এ কোন নতুন সাদা!

গত শনিবার মেয়েদের পর্তুগিজ ফুটবল কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হয় বেনফিকা আর স্পোর্তিং লিসবন। দারুণ শুরু পায় বেনফিকা, ৩-০ গোলে এগিয়ে যায় কিছুক্ষণের মধ্যেই। খেলা চলছিল নির্বিঘ্নেই, কিন্তু ম্যাচের ৪৪ মিনিটে গ্যালারিতে থাকা একজন দর্শক হঠাৎ করেই অজ্ঞান হয়ে পড়েন। ঘটনাটি টের পেয়ে এক মুহূর্তও দেরি না করে রেফারি ক্যাটেরিনা ক্যাম্পোস, খেলা থামিয়ে দিলেন সঙ্গে সঙ্গে। ততক্ষণে বেনফিকা আর লিসবন—দুই দলের মেডিকেল টিমই ছুটে গেছে ওই দর্শকের কাছে। তাদের শুশ্রূষায় গুরুতর কিছু হওয়ার আগেই স্থিতীশীল হয় দর্শকের অবস্থা।

মেডিকেল টিম তাদের কাজ শেষ করে ফিরে যাওয়ার সময় এগিয়ে আসেন রেফারি ক্যাম্পোস। পকেটে হাত দিয়ে তাঁকে কার্ড বের করতে দেখে সবাই তো অবাক! চিকিৎসা করার জন্যও কার্ড দেখতে হবে নাকি? কিন্তু যখন ক্যাম্পোস দুই দলের মেডিকেল টিমকে সাদা কার্ড দেখান, করতালিতে ফেটে পড়ল পুরো স্টেডিয়াম। এতে অংশ নিলেন দুই দলের খেলোয়াড় আর কোচিং স্টাফরাও।

তোমরা হয়তো ভাবছ, সাদা কার্ডের বিষয়টা আসলে কী? কেন রেফারি সাদা কার্ড দেখালেন, কেনইবা দর্শকেরাও আনন্দিত হয়ে উঠলেন? পর্তুগিজ ফুটবল ফেডারেশনের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, মাঠে রেফারি এখন দুটির পরিবর্তে তিনটি কার্ড ব্যবহার করবেন। লাল আর হলুদ কার্ডের সঙ্গে যোগ করা হয় সাদা কার্ড। খেলার মধ্যে প্রশংসা করতে এবং ফেয়ার প্লে বোঝানোর জন্য রেফারি সাদা কার্ড ব্যবহার করবেন বলে জানানো হয়। দ্রুততম সময়ে অসুস্থ দর্শকের সেবার জন্য ছুটে আসায় দুই দলের মেডিকেল টিমের কাজের প্রশংসা করে সাদা কার্ড দেখান ক্যাম্পোস। রেফারির ইঙ্গিত বুঝতে পারেন দর্শকেরাও, সম্মান জানান তারাঁও।

ফুটবলে লাল আর হলুদ কার্ডের ব্যবহার শুরু হয়েছিল ৩৩ বছর আগে, ১৯৭০ সালে। ইংলিশ রেফারি কেন আস্টন সবাইকে কার্ডের ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা দেন। আস্টন মূলত কার্ড ব্যবহার করার বুদ্ধিটা পেয়েছিলেন আরও আগে। পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি ম্যাচে কার্ড ব্যবহার করার পর আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৭০ বিশ্বকাপে ফিফা কার্ডের সঙ্গে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দেয়। প্রথম দিকে কিছুটা অদ্ভুত মনে হলেও বর্তমান সময়ে ফুটবলের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে কার্ড।

এত দিন পর্যন্ত খেলা পরিচালনা করার জন্য দুটি কার্ডই ব্যবহার করেছেন রেফারিরা। হালকা ফাউলের শাস্তি হিসেবে খেলোয়াড়দের দেখানো হতো হলুদ কার্ড, আর গুরুতর ফাউলের ক্ষেত্রে লাল কার্ড। কিন্তু এবারই প্রথম সাদা কার্ড দেখল ফুটবল–বিশ্ব।

শেষ পর্যন্ত অবশ্য বেনফিকার কাছে ৫-০ গোলে হেরে যায় লিসবন। তবে দুই দলের সমর্থকেরা সন্তুষ্টি নিয়েই বাড়ি ফিরেছেন। কারণ, জয়টা শেষমেশ ফুটবলেরই!