এবারের বিশ্বকাপে যে পাঁচ ম্যাচ দেখতেই হবে

আজ শুরু হচ্ছে ক্রিকেটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসর আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ–২০২৩। ২০১৯ সালের মতো এবারও রাউন্ড রবিন পদ্ধতিতে চলবে বিশ্বকাপ। অর্থাৎ গ্রুপ পর্বে ১০টি দল প্রত্যেকে একটি করে ম্যাচ খেলবে প্রত্যেকের বিপক্ষে। সেখান থেকে পয়েন্ট তালিকার সেরা চার দল খেলবে সেমিফাইনাল। গ্রুপ পর্বে মোট ম্যাচ হবে ৪৮টি। গত বিশ্বকাপের দুই ফাইনালিস্ট নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের ম্যাচ দিয়ে মাঠে গড়াচ্ছে ক্রিকেট বিশ্বকাপ।

গ্রুপ পর্বে কোন ম্যাচগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকবেন দর্শকেরা? এই ৪৮ ম্যাচের মধ্যে সেরা পাঁচটি ম্যাচ বাছাই করেছে আইসিসি। গুরুত্বপূর্ণ পাঁচ ম্যাচের মধ্যে আছে বাংলাদেশের একটি ম্যাচও। চলো, আইসিসির চোখে সেরা পাঁচ ম্যাচ সম্পর্কে জানা যাক।

১. ভারত বনাম পাকিস্তান, ১৫ অক্টোবর-আহমেদাবাদ

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তানের ম্যাচ দেখতে উন্মুখ হয়ে বসে থাকেন ক্রিকেট-ভক্তরা। যাঁরা নিয়মিত ক্রিকেটের খোঁজখবর রাখেন না, তাঁরাও বসে পড়েন টিভির সামনে। আর এই দুই দলের খেলা যদি হয় বিশ্বকাপে, তাহলে তো কথাই নেই। প্রত্যাশা বেড়ে যায় আরও।

এক দিনের ক্রিকেট বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত দুই দলের মধ্যে লড়াই হয়েছে সাতবার। একবারও শেষ হাসিটা হাসতে পারেনি পাকিস্তান। সব কটি ম্যাচই জিতেছে ভারত। বিশ্বকাপের সর্বশেষ লড়াইয়ে বৃষ্টি আইনে ৮৯ রানে জিতেছিল ভারত। সেই ম্যাচে রোহিত শর্মা করেছিলেন ১৪০। সেই রোহিত শর্মাই এবার ভারতকে নেতৃত্ব দেবেন। নিশ্চয়ই চাইবেন, ২০১৯ সালের পুনরাবৃত্তি করতে। তবে তাঁর প্রতিপক্ষ অধিনায়ক বাবর আজমও চাইবেন অধরা জয়টা তুলে নিতে। এক দিনের ক্রিকেটে তিনি বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যান। আশা করা যায়, এই দুই দলের মাঠের লড়াইটা এবারও বেশ উপভোগ্য হবে।

২. ইংল্যান্ড বনাম নিউজিল্যান্ড, আহমেদাবাদ-৫ অক্টোবর

বিশ্বকাপের সর্বশেষ আসরের দুই ফাইনালিস্ট ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড। ক্রিকেটবোদ্ধাদের মতে, বিশ্বকাপ ইতিহাসের সেরা ফাইনাল ম্যাচ ছিল ওটা। সুপার ওভারে গিয়েও শেষ হয়নি নাটকীয়তা। দল দুটি তাঁদের বিশ্বকাপ মিশন আবার সেখান থেকেই শুরু করতে চাইবে। প্রথম জয় যেকোনো দলকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। তাই দুটি দলই চাইবে, নিজেদের প্রথম ম্যাচ জিতে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করতে।

নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেইন উইলিয়ামসন হাঁটুর ইনজুরিতে ভুগছেন। প্রস্তুতি ম্যাচে ফিফটি করলেও প্রথম ম্যাচ বেঞ্চেই বসে থাকতে হবে তাঁকে। এমনিতে দারুণ শক্তিশালী নিউজিল্যান্ড দল। যদিও সংশয় রয়েছে অভিজ্ঞ বোলার টিম সাউদিকে নিয়ে।

অন্যদিকে দুর্দান্ত ছন্দে আছে ইংল্যান্ড দল। ২০১৯ সালের বিশ্বকাপের পরে ২০২২ সালে জিতেছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। নিজেদের দখলে থাকা বিশ্বকাপটা নিশ্চয়ই হাতছাড়া করতে চাইবে না জস বাটলারের দল।

