৯ দিয়ে জয় করলেন যাঁরা

প্রবাদ আছে—বৃক্ষের পরিচয় নামে নয়, ফল দিয়ে হয়। আর ফুটবল খেলোয়াড়দের পরিচয় হয় জার্সির নম্বরে। যুগ যুগ ধরে চলে আসা রীতি অনুসারে যেমন গোলকিপারের জার্সি নম্বরকে ১ বলেই ধরা হয়, তেমনি দলের সেরা খেলোয়াড়ের জার্সি হয় ১০। ৯ নম্বর জার্সি সাধারণত বরাদ্দ থাকে স্ট্রাইকারের জন্য। এর কারণ মূলত জার্সি নম্বর দেখে সহজে খেলোয়াড়ের পজিশন এবং খেলার ধরন সম্পর্কে আইডিয়া পাওয়া। কিন্তু কেউ কেউ নিজেকে এমন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন যে ফুটবলে ৯ নম্বর জার্সিধারীদের দেখলে এখন প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডাররা ৯ নম্বর বিপৎসংকেতের মতোই সতর্কবার্তা পায়। সেন্টার ফরোয়ার্ডদের জন্য ৯ নম্বর জার্সির খ্যাতি এত বেশি যে অনেক সময় জার্সি নম্বর যা–ই হোক, ‘নাম্বার নাইন’ বলতে ফুটবলে স্ট্রাইকারদেরই বোঝানো হয়! এই ৯ নম্বর জার্সি পরে কেউ কেউ করেছেন রেকর্ডসংখ্যক গোল, কেউ আবার করেছেন বিশ্বজয়। এই ‘৯’ নম্বর জার্সিকে যাঁরা বিখ্যাত করেছেন, তাঁদের এবার চিনে নেওয়া যাক।

রোনালদো নাজারিও

আধুনিক ফুটবলের শ্রেষ্ঠ স্ট্রাইকারের তকমা তর্কযোগ্যভাবে রোনালদোকেই দেওয়া হয়। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর আবির্ভাবের আগে রোনালদো বলতে একনামে সবাই চিনতেন ব্রাজিলের রোনালদোকেই। টাকমাথায় সেই অদ্ভুত হেয়ারস্টাইল আজও আইকনিক হয়ে আছে ফুটবল–বিশ্বে। খেলোয়াড় রোনালদোর পারফরম্যান্সও কিন্তু কম আইকনিক নয়! বার্সেলোনা, ইন্টার মিলান, রিয়াল মাদ্রিদ, এসি মিলানের মতো ইউরোপের বড় চার ক্লাবে খেলেছেন। স্পেন, ইতালির ঘরোয়া শিরোপা জিতলেও লোকের চোখে তিনি অনন্য ব্রাজিলের জার্সিতে অবিস্মরণীয় পারফর্ম করার কারণে। মাত্র ১৮ বছর বয়সে ব্রাজিলের বিশ্বকাপ দলে অভিষেক হয় তাঁর। বলার মতো কোনো ম্যাচ না খেললেও ’৯৪ বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য হয়ে যান। কিন্তু এরপর থেকেই যেন তাঁকে চিনতে শুরু করে ফুটবল–বিশ্ব।

রোনালদো নাজারিও

বার্সেলোনার হয়ে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোল করার রেকর্ড গড়ে তাক লাগিয়ে দেন সবাইকে। রেকর্ড ট্রান্সফার ফিতে ইন্টার মিলানে পাড়ি জমানোর পর, স্বাভাবিকভাবেই পছন্দের ৯ নম্বর জার্সি নিলেন। কিন্তু ইন্টার মিলানে ওই জার্সির আগের মালিক ইভান জামোরানো করলেন মজার এক কাণ্ড। জামোরানোর ৯-এর প্রতি এতই ভালোবাসা ছিল যে তিনি জার্সির পেছনে নম্বর লেখালেন ১+৮ অর্থাৎ যেটার যোগফল কিনা ৯-ই হয়!

ইন্টার মিলানে যোগ দিয়েও বার্সার দারুণ ফর্ম ধরে রেখেছিলেন রোনালদো, দুর্দান্ত ছুটতে থাকা সেই রোনালদোর ওপর ভর করেই ১৯৯৮ বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছে যায় ব্রাজিল। সবাই ভেবেছিলেন এবার বোধ হয় রোনালদোর জাদুতেই নিজেদের পঞ্চম বিশ্বকাপ জিততে চলেছে ব্রাজিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ফাইনালে নিষ্প্রভ থাকায় ভাগ্যের শিকে ছেঁড়েনি সেবার। শিকে ছিঁড়ল ২০০২ সালে। প্রায় একক নৈপুণ্যেই ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ জেতালেন তিনি। পুরো টুর্নামেন্টে ৮ গোল করে গোল্ডেন বুট জিতে নেন রোনালদো নাজারিও। পরে ১৫ গোল নিয়ে বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতাও হয়েছিলেন তিনি। যদিও জার্মান স্ট্রাইকার মিরোস্লাভ ক্লোসার কাছে হারাতে হয় সেই রেকর্ড।

ক্লাব থেকে জাতীয় দল সব জায়গায় ৯ নম্বর জার্সি পরতেন রোনালদো। কিন্তু তাঁকে কেবল গোল করা স্ট্রাইকার বলে সংজ্ঞায়িত করলে ভুল হবে। বিদ্যুতের গতি, নজরকাড়া ড্রিবলিং দিয়ে প্রতিপক্ষকে তছনছ করে দেওয়ার ক্ষমতা আর ক্লিনিক্যাল ফিনিশিং—রোনালদো ছিলেন ফুটবলের অন্যতম কমপ্লিট ফরোয়ার্ড। একবার যাঁরা তাঁর খেলা দেখেছেন, সহজে ভুলতে পারেননি। দুবার ব্যালন ডি’অর জিতে তাঁর সময়ের সেরা ফুটবলার তো হয়েছেনই, খেলা আর অর্জন দিয়ে নিজেকে নিয়েছেন অলটাইম গ্রেটদের ছোট তালিকায়ও।

গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা

রোনালদোর নাম বললে, স্মরণ করতে হয় ওই সময়ের আরেক তুখোড় ফরোয়ার্ড বাতিস্তুতাকেও। বিশ্বের অন্যতম সেরা হিসেবেই মানা হয় এই আর্জেন্টাইনকে। ডি-বক্স কিংবা ডি-বক্সের বাইরে, টোকা দিয়ে গোল করা কিংবা দূরপাল্লার শট জালে জড়ানো—সবকিছুতেই পটু ছিলেন বাতিস্তুতা। দ্রুতগতি, শক্তপোক্ত শরীর এবং দারুণ টেকনিকের সমন্বয়ে খেলা বাতিস্তুতার মুখোমুখি হতে চাইতেন না কোনো ডিফেন্ডারই। ফুটবল গ্রেট ম্যারাডোনা তো বলেছেন, তাঁর দেখা সেরা স্ট্রাইকার গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা।

গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা

আর্জেন্টিনার নিউওয়েল ওল্ড বয়েস, রিভারপ্লেট, বোকা জুনিয়র্সের মতো বড় ক্লাবে খেলে পাড়ি জমান ইউরোপে। ইতালির ফিওরেন্তিনা ক্লাবে নাম লিখিয়ে মাঝারি মানের দলটিকে বানান লিগের অন্যতম সেরা। এরপর এএস রোমায় নাম লিখিয়ে রোমানদের জেতান পরম আকাঙ্ক্ষার তৃতীয় লিগ শিরোপা। আর্জেন্টিনার জার্সিতেও সমান উজ্জ্বল তিনি। জাতীয় দলের জার্সিতে ৭৮ ম্যাচ খেলে ৫৬ গোল করার পাশাপাশি জিতেছেন কোপা আমেরিকা এবং ফিফা কনফেডারেশনস কাপ। ভক্তদের কাছে ‘বাতিগোল’ বলে পরিচিত বাতিস্তুতা খেলোয়াড়ি জীবনে আর্জেন্টিনা এবং ফিওরেন্তিনার হয়ে খেলেছেন ৯ নম্বর জার্সিতে।

ফিলিপ্পো ইনজাগি

৯ নম্বর জার্সির আরেকজন কিংবদতুল্য খেলোয়াড় ইতালির স্ট্রাইকার ফিলিপ্পো ইনজাগি। ডাকনাম ‘পিপ্পো’, ক্যারিয়ারের সেরা সময় কাটিয়েছেন এসি মিলানে। ক্যারিয়ারের শুরুতে আতালান্তা, জুভেন্তাসে খেললেও, ২০০১ সালে পাড়ি জমান মিলানের লাল-কালো দলে। ২০০২ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত ইউরোপের অন্যতম সেরা দল মিলানের মূল স্ট্রাইকার ছিলেন ইনজাগিই। ম্যাচের প্রায় পুরোটা সময়ই প্রতিপক্ষের বক্সে উপস্থিত থাকতেন। এর জন্য বহুবার অফসাইডেই পড়তে হতো তাঁকে। সেটা দেখে কিংবদন্তি কোচ স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন তো বলেছিলেনই, ‘ওর জন্মই হয়েছে অফসাইড লাইনে।’

ফিলিপ্পো ইনজাগি

সব সময় গোলের জন্য মুখিয়ে থাকা ইনজাগির মূল অস্ত্র ছিল নিখুঁত ফিনিশিং। তাই বেশির ভাগ সময় ‘পোচার’ রোলে খেলতে হয়েছে তাঁকে। এবং ওই দায়িত্বে যে সময়ের অন্যতম সেরা ছিলেন, ক্লাবের জার্সিতে ৪৬৬ ম্যাচে ১৯৭ গোলের পরিসংখ্যান সেই সাক্ষ্য দেয়। মিলানের হয়ে জিতেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগ, ফিফা ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপ, সিরি ‘আ’র শিরোপাসহ আরও অনেক ব্যক্তিগত পুরস্কার। ইতালির হয়ে জিতেছেন ২০০৬-এর বিশ্বকাপও।

অ্যালান শিয়েরার

ইংল্যান্ডের নিউ ক্যাসলে জন্ম নেওয়া শিয়েরারকে সন্দেহাতীতভাবে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের অন্যতম সেরা সেন্টার ফরোয়ার্ড বলে মানেন ভক্ত-পণ্ডিত সবাই। সাউদাম্পটনের হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করলেও পরে ব্ল্যাকবার্ন রোভার্সের হয়ে নাম লেখান ঘরের দল নিউ ক্যাসলে। সেখানে ৪০৫ ম্যাচে ২০৬ গোল করে রীতিমতো সুপারস্টার বনে যান তিনি। আর ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ২৬০ গোল করে অর্জন করেন লিগের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতার খেতাব।

অ্যালান শিয়েরার

বলিষ্ঠ শারীরিক গড়ন, উচ্চতা, হেড দেওয়া এবং জোরালো শট নেওয়ার ক্ষমতা—ক্ল্যাসিক সেন্টার ফরোয়ার্ডের সব কটি বৈশিষ্ট্যই তাঁর মধ্যে ছিল। এ জন্য বেশির ভাগ সময় ৯ নম্বর জার্সিতে টার্গেট ম্যান হিসেবে খেলতে হয়েছে তাঁকে। গোল করে ও করিয়ে সেখানে নিজের সামর্থ্যের ছাপ রেখেছেন ভালোভাবেই। গোল করতে পটু অ্যালেন শিয়েরার তাঁর খেলোয়াড়ি জীবনে মাত্র একটি লিগ শিরোপা জিতলেও তিন-তিনবার জিতেছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের গোল্ডেন বুটের খেতাব।

আলফ্রেডো ডি স্টেফানো

৯ নম্বর জার্সিকে স্ট্রাইকারের জার্সি হিসেবে সিলছাপ্পর মারারও বহু আগে এটি পরতেন ইতিহাসের আরেক গ্রেট আলফ্রেডো ডি স্টেফানো। ষাটের দশকে রিয়াল মাদ্রিদের ইউরোপে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারে যিনি সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তিনি আলফ্রেডো ডি স্টেফানো। আর্জেন্টিনায় জন্ম নিলেও পরে স্পেনের নাগরিকত্ব নিয়ে খেলেছেন স্পেনের হয়েও। কিন্তু তাঁর কীর্তির সবচেয়ে স্বর্ণালি অধ্যায় ওই রিয়াল মাদ্রিদেই। ১৯৫৩ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত মাদ্রিদের হয়ে ৩৯৬ ম্যাচ খেলে গোল করেছেন ৩০৮টা। মাদ্রিদকে জিতিয়েছেন পাঁচ-পাঁচটি চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা। নিজে জিতেছেন দুটি ব্যালন ডি’অর। মাদ্রিদের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করার অন্যতম পুরোধা ডি স্টেফানোকে সম্মান জানিয়ে তাই নিজেদের ট্রেনিং গ্রাউন্ডের নাম রেখেছে আলফ্রেডো ডি স্টেফানো স্টেডিয়াম।

আলফ্রেডো ডি স্টেফানো

সাবেক খেলোয়াড়দের বাদ দিলেও বর্তমানে খেলে চলা ফুটবলারদের মধ্যেও কিন্তু ৯ নম্বর জার্সি পরা গ্রেটদের অভাব নেই! রিয়াল মাদ্রিদের করিম বেনজেমা যেমন এ তালিকায় উজ্জ্বল এক নাম। লস ব্লাংকোসদের সাদা জার্সিতে পাঁচটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জয় তাঁকে নিয়ে গেছে ডি স্টেফানো, মালদিনিদের মতো পাঁচবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা গ্রেটদের ছোট তালিকায়। ৬১১ ম্যাচে ৩২৭ গোল করা বেনজেমা খেলে চলেছেন এখনো। ৩৪ বছর বয়সে এসেও মাদ্রিদের মূল গোল স্কোরারের দায়িত্ব এবং নাম্বার নাইন জার্সির ভার তাঁর কাঁধেই।

নাম্বার নাইন জার্সির আরেক নক্ষত্র হিসেবে রয়েছেন লুইস সুয়ারেজ। সাবেক লিভারপুল ও বার্সেলোনা তারকা তাঁর গোল স্কোরিংয়ের ক্ষমতার জন্য গত দশকে ইউরোপের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার হিসেবে বিবেচ্য ছিলেন। মেসি-রোনালদোকে পেছনে ফেলে দুবার জিতেছেন ইউরোপের গোল্ডেন বুট, বার্সেলোনার হয়ে লিগ শিরোপা জেতার পাশাপাশি জিতেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগও। উরুগুয়ের ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই ফুটবলার বর্তমানে খেলছেন তাঁর শৈশবের ক্লাব উরুগুয়ের নাসিওনালে।

জেমস অ্যান্ডারসন

বেনজেমা-সুয়ারেজের নামের সঙ্গে বর্তমান সময়ে আরেকজন যে স্ট্রাইকারের নাম উচ্চারিত হয়, তিনি রবার্ট লেভানডফস্কি। ক্যারিয়ারের স্বর্ণসময় কাটিয়েছেন জার্মানির ক্লাব ডর্টমুন্ড ও বায়ার্ন মিউনিখে। ডি-বক্সের ভেতরে তাঁর গোল করার ক্ষমতার সঙ্গে তুলনা চলে স্নাইপারের। ৭৫৬ ম্যাচে ৫৫৩ গোলের পরিসংখ্যান এই তুলনাকে আরও প্রতিষ্ঠিত করে। জিতেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগসহ জার্মান লিগের ১০টি শিরোপা। বর্তমানে বার্সেলোনার হয়ে খেলছেন ৩৪ বছর বয়সী এই পোলিশ নাম্বার নাইন।

এ ছাড়া বর্তমান সময়ে ফুটবলে ৯ নম্বর জার্সি পরে মাতিয়ে চলেছেন জেমি ভার্ডি, লুকাকু, হলান্ডের মতো স্ট্রাইকাররা।

ফুটবল থেকে নজর সরিয়ে যদি ক্রিকেটে আনা যায়, তাহলেও দেখা যায় ৯ নম্বর জার্সি পরা খেলোয়াড়দের জয়জয়কার। শুরুতেই মনে আসে ক্রিকেটের বরপুত্র ব্রায়ান লারার কথা। ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোতে জন্ম নেওয়া লারা তাঁর সময়ের তো বটেই ইতিহাসেরও অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। শচীন টেন্ডুলকার তাঁর রেকর্ড ভাঙার আগে তিনিই ছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক। টেস্টে ৫২.৮৮ গড়ে ১১,৯৫৩ রান এবং ওয়ানডেতে ৪০.৪৮ গড়ে ১০,৪০৫ রান রয়েছে তাঁর নামের পাশে। সেই সঙ্গে ৫৩টি সেঞ্চুরিও আছে তাঁর ঝুলিতে। তাঁর করা ৪০০ রানের নটআউট ইনিংসটি এখনো টেস্ট ক্রিকেটের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস, কেউ ভাঙতে পারেনি। মূলত ওয়ান ডাউনে খেলা ব্রায়ান লারা ছিলেন বাঁহাতি স্টাইলিশ ব্যাটসম্যান। যেকোনো বোলারের বিপক্ষে অবলীলায় খেলতেন কাভার ড্রাইভ কিংবা স্কয়ার কাট। কখনো ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে ছক্কা মারতেন গ্যালারিতে। তাঁর খেলায় নান্দনিকতা এতটাই ছিল যে স্বয়ং রাহুল দ্রাবিড় বলেছিলেন, ‘কেবল লারার খেলা দেখতেও আমি পয়সা খরচ করতে রাজি।’ জাতীয় দলে এসেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্বর্ণযুগের একেবারে শেষের দিকে, তারপর প্রায় একাই টেনে নিয়ে গেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। জাতীয় দলের হয়ে তাঁর অর্জন কেবলই ২০০৪ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে তাঁর ক্যাপ্টেনসিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জেতা।

এই জার্সি পরে খেলেছেন আরেক ক্রিকেট গ্রেট মার্ক বাউচার। মাত্র ৫ ফুট ৬ ইঞ্চির ছোটখাটো গড়নের বাউচার ক্রিকেটের অন্যতম সেরা উইকেটরক্ষকদের একজন। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে খেলা এই ক্রিকেটারের ঝুলিতে আছে ৯৩৫টি ক্যাচ ধরার রেকর্ড এবং ৪৫টি স্টাম্পিংয়ের রেকর্ড। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ক্যাচ ও ডিসমিসালের রেকর্ড বাউচারের। কিন্তু দলের প্রয়োজনে নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যানও ছিলেন তিনি। টেস্টে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার রান এবং ওয়ানডেতে ৪,৬৮৬ রান করেছেন। ক্যারিয়ারে ৬টি আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি ও ৬১টি হাফ সেঞ্চুরি নির্ভরশীল ব্যাটসম্যান হিসেবে বাউচারকে বেশ ভালোভাবেই স্বীকৃতি দেয়।

ব্রায়ান লারা

ফুটবলের মতো ক্রিকেটে জার্সি আলাদা অর্থ বহন না করলেও, ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের নাম্বার নাইন জেমস অ্যান্ডারসনকে অ্যাখ্যা দেওয়াই যায় নিখুঁত লক্ষ্যভেদ করা স্ট্রাইকারদের সঙ্গে। ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যতম কিংবা কারও চোখে সর্বকালের সেরা ফাস্ট বোলার এ মুহূর্তে ইংল্যান্ডের ‘জিমি’ অ্যান্ডারসন। টেস্টে সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়া ফাস্ট বোলার এখন তিনি, ভেঙেছেন গ্রেট গ্লেন ম্যাকগ্রার রেকর্ড। সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার তালিকায় তাঁর ওপরে আছেন কেবল শেন ওয়ার্ন ও মুরালিধরন। ওয়ানডেতেও তাঁর ঝুলিতে রয়েছে ২৭৩ উইকেট, যেটা ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ।

ডান হাতের পেসার অ্যান্ডারসন বল সুইং করাতে পারেন দুই দিকেই। ইনসুইং, আউটসুইংয়ের সঙ্গে সঙ্গে পুরোনো বলে রিভার্স সুইংটাও ভালোই রপ্ত তাঁর। গুড লেংথে বল করতে পছন্দ করলেও শর্ট লেংথ ও ইয়র্কার—দুটোই তাঁর রিজার্ভে আছে। উইকেটে অ্যান্ডারসনের বলের মুভমেন্ট যেন রেনেসাঁর শিল্পীদের ব্রাশস্ট্রোকের মতোই নিখুঁত। ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেও ৪০ বছর বয়সে টেস্ট ক্রিকেটে এখনো নিয়মিত নিজের শিল্পকর্ম তৈরি করে চলেছেন অ্যান্ডারসন।