ইন্টারের সামনে কেন অসহায় আত্মসমর্পণ এসি মিলানের

শক্তিমত্তার বিচারে খানিকটা এগিয়েছিল ইন্টার মিলান। ম্যাচের ফলাফলও প্রমাণ করল সেটা। উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালের বহুল আলোচিত মিলান ডার্বির প্রথম লেগ মিস করেছেন রাফায়েল লিয়াও, এবারের মৌসুমে এসি মিলানের আক্রমণে নেতৃত্ব তিনিই দিয়েছেন। দলের সেরা খেলোয়াড়কে ইনজুরির কারণে হারানোয় তাই কিছুটা রক্ষণাত্মক কৌশলের আশ্রয় নিয়েছিলেন লাল-কালো শিবিরের কোচ স্টেফানো পিওলি।

এসি মিলানের ৪-২-৩-১ ফরমেশনে রাফায়েল লিয়াও খেলতেন লেফট উইংগার হিসেবে। সেখানে নামানো হলো অ্যালেক্সিস সালেমেকারসকে। হালকা-পাতলা গড়নের এই বেলজিয়ান দ্রুতগতির হলেও ড্রিবলিংয়ে দুর্বল। ম্যাচের মধ্যে তাই লিয়াওর অভাব হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে রোজোনেরিরা।

ম্যাচের শুরু থেকে লোয়ার ডিফেন্সিভ লাইন নিয়ে খেলেছে মিলান। অন্যদিকে কাউন্টার অ্যাটাকিং ফুটবলে বারবার আক্রমণ চালিয়েছে ইন্টার। ৩-৫-২ ফরমেশনে খেলতে নামা ইন্টারের দুই উইংব্যাক ডিমারকো ও ডামফ্রিসকে আটকাতে ব্যর্থ হচ্ছিল মিলান। উইংব্যাকদের দেওয়া ক্রসগুলো তটস্থ করে রেখেছিল ক্যালাব্রিয়া-কায়ের-তোমোরি-থিও হার্নান্দেজকে নিয়ে গড়া মিলানের রক্ষণভাগকে। গোল পেতে খুব বেশি দেরি করতে হয়নি লাওতারো মার্তিনেজদের। ম্যাচের মাত্র আট মিনিটে কর্নার থেকে আসা বল দারুণ দক্ষতায় শট মেরে গোলের খাতা খোলেন এডিন জেকো। মিলান অধিনায়ক ক্যালাব্রিয়াও ঠিকমতো মার্ক করতে পারেননি।

গোল পাওয়ার পর রীতিমতো দুর্ধর্ষ হয়ে ওঠে ইন্টার। আগের চেয়েও ভয়াবহ আক্রমণ নিয়ে এগিয়ে আসে মিলানের ডি-বক্সে। ফরোয়ার্ডে থাকা জেকো, লাওতারো মার্তিনেজদের সঙ্গে মিডফিল্ড থেকে যোগ দিচ্ছিলেন বারেল্লা ও মিখিতারিয়ান। একের পর এক দৃষ্টিনন্দন পাসিং এবং ডায়নামিক পজিশনিংয়ের কারণে মিলানের সামর্থ্যই ছিল না তাদের আটকানোর। দ্বিতীয় গোল পেতে তাই খুব বেশি দেরি করতে হয়নি ইন্টারকে।

ঠিক ১১ মিনিটের সময় লেফট উইংব্যাক ডিমারকোর মাইনাস করা পাস পেয়ে যান মিখিতারিয়ান, মিডফিল্ড থেকে দৌড়ে এসে সান্দ্রো তোনালিকে প্রায় ছিটকে ফেলে দিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে গোল করেন তিনি। জমজমাট লড়াইয়ের উত্তাপ ছড়ানো মিলান ডার্বি তখন একপেশে আধিপত্যের কবলে। ইতালির সান সিরো স্টেডিয়ামের মিলান–ভক্তদের মধ্যে পিনপতন নীরবতা। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে এমন অসহায় আত্মসমর্পণ মেনে নেওয়া কঠিন।

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে ১৭ মিনিটে দলের আরেক সেরা পারফর্মার বেনাসেরকে হারায় এসি মিলান। ইনজুরির কারণে মাঠ ছেড়ে উঠে যেতে হয় তাঁকে। এরপর যেন আরও খেই হারিয়ে বসে তারা। এডিন জেকো আর লাওতারো মার্তিনেজের বোঝাপড়ায় আরও গোলের সুযোগ তৈরি করে ইন্টার। কিন্তু গোলরক্ষক মাইনানের দৃঢ়তায় দুটি নিশ্চিত গোলের হাত থেকে বেঁচে যায় এসি মিলান।

হাফ টাইমের পর কিছুটা গুছিয়ে নিয়ে খেলার চেষ্টা করেন স্টেফানো পিওলির শিষ্যরা। কিন্তু কোনো সফলতার দেখা মেলেনি। ইন্টারের রক্ষণদুর্গ একবারও ভাঙতে পারেনি জিরু-দিয়াজরা। মূলত মিডফিল্ডের বুদ্ধিদীপ্ত ব্যবহারে প্রথম লেগে আয়েশি জয় পেয়েছেন ইন্টার কোচ সিমোনে ইনজাগি। নিয়মিত মিডফিল্ডার ব্রোজোভিচের বদলে মিখিতারিয়ানকে খেলানোর চাল কাজে লেগেছে তাঁর। মিখিতারিয়ানের ড্রিবলিং, দ্রুত রক্ষণ ভেঙে ঢোকার ক্ষমতা মিলানকে ছিটকে ফেলেছে ম্যাচের বাইরে। ৩৭ বছর বয়সী এডিন জেকোও সমানভাবে তাল মিলিয়ে খেলেছেন। প্রতিপক্ষের পায়ে বল গেলে প্রেসিংয়ের মাধ্যমে দ্রুত সেটার দখল নেওয়ার কৃতিত্ব দিতে হবে বারেল্লা ও চালাহোনুলুকে। আর মিলানের নখদন্তহীন আক্রমণভাগকে একদমই জায়গা না দেওয়ার জন্য রক্ষণত্রয়ী দারমিয়ান-আচেরবি-বাস্তোনি পেয়েছেন কোচের প্রশংসা।

তবে দ্বিতীয় লেগের খেলা এখনো বাকি। রাফায়েল লিয়াও, বেনাসেরকে পেলে পূর্ণ শক্তির দল নিয়ে মাঠে নামবে মিলান। সেই ম্যাচে নগর প্রতিদ্বন্দ্বীদের লড়াই জমবে সমানে সমান। মর্যাদার লড়াইয়ে দুই দলই নিজেদের সর্বস্ব উজাড় করে দিয়ে নিশ্চিত করতে চাইবে ফাইনালের টিকিট।