৩. ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া, চেন্নাই-৮ অক্টোবর

নানা কারণে এ ম্যাচটি গুরুত্বপূর্ণ। দুটি দলই এই ম্যাচের মাধ্যমে তাদের বিশ্বকাপ মিশন শুরু করবে। নিজেদের প্রথম ম্যাচে উড়ন্ত সূচনা করতে চাইবে দুই দলই। এ ম্যাচে ৭০০-এর বেশি রান হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। প্রথম ম্যাচেই পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বাকি দলগুলোকে বুঝিয়ে দিতে চাইবে, বিশ্বকাপের দৌড়ে তারাই সবার চেয়ে এগিয়ে। অন্যদিকে অজিরাও নিশ্চয়ই প্রথম ম্যাচটা জিতে প্রমাণ করতে চাইবে, বিশ্বকাপের দৌড়ে তাঁরাও পিছিয়ে নেই। ১৯৮৭ সালে প্রথম বিশ্বকাপটা যে ভারতের মাটিতেই জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া।

৪. অস্ট্রেলিয়া বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা, লক্ষ্ণৌ-১৩ অক্টোবর

২০১৯ সালের বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা মাত্র তিনটি ম্যাচ জিতেছিল। তবে মজার বিষয় হলো, এর মধ্যে একটি ম্যাচ ছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ফাফ ডু প্লেসির দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ম্যাচটি জিতেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে এবারের বিশ্বকাপে এই তারকাকে দেখা যাবে না।

প্রোটিয়ারা যদি দিল্লিতে তাঁদের প্রথম ম্যাচটি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জিততে পারে, তবে এ ম্যাচটি তাঁদের জন্য মহা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। কারণ, ২০১৫ সালের পর আর নকআউট পর্বে খেলতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম দুটি ম্যাচ জিতে নিশ্চয়ই এবারের আসরের সেমিফাইনাল খেলার সম্ভাবনা এগিয়ে রাখতে চাইবে টেম্বা বাভুমার দল।

পরপর দুটি কঠিন পরীক্ষার সামনে পড়তে হবে অস্ট্রেলিয়াকে। প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক ভারত। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গেও ম্যাচ জেতাটা নিশ্চয়ই সহজ হবে না। বিশ্বকাপের ঠিক আগেই দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে সিরিজ হেরে এসেছে অস্ট্রেলিয়া।

৫. বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্তান, ধর্মশালা-৭ অক্টোবর

বাংলাদেশের নামটি দেখে হয়তো কেউ কেউ অবাক হতে পারেন। তবে ভুলে গেলে চলবে না, আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপের সুপার লিগ বাংলাদেশ শেষ করেছে সেরা তিনে থেকে। সবার ওপরে নিউজিল্যান্ড। এরপরই অবস্থান ইংল্যান্ড ও বাংলাদেশের। পয়েন্ট তালিকায় দুই দলের অর্জন ১৫৫ হলেও রান রেটে ইংল্যান্ড বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে যায়। ভারত, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়ার মতো দল ছিল বাংলাদেশের চেয়ে নিচে। সুপার লিগে বাংলাদেশের এই শক্তিই এগিয়ে নিতে পারে বিশ্বকাপে।

প্রথম ম্যাচে তুলনামূলক কম শক্তিশালী প্রতিপক্ষ পেয়ে বাংলাদেশ তাই দুর্দান্ত সূচনা করতে চাইবে। এ ধরনের বড় টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ নিঃসন্দেহে আফগানিস্তানের চেয়ে এগিয়ে থাকবে। এ জন্য অবশ্য টপ অর্ডারের বড় ভূমিকা রাখতে হবে। লিটন দাস ও সাকিব আল হাসান হতে পারেন বাংলাদেশের তুরুপের তাস।

আফগানিস্তানও নিশ্চয়ই ছেড়ে কথা বলবে না বাংলাদেশকে। তাঁদের মূল শক্তির জায়গা বোলাররা। রশিদ খান, মুজিব উর রেহমান ও ফজলহক ফারুকি বর্তমানে দুর্দান্ত ফর্মে আছেন। তাঁরা ঠিকভাবে জ্বলে উঠতে পারলে যেকোনো দলের জন্য হুমকি হতে পারেন। বাংলাদেশ দর্শকদের আশা কতটা পূরণ করতে পারবে, তার অনেকটাই নির্ভর করবে এই ম্যাচের ওপর।

সূত্র: আইসিসি