তোমাদের পরীক্ষাপদ্ধতিতে একটা–দুটো ভুল কোনো ক্ষতি করে না। আবার কোনো পরীক্ষা যদি সবার খারাপ হয়, তাহলেও কর্তৃপক্ষ সেই ব্যাপারে একটা উদার ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।

শরীরের যত্ন নাও

ঠিকভাবে খাবে। ঘরে তৈরি হজম হয়, এমন পুষ্টিকর খাবার। অন্য কোনো সমস্যা না থাকলে পরীক্ষার হলে যাওয়ার আগে বা পড়ার সময় পরিমাণমাফিক মিষ্টি খেতে পারো। কারণ চিনি সহজে দ্রুত তোমাকে শক্তি দেবে। বাড়িতে বা স্কুলে যেন মশা কামড়াতে না পারে। অর্থাৎ তোমাকে সুস্থ থাকতে হবে। বাইরের খাবার খেয়ো না। সহ্য না হলে আইসক্রিমও না। রাস্তার আচার, ঝালমুড়ি, চটপটি—নো নো। ফোটানো পানি ছাড়া পানি খাবে না। ঠান্ডা লাগাবে না, গরমও না।

হাল ছাড়বে না

ভালো হোক, মন্দ হোক—সব পরীক্ষা মন দিয়ে দেবে। হাল ছাড়বে না। আমরা দেখেছি, ‘পরীক্ষা খারাপ দিয়েছি, আর দেব না’ বলার পর ওই সাবজেক্টে বেশি নম্বর পেয়েছি।

পরীক্ষার ফল ভালো করা ভালো

পরীক্ষার ফল ভালো করা ভালো। ভালো ফলের সবচেয়ে বড় উপকারিতা হলো, মা–বাবা খুশি হন। সবাইকে বলতে পারেন, আমার ছেলে বা মেয়ে এই করেছে...তুমি ভবিষ্যতে যা পড়তে চাও, তা পড়তে পারবে। বৃত্তি পাবে।

তবে পরীক্ষার ফল খারাপ হলেই জীবন শেষ হয়ে যায় না।

আসলে জীবনে শেষ পর্যন্ত কে ভালো করবে, কে ভালো করবে না, তার সঙ্গে পরীক্ষার ফলের সম্পর্ক কম। ইঞ্জিনিয়ার–চিকিৎসক না হলেও জীবন সফল হয়।

কিন্তু আমরা আপাতত চাইব তোমাদের সবার সাফল্য। পরীক্ষার ফল তোমাদের ভালো হোক।

সে জন্য পড়া শুরু করো, লেখা শুরু করো। কবে শুরু করব? কখন?

এখনই। এই মুহূর্তেই। এই কিশোর আলোটা পড়া হয়ে গেলে পরীক্ষার পড়া পড়তে শুরু করো। পরীক্ষা শেষ করে আবার কিশোর আলো পড়ো।

সারা বছর কী করবে

প্রচুর বাইরের বই পড়বে। বাড়িতে কিশোর আলো রাখবে। সারা বছর রুটিন করে নিয়মিত পড়বে। নিয়মিত গণিতচর্চা করবে। নিয়মিত বাংলা আর ইংরেজি ফ্রি রাইটিং প্র্যাকটিস করবে। গণিত অলিম্পিয়াডসহ বিভিন্ন অলিম্পিয়াডে যোগ দেবে। বাংলাবিদের মতো যে অনুষ্ঠানগুলো আছে, সেসব দেখতে পারো।

যা করতেই হবে

পরীক্ষার আগের এক মাসে মুঠোফোন, ফেসবুক, স্মার্টফোন বন্ধ থাকবে। ফেসবুক থাকলে ডিঅ্যাকটিভেট করে রাখো।

যা করবে না

প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে কি না, জানার চেষ্টা করবে না। ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র জোগাড় করার চেষ্টা করবে না। ফাঁস হওয়া প্রশ্নে জিপিএ–৫ পাওয়ার চেয়ে সততার পরিচয় দেওয়া ফেল করা ছাত্র আমার কাছে বেশি দামি। বেশি আদরের। বেশি সম্মানের। সততাই সবচেয়ে ভালো উপায়। এটা সব সময় সব বিষয়েই প্রযোজ্য।