চেলসি-পিএসজি ম্যাচে হাতাহাতি হলো কেন

যুক্তরাষ্ট্রের মেটলাইফ স্টেডিয়ামে আবহাওয়াটা কেমন ছিল? এ প্রশ্নের উত্তরে সবার জবাব কমবেশি একই থাকবে। ভরদুপুরে ৩১ ডিগ্রি তাপমাত্রায় মাঠের ভেতরে–বাইরে সেদ্ধ হওয়ার দশা সবার। কিন্তু এই প্রচণ্ড গরমেও যেন জমে গেলেন পিএসজির প্রত্যেক খেলোয়াড়। কারণটা একজনই—চেলসির নতুন ‘নাম্বার টেন’ কোল পালমার! অপ্রতিরোধ্য পিএসজিকে একাই আটকে দিয়েছেন তিনি। ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে ৩-০ গোলে পিএসজিকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছে ইংল্যান্ডের ক্লাব চেলসি।

আবহাওয়ার মতো মাঠও ছিল উত্তপ্ত। ম্যাচশেষে দুই দলের খেলোয়াড়েরা জড়িয়ে পড়েন হাতাহাতিতে। তবে একেবারেই যে নাটকীয়তা ছিল না, তা কিন্তু নয়। একপেশে ম্যাচের মূল নাটকীয়তা বলা যায় সেটিকেই। শুরুটা হয়েছিল দ্বিতীয়ার্ধে। মূলত, প্রথমার্ধেই ম্যাচ থেকে ছিটকে গিয়েছিল পিএসজি। ০-৩ গোলে পিছিয়ে থাকা পিএসজি খেলোয়াড়েরা ছিলেন আগ্রাসী মনোভাবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হার যখন নিশ্চিত হয়ে উঠল, আগ্রাসী মনোভাব খেলার বাইরেও বেরিয়ে এল। ফাঁদে পা দিল চেলসিও। ম্যাচের মাঝে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন চেলসির এনজো ফার্নান্দেজ ও পিএসজির আশরাফ হাকিমি। হাকিমিকে সরাসরি বর্ণবাদী বলে বসেন এনজো। সব ছাড়িয়ে যায় ম্যাচের ৮৩ মিনিটে। চেলসি লেফট ব্যাক মার্ক কুকুরেল্লার চুল টেনে ধরেন পিএসজির মিডফিল্ডার হোয়াও নেভেস। প্রথমে ফাউল ভেবে হলুদ কার্ড দিলেও পরে ভিএআর চেক করে সরাসরি লাল কার্ড দেন রেফারি। ততক্ষণে অবশ্য ম্যাচে পিএসজির সম্ভাবনা শেষ।

চেলসি ফাইনালে মাঠে নেমেছিল একেবারে ঠিকঠাক হোমওয়ার্ক করে। নিয়মিত অধিনায়ক রিস জেমস প্রথম একাদশে ফিরেছেন অনেক দিন পর। আর ফিরেই যেন টুঁটি চেপে ধরলেন পিএসজির আক্রমণের।

যদিও ম্যাচ শুরুর আগে জয়ের পাল্লা পিএসজি ঝুঁকে ছিল পিএসজির দিকেই। পুরো টুর্নামেন্টে অসাধারণ ফর্ম, হেভিওয়েট দলগুলোকে রীতিমতো তুলাধোনা করেছে ফরাসি ক্লাবটি। লুইস এনরিকের অধীন তারা যেন পৌঁছে গিয়েছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে। চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে আসা দলটিকে টেক্কা দেওয়া কি এত সহজ? পিএসজির দিকেই ঝুঁকে ছিল ম্যাচের পাল্লা। কিন্তু টুর্নামেন্টের ফাইনাল বলে কথা। ফাইনালে আগের ফর্ম, শিরোপা—সবকিছু তুচ্ছ। সেখানে সবকিছুই নির্ভর করে মাঠের পারফরম্যান্সের ওপর। আর সেই পারফরম্যান্সেই পিএসজিকে ছিটকে ফেলেছে চেলসি।

পিএসজিকে ধরাশায়ী করেছেন পালমার। ছবি: এক্স

চেলসি ফাইনালে মাঠে নেমেছিল একেবারে ঠিকঠাক হোমওয়ার্ক করে। নিয়মিত অধিনায়ক রিস জেমস প্রথম একাদশে ফিরেছেন অনেক দিন পর। আর ফিরেই যেন টুঁটি চেপে ধরলেন পিএসজির আক্রমণের। সত্যি বলতে, শুরু থেকেই দিশাহারা ছিল পিএসজি। ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকে পিএসজিকে তাড়া করে বেড়িয়েছেন চেলসির খেলোয়াড়েরা। আক্রমণভাগ দূরে থাক, মাঝমাঠে, এমনকি ডিফেন্সেও শান্তিতে থাকতে দেয়নি চেলসি। পুরোটা সময় পিএসজিকে কাউন্টার প্রেস করে গেছে তারা। পুরো টুর্নামেন্টে যে ট্যাকটিকসে বাকি প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করেছিল পিএসজি, সেই একই ট্যাকটিকস যখন খাটানো হলো তাদের বিপক্ষে, হকচকিয়ে গেলেন যেন লুইস এনরিকে।

আবহাওয়ার মতো মাঠও ছিল উত্তপ্ত। ম্যাচশেষে দুই দলের খেলোয়াড়েরা জড়িয়ে পড়েন হাতাহাতিতে। তবে একেবারেই যে নাটকীয়তা ছিল না, তা কিন্তু নয়। একপেশে ম্যাচের মূল নাটকীয়তা বলা যায় সেটিকেই।

পিএসজির আক্রমণের সূচনালগ্নই ছিল দুর্দান্ত প্রেসিং আর দুই উইং। মারেসকা শুরুতে নিষ্ক্রিয় করেছেন সেই দুটো জায়গা। চেলসির কাউন্টার প্রেসিংয়ের কাছে অসহায় ছিলেন দেম্বেলে-দুয়ে জুটি। উইং দিয়েও যে আক্রমণ করবেন, সে সুযোগ নেই। কারণ, রিস জেমস আর পেদ্রো নেতো ওপর থেকে নেমে এসে সাহায্য করেছেন ডিফেন্ডারদের। আর মাঝখানে তো দেয়াল হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলেন মোসেস কাইসাদো। সব মিলিয়ে পিএসজির আক্রমণের সব চ্যানেল বন্ধ করে দিয়েছিল চেলসি। আর সেটা করেই আক্রমণে এগিয়েছে লন্ডনের সিংহরা।

কোচেরা পর্যন্ত জড়িয়েছেন হাতাহাতিতে। ছবি: এক্স

ডিফেন্স থেকে দুর্দান্ত লং বল—আর সেটাই কাজে লাগিয়েছেন কোল পালমার। কনফারেন্স লিগের ফাইনালের মতো এই ফাইনালেও মুক্ত বিহঙ্গের মতো পালমারকে ছেড়ে দিয়েছিলেন মারেসকা। বড় ম্যাচে পালমারকে স্বাধীন করে দেওয়া যেন মারেসকার ট্যাকটিকসের অংশ। পুরো টুর্নামেন্টে পালমারকে ছকে ফেলার চেষ্টা করেছেন তিনি। ফলে দলগুলোও চিন্তা করছিল সেভাবে। কিন্তু ফাইনালে এসে পাগলা ঘোড়াকে ছেড়ে দিলেন রাজ্য উদ্ধার করতে। ফলে পুরো টুর্নামেন্টে ১ গোল পাওয়া পালমার ১০ মিনিটের মধ্যে তুলে নিলেন ২ গোল। একই জায়গা থেকে, একই রকম বাড়ানো লং বল। একই পায়ে, একইভাবে দোন্নারুম্মাকে বোকা বানালেন নিজের পায়ের জাদুতে। এ ছাড়া ভালোভাবে কোল পালমারের পারফরম্যান্সকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। আর ২ গোলের পরই তাঁর আইকনিক উদ্‌যাপন। একেবারে যেন শীতে জমে যাচ্ছেন!

৪৩ মিনিটে চেলসিকে ৩-০ গোলে এগিয়ে নিয়ে যান হোয়াও পেদ্রো। ক্লাব বিশ্বকাপের ঠিক আগে চেলসিতে যাওয়া এই তারকা নজর কেড়ে নিয়েছেন ইতিমধ্যে। সেমিতে সাবেক দলের বিপক্ষে ২ গোল, ফাইনালে ১ গোল। চেলসির স্ট্রাইকার সমস্যার সমাধানও যেন হোয়াও পেদ্রো।

ম্যাচ শেষে চেলসি খেলোয়াড়েরা যখন উদ্‌যাপনে ব্যস্ত, তখনই শুরু হলো হাতাহাতি। প্রথমে দোন্নারুম্মা আর এনজো ফার্নান্দেজ, এরপর সেখান থেকে একে একে সবাই।

প্রথমার্ধের পর আর ম্যাচে ফেরার সুযোগ পায়নি পিএসজি। চেলসিও ৩ গোলের লিড পেয়ে আর খুব একটা ঘাঁটাতে যায়নি। ফলে প্রথমার্ধের পর ম্যাচের হাইলাইট বলতে বাকি থাকে মার্কিন র‌্যাপার দোজা ক্যাট ও কলম্বিয়ান গায়ক জে বালভিনের পারফরম্যান্স। তবে একেবারেই যে নাটকীয়তা ছিল না, তা কিন্তু নয়। ৮৫ মিনিটে মেজাজ হারিয়ে চেলসি লেফটব্যাক মার্ক কুকুরেল্লার চুল টেনে ধরেন পিএসজির মিডফিল্ডার হোয়াও নেভেস। ভিএআর চেক করে সরাসরি লাল কার্ড দেন রেফারি। ততক্ষণে ম্যাচে পিএসজির সম্ভাবনা শেষ।

কুকুরেলার চুল টেনে ধরেন হোয়াও নেভেস। ছবি: ভিডিও থেকে

কিন্তু আসল চমক বাকি ছিল ম্যাচ শেষ হওয়ার পর। ম্যাচ শেষে চেলসি খেলোয়াড়েরা যখন উদ্‌যাপনে ব্যস্ত, তখনই শুরু হলো হাতাহাতি। প্রথমে দোন্নারুম্মা আর এনজো ফার্নান্দেজ, এরপর সেখান থেকে একে একে সবাই। পিএসজি কোচ লুইস এনরিকে খোদ ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছেন চেলসি স্ট্রাইকার হোয়াও পেদ্রোকে। বলা বাহুল্য, সবটাই ঘটেছে সেই বাঁশি বাজার পর।

তবে ম্যাচ শেষে পিএসজি যা–ই করুক না কেন, ম্যাচের সঙ্গে যতই মেজাজ হারাক না কেন, চেলসির কাছ থেকে শিরোপা তো আর উদ্ধার করা সম্ভব নয়। আগামী চার বছরের জন্য এই শিরোপার মালিক চেলসি। অথচ টুর্নামেন্টের শুরুতে কেউ হিসাবেই ধরেনি চেলসিকে। এমনকি ফাইনাল নিশ্চিত হওয়ার পরও কথা উঠেছে, সহজ পথ পাওয়ায় এত দূর এসেছে তারা। ঠিক সেই ক্লাবের হাতেই উঠেছে ক্লাব বিশ্বকাপের শিরোপা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাত থেকে শিরোপা বুঝে নিয়ে রিস জেমস সেটাই জানান দিলেন পুরো বিশ্বকে। ক্লাব ফুটবলের রং আগামী চার বছরের জন্য শুধুই নীল!