আইপিএলের নিলামে কামিন্স ও স্টার্ককে নিয়ে ‘কাড়াকাড়ি’ হলো যে কারণে

আইপিএল ট্রফিছবি: বিসিসিআই

কামিন্সকে নিয়ে অতটা আশা হয়তো ছিল না, কিন্তু আট বছর পর স্টার্কের অন্তর্ভুক্তিতে আইপিএলের নিলাম যে ‘হটকেক’ হয়ে উঠবে, সে ধারণা করেছিলেন অনেকেই। ধারণাটাই শেষ পর্যন্ত সত্যি হলো। তবে শুধু স্টার্কই নন, কামিন্সকে নিয়েও বাধল হুলুস্থুল কাণ্ড, আইপিএলের নিলামে তৈরি হলো ইতিহাস।

দুবাইয়ে আজ বসেছিল ২০২৪ আইপিএলের নিলাম। সেখানেই পূর্ববর্তী আইপিএলের রেকর্ড চুরমার করেছেন অস্ট্রেলিয়ান দুই বোলার। বিশ্বকাপ জিতে শত কোটি ভারতীয়র মন ভেঙেই শান্ত হননি তাঁরা, এবার এসেছেন আইপিএলের সব রেকর্ড চুরমার করতে। গত বছরের নিলামে স্যাম কারেনের জন্য ১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা খরচ করেছিল পাঞ্জাব কিংস। পাঞ্জাবের সেই রেকর্ড টিকল না এক মৌসুমও। দুই ঘণ্টার ব্যবধানে অস্ট্রেলিয়ান দুই বোলারকে কিনতে সেই রেকর্ড চুরমার করল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ও কলকাতা নাইট রাইডার্স। অস্ট্রেলিয়ান এই জুটিকে নিয়ে আইপিএল দলগুলোর মাতামাতি কেন? কেনই তাঁদের পেছনে দেদার খরচ করছে দলগুলো?

আইপিএলের শেষ তিন মৌসুম ধরে কামিন্স ছিলেন কলকাতার স্ট্রাইক বোলার। তাঁর অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের ওপর ভরসা করেই নিজেদের বোলিং লাইনআপ সাজাত কলকাতা নাইট রাইডার্স। কিন্তু গত বছর সে পরিকল্পনায় জল ঢেলে দেন কামিন্স নিজেই। নিলামের ঠিক কিছুদিন আগে আইপিএল থেকে নিজের নাম সরিয়ে নেন এই ফাস্ট বোলার। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল, অ্যাশেজ, ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ—ক্রিকেটের বড় ফরম্যাটে মনোযোগ দেওয়ার জন্য ফ্রাঞ্চাইজি লিগ থেকে সাময়িক বিরতি নিয়েছিলেন তিনি।

ক্রিকেট বিশ্বে, বিশেষ করে ভারতে, তাঁর সিদ্ধান্ত নিয়ে বেশ হাসি-তামাশাও হয়েছিল। কেনই–বা হবে না? ভারতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য সবাই যেখানে আইপিএল খেলতে মুখিয়ে ছিলেন, সেখানে আইপিএল থেকে নাম সরিয়ে নিচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক।

প্যাট কামিন্স
এএফপি

যতই সময় পার হয়েছে, ততই স্পষ্ট হয়েছে কামিন্সের আইপিএল না খেলার সিদ্ধান্ত। কামিন্সের সেই যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের ফলাফল অস্ট্রেলিয়া পেয়েছে পুরো বছরজুড়ে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছেন, রিটেইন করেছেন অ্যাশেজ। ভারতের মাটিতে ভারতকে হারিয়ে উঁচিয়ে ধরেছেন বিশ্বকাপ শিরোপা। অধিনায়ক হিসেবে এমন কোনো উচ্চতা নেই, যা তার ছুঁয়ে দেখা বাকি। অধিনায়ক কামিন্স বিশ্ব জয় করে ফেরত এলেন আইপিএলে। তাঁকে কেনার জন্য বাজারে আগুন লাগবে না তো, কার জন্য লাগবে?

আরও পড়ুন

প্যাট কামিন্সের নাম উঠতেই কুকুর-বিড়াল খেলা শুরু হলো দলগুলোর মধ্যে। কামিন্সের ভিত্তিমূল্য ছিল ২ কোটি রুপি। সেই দাম নিয়েই লড়াই শুরু হয় চেন্নাই সুপার কিংস ও মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের মধ্যে। হঠাৎই দৃশ্যপটে আসে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু, এরপর সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। লড়াইয়ে টিকতে না পেরে আত্মসমর্পণ করে চেন্নাই ও মুম্বাই। কুকুর–বিড়াল খেলা শুরু হয় বেঙ্গালুরুর আর হায়দরাবাদের। শেষ পর্যন্ত রেকর্ড ২০ কোটি ৫০ লাখ রুপিতে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বজয়ী অধিনায়ককে নিজেদের দলে ভেড়ায় সানরাইজার্স হায়দরাবাদ।

এরপরই দৃশ্যপটে এল মিচেল স্টার্কের নাম। মিচেল স্টার্কের গল্পটা অন্য রকম। বিশ্বের ক্রিকেটাররা যেখানে আইপিএল খেলার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকেন, সেখানে গত ৮ মৌসুম ধরে স্টার্ক ছিলেন অমাবস্যার চাঁদ। প্রতি মৌসুমেই জল্পনাকল্পনা শুরু হয় তাঁকে নিয়ে, এবার কি আইপিএলে নাম লেখাবেন স্টার্ক? প্রতিবারই সবাইকে হতাশ করে আইপিএলের দুই মাস প্রমোদ ভ্রমণে বের হন তিনি। সতীর্থরা যখন মাঠ কাঁপাতে ব্যস্ত, স্টার্ক তখন নিজের মতো ঘুরে বেড়ান দেশ-বিদেশ।

অতঃপর প্রায় ৮ বছর পর আইপিএলের নিলামে নাম লেখালেন স্টার্ক। মুহূর্তেই হুলুস্থুল পড়ে গেল আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজিদের মধ্যে। স্টার্কের মতো বিশ্বসেরা বোলারকে নিয়ে হুলুস্থুল পড়াই অবশ্য স্বাভাবিক।

মিচেল স্টার্ক
ছবি: এএফপি

নিলাম শুরুর আগেই স্টার্ককে ভেড়ানো পরিকল্পনা করেছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। আইপিএলের বাকি সব হটকেক একের পর এক বিক্রি হয়ে গেলেও শান্ত হয়ে বসে ছিল শাহরুখ খানের দল। ২ কোটি রুপি ভিত্তিমূল্যের স্টার্কের জন্য প্রথম বিড করেছিল কলকাতাই। অতঃপর লড়াইয়ে যোগ দেয় গুজরাট টাইটান্স। সাবেক দুই সতীর্থ গৌতম গম্ভীর ও আশিস নেহেরা যেন যুদ্ধে নেমেছিলেন স্টার্ককে দলে ভেড়ানোর জন্য। প্রায় ২০ মিনিট ধরে বাঁহাতি এই পেসারের জন্য লড়াই চলে দুই দলের মধ্যে। স্টার্কের নিলামকে কোনো থ্রিলার সিরিজের একটি পর্ব বলে চালিয়ে দিলেও খুব একটা ভুল হবে না।

কামিন্সের দামি খেলোয়াড়ের রেকর্ড টিকল মাত্র দুই ঘণ্টা। কামিন্সকে পেছনে ফেলে জায়গাটা দখল করে নিলেন তাঁরই সতীর্থ মিচেল স্টার্ক। ২৪ কোটি ৭৫ লাখ রুপিতে স্টার্ককে দলে ভেড়াল কলকাতা নাইট রাইডার্স। আইপিএল ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামি খেলোয়াড় এখন তিনিই।

আরও পড়ুন

আইপিএলে বিশাল অঙ্কে বিক্রি হওয়ার একটা দুর্নামও আছে বৈকি। শেষ কয়েক মৌসুমে সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হওয়া খেলোয়াড়দের কেউই নিজের নামের কিংবা দামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। যুবরাজ সিং, সাম কারেন, বেন স্টোকস থেকে ক্রিস মরিস; সবাইই ছিলেন নিজেদের ছায়া হয়ে। সেই দুর্নাম কি এবার ছাড়াতে পারবেন কামিন্স-স্টার্করা?