ক্রিকেট বিশ্বকাপের ১০টি মজার ঘটনা

চলছে ক্রিকেট বিশ্বকাপ। ক্রিকেট ভক্তরা খেলা উপভোগ করার পাশাপাশি বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে আলাপ করছে।প্রতি বিশ্বকাপেই মজার কিছু ঘটনা ঘটে, নতুন কোনো ঘটনার জন্ম হয়। ভক্তদের মনে এগুলো রয়ে যায় মজার স্মৃতি হিসেবে। ক্রিকেট বিশ্বকাপের এমন কিছু মজার ঘটনা নিয়ে এই লেখা।

ছেলেদের আগে মেয়েদের বিশ্বকাপ

বিশ্বের যত খেলা আছে, সেগুলোর বেশির ভাগ বিশ্বকাপের যাত্রা শুরু ছেলেদের বিশ্বকাপ দিয়ে। কিন্তু এর উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম ক্রিকেট বিশ্বকাপ। ক্রিকেটে ছেলেদের আগে শুরু হয়েছিল মেয়েদের বিশ্বকাপ। আইসিসি ও কোটিপতি ব্যবসায়ী স্যার জ্যাক হেওয়ার্ডের উদ্যোগে এই বিশ্বকাপের আয়োজন করা হয়। এই বিশ্বকাপের জন্য তিনি ৪০ হাজার পাউন্ড প্রদান করেন।

এই টুর্নামেন্টে অংশ নেয় ছয়টি দল। দেশগুলো হলো ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো এবং জ্যামাইকা। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক একাদশ ও ইয়াং ইংল্যান্ড বলে আরও দুটি দল এই টুর্নামেন্টে অংশ নেয়। ২০ থেকে ২৯ জুলাই রাউন্ড রবিন পদ্ধতিতে ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হয়, যার ভেন্যু ছিল ইংল্যান্ড। ছয় ম্যাচে পাঁচ জয় ও এক পরাজয়ে ২০ পয়েন্ট অর্জন করা ইংল্যান্ড টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়। এই টুর্নামেন্টের সাফল্যে এর ঠিক দুই বছর পর আইসিসি পুরুষদের ওয়ার্ল্ড কাপের আয়োজন করে। এ বছর মেয়েদের বিশ্বকাপ আয়োজনের ৫০ বছর পূর্তি হতে যাচ্ছে।

ভাইদের বিশ্বকাপ

রিচার্ড, ব্যারি ও ডেইলে হ্যাডলি

১৯৭৫ ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপকে ভাইদের বিশ্বকাপ নামে ডাকা যেতে পারে। সে সময় আটটি দল বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেছিল। অস্ট্রেলিয়ায় ছিল দুই চ্যাপেল, ইয়ান ও গ্রেগ, আপন দুই ভাই। পাকিস্তানে ছিল দুই মোহাম্মদ, মুশতাক ও সাদিক মোহাম্মদ। কিন্তু তাঁদের ছাড়িয়ে যায় নিউজিল্যান্ড, যে দলে তিনজন হ্যাডলি ছিল, রিচার্ড, ব্যারি ও ডেইলে, আর সেই সঙ্গে হেওয়ার্থ ছিল দুজন, জিওফ হেওয়ার্থ ও হেডলে হেওয়ার্থ, সেই হিসেবে নিউজিল্যান্ড দলের ১১ জনের মধ্যে দুই পরিবারের পাঁচজন সদস্য ছিলেন দলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে আপন ভাই না হলে পাকিস্তান দলের হয়ে দুই চাচাতো ভাই এই বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছিলেন। তাঁরা হলেন দলের অধিনায়ক মজিদ খান ও ইমরান খান। সেবার বিশ্বকাপ জয় করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলেও ছিলেন দুই চাচাতো ভাই। দলের অন্যতম সদস্য ল্যান্স গিবসের চাচাতো ভাই ছিলেন দলের অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েড।

প্রথম দিনেই রেকর্ড যত

৭ জুন ১৯৭৫ সালের বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচের আয়োজন করা হয়। প্রথম দিনে চারটি খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। গ্রুপ এ-এর প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয় ভারত। ম্যাচটি ছিল ৬০ ওভারের। ম্যাচে ইংল্যান্ড টসে জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয়। ওপেনার ব্যাটার ডেনিস অ্যামিস ১৩৭ রান করেন। আর ইংল্যান্ড চার উইকেট হারিয়ে করে ৩৩৪ রান। এ দুটোই রেকর্ড হয়ে যায়। সেই প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে কোনো দল ৩০০-এর বেশি রান করা। ডেনিসের রেকর্ড অবশ্য সেদিনই ভেঙে যায়। একই দিনে পূর্ব আফ্রিকার বিরুদ্ধে নিউজিল্যান্ডের গ্লেন টার্নার ১৭১ রান করেন।

গ্রুপ বি–এর প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া ৭৩ রানে পাকিস্তানকে হারায়, সে ম্যাচে ডেনিস লিলি ৩৪ রানে ৫ উইকেট নেন, যা আন্তর্জাতিক ম্যাচে কোনো বোলারের প্রথম ৫ উইকেট লাভ। দিনের অপর ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হয় শ্রীলঙ্কা। সে ম্যাচে শ্রীলঙ্কা ৮৬ রানে অলআউট হয়ে যায়। এটাও একটি রেকর্ড। এর আগে কোনো দল এক দিনের ম্যাচে ১০০ রানের নিচে অলআউট হয়নি।

উদ্বোধনী ম্যাচে লজ্জার রেকর্ড

প্রথম বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে আরও একটি বিশেষ রেকর্ড হয়েছিল, যা আর কোনো দিন ভাঙবে বলে মনে হয় না। প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের চার উইকেটে করা ৩৩৪ রানের জবাবে ভারত তিন উইকেটে করে ১৩২ রান। ফলে ভারতকে ২০৮ রানের এক বিশাল ব্যবধানে পরাজয় বরণ করতে হয়। যা একটা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হারার একটা রেকর্ড হয়ে ছিল। তবে এই বিশাল ব্যবধানে পরাজয়ের জন্য ভারতের অন্যতম সেরা ব্যাটার সুনীল গাভাস্কারকে দায়ী করা হয়। ম্যাচে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যাট করে ১৭৪ বল খেলে একটি বাউন্ডারির সাহায্যে গাভাস্কার করেন মাত্র ৩৬ রান! ওয়ানডে ক্রিকেটে আর কারও কোনো দিন এই রেকর্ড ভাঙার কোনো সুযোগ আছে বলে মনে হয় না!

বোলারদের জন্য বাউন্সার

প্রথম বিশ্বকাপ শুরুর ঠিক আট দিন আগে আইসিসি নিয়ম করে দেয়, ব্যাটারদের মাথার ওপর দিয়ে বল গেলে সেটিকে নো বল হিসেবে ধরা হবে।

প্রথম ও শেষ ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান

ইংল্যান্ডের খেলোয়াড় ডেনিস অ্যামিসের দলে অভিষেক ঘটে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ দিয়ে। সে ম্যাচেই তিনি শতক হাঁকান। অবসর নেওয়ার আগে শেষ যে ম্যাচে তিনি খেলেছিলেন, সে ম্যাচেও তিনি সেঞ্চুরি করেছিলেন। আর এর মধ্য দিয়ে তিনি বিশ্ব ক্রিকেটে এমন এক বিরল রেকর্ডের অধিকারী, যা ওয়ানডে ক্রিকেটে আর মাত্র একজনের রয়েছে। প্রথম ও শেষ এক দিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে সেঞ্চুরি করা অন্য আরেকজন হলেন গ্রেট ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটার ডেসমন্ড হেইন্স।

রেকর্ড বুকে নাম

ফরসাত আলী মুঘলের জন্ম পাকিস্তানে। কিন্তু তিনি কেনিয়ার নাগরিকত্ব গ্রহণ করে পূর্ব আফ্রিকার হয়ে প্রথম বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পান। বিশ্বকাপের তিনটি ম্যাচে তাঁর রান ৫৭ ও তিন ম্যাচ বল করে উইকেট–শূন্য থাকেন। আহামরি পারফরম্যান্স না হলেও এক দিনের ক্রিকেটের রেকর্ড বুকে তাঁর নাম রয়েছে। তিনি বিশ্বের প্রথম খেলোয়াড়, যিনি দলের হয়ে একই সঙ্গে ব্যাটিং ও বোলিং ওপেন করেছিলেন। ৭ জুন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি এই কীর্তি গড়েন।

সংক্ষিপ্ত প্রোফাইল

ইউনুস বাদাত ছিলেন জাম্বিয়ার ক্রিকেটার। তাঁর প্রোফাইল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারের সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত প্রোফাইল। এই ব্যাটার পূর্ব আফ্রিকার হয়ে বিশ্বকাপে মোট দুটি ম্যাচ খেলে ১ রান করেন।

লক্ষণ দেখে বোঝা যায়

১৯৭৫ সালে ফারোখ ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন ভারতীয় দলের উইকেটরক্ষক। যে একটি ম্যাচে সেবার ভারত জিতেছিল, সেটি ছিল পূর্ব আফ্রিকার বিরুদ্ধে। সে ম্যাচের ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছিলেন ফারোখ ইঞ্জিনিয়ার। নামের শেষে ইঞ্জিনিয়ার ছিল তাঁর পদবি। তিনি জাতিতে ছিলেন পার্সি। তিনি এখন পর্যন্ত ভারতের একমাত্র পার্সি ক্রিকেটার। তিনি যখন কলেজে পড়েন, সে সময় তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও অভিনেতা শশী কাপুরের সঙ্গে ক্লাসে গল্প করছিলেন। সে সময় শিক্ষক সেটা খেয়াল করে তাঁকে লক্ষ্য করে ডাস্টার ছুড়ে মারেন। সবাইকে অবাক করে দিয়ে সেই অবস্থায় ইঞ্জিনিয়ার সেটাকে ধরে ফেলেন।

পানি বহনকারী থেকে হিরো

১৯৭৫-এর বিশ্বকাপের সেরা বোলারের নাম গ্যারি গিলমোর। অস্ট্রেলিয়ার এই বোলার ১৯৭৫-এর বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেন। মাত্র দুটি ম্যাচ খেলে মোট ১১টি উইকেট নেন তিনি, যার একটি সেমিফাইনাল ও অপরটি ফাইনাল। সেমিফাইনালে তিনি ৬ উইকেট ও ফাইনালে তিনি ৫ উইকেট নিয়ে বিশ্বকাপের সবচেয়ে সেরা স্ট্রাইক বোলার হয়ে রেকর্ড বুকে নাম অমর করে রেখেছেন। বিশ্বকাপের সেরা বোলার হয়েও তিনি বাকি ম্যাচগুলোতে খেলতে পারেননি কেন? কারণ, টিম ম্যানেজমেন্ট তাঁকে গ্রুপ পর্বে দ্বাদশ খেলোয়াড় হিসেবে খেলানোর যোগ্য মনে করেছিলেন। ফলে সেসব ম্যাচে তিনি অন্য খেলোয়াড়দের জন্য মাঠে তোয়ালে ও পানি নিয়ে যেতেন